ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১লা আশ্বিন ১৪৩২


অস্ত্র কারিগরসহ ৯৬ অপরাধী দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ


২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:২৭

ছবি সংগৃহীত

আজ দুপুরে অস্ত্র কারিগরসহ ৯৬ অপরাধী দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়ার ৯৬ জলদস্যু, অস্ত্র কারিগর ও সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা ১৫৫টি দেশি অস্ত্র, ২৭৫ রাউন্ড কার্তুজ ও অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জামও জমা দিয়েছেন। জেলা পুলিশের আয়োজনে আত্মসমর্পণ করা প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।

শনিবার দুপুরে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠের অনুষ্ঠানে সকালে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয় সেফহোমে থাকা আত্মসমর্পণকারীদের। এরপর আত্মসমর্পণকারীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। অতীত জীবনের ভুল স্বীকার করে বক্তব্য রাখেন সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজদৌল্লাহ। অভিশপ্ত জীবন থেকে ফিরে মুক্ত জীবনের চিত্র তুলে ধরেন ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আত্মসমর্পণকারী জলদস্যু নুরুল আমিন।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন, খ্যাতনামা অস্ত্র কারিগর জাফর আলম, মহেশখালীর কালারমারছড়ার আলোচিত জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া, তার বাহিনীর সদস্য মানিক, আয়াতুল্লাহ, আব্দুস শুকুর, সিরিপ মিয়া, একরাম ও বশিরসহ অন্তত ১৫ জন। কালা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য আবুলু, সোনা মিয়া, জমির উদ্দীনসহ প্রায় ১৫ জন, নুনাছড়ির মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী, সেকেন্ড ইন কমান্ড বদাইয়াসহ ১৫ জন, ঝাপুয়ার সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজউদ্দৌল্লাহ, নলবিলার মুজিব বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান প্রকাশ শেখ মুজিব এবং কুতুবদিয়ার লেমশীখালীর কালু বাহিনীর প্রধান মো. কালু প্রকাশ গুরা কালুসহ তার বাহিনীর ১৫-২০ জন।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেছেন, ‘যারা অপরাধ জগত ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাচ্ছেন, সরকার তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। এটি আপনাদের জাত ভাইদের দেখে জেনে নিতে পারেন। যারা এখনো অপরাধে রয়েছেন, আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। এ্যাকশন শুরু হলে কারো রেহায় হবে না।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার প্রমুখ। এতে মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।

জলদস্যু ও অস্ত্র তৈরির কারিগরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষে আত্মসমর্পণের মধ্যস্থতা করেন আনন্দ টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো ইনচার্জ আকরাম হোসাইন।

পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের দীর্ঘদিন জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মাছ লুট, ঘের ডাকাতি, বংশ পরম্পরায় বিরোধ নিয়ে খুনোখুনি ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। এতে স্থানীয়রা থাকতো আতঙ্কে। আত্মসমর্পণকারীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের মামলা নিষ্পত্তি করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। সেখানে ৫ বাহিনীর ৩৭ জন আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় হয়েছে। তারা প্রতিজন এক লাখ টাকা করে সরকারি অনুদান পেয়ে এখন সবাই কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা ও অস্ত্রসহ টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। সেটিও এমএম আকরাম হোসাইন মধ্যস্থতা করেন।