ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২

নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ১৮ লাখ মানুষকে


১০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩৮

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার রাত ৮ থেকে মধ্য রাতের মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তাই উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা ১৮ লাখ মানুষকে শনিবার দিনের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবে সরকার।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি জেলায় ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর বঙ্গেপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে গত ৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। ৭ নভেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক থেকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছিল। এটি ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে ৭ নম্বর বিপৎ সংকেত দেয়া হয়। আজকে সকালে সেটাকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেয়া দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘূর্ণিঝড়টির সর্বশেষ অবস্থা দেখেছি মোংলা বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসছে। এর অভ্যন্তরীণ ঝড়ের গতিবেগ ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। এটা ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। সেই হিসেবে আমরা ধারণা করেছি রাত ৮টার থেকে মধ্য রাতের মধ্যে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করবে।’

ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি উত্তর দিকে এগোচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে এগোলে এটি পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগীয় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানবে। এখন জোয়ারের সময় তাই ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।’


‘এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গতকাল সারাদিন এক ঘণ্টা পর পর তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো শুনেছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আমরা যেন এসওডি (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি) অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ১৮ ঘণ্টা আগে সব উপকূলীয় জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে পারি’ বলেন এনামুর রহমান।

সেজন্য উপকূলীয় অঞ্চলের সকলের কাছে নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘গতকাল থেকেই লোকজন স্থানান্তর শুরু হয়েছে। আজকে সকাল পর্যন্ত ৩ লাখ লোককে স্থানান্তর করা হয়েছে। যে অঞ্চলগুলো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করছি, আমাদের টার্গেট ১৮ লাখ লোককে সরাতে হবে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড সবাই মিলে সমুদ্র থেকে নৌযান ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।’

শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি সব নিরাপদে সফলভাবে পৌঁছে দিতে পারব। তবে শনিবার দিনের মধ্যে আমরা সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসব।’

‘আমাদের প্রবণতা হল আঘাত হানার সময়ের আগ মুহূর্তে পর্যন্ত সবাই বাড়িতে থাকতে চায়। সেজন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি একটু বল প্রয়োগ করে হলেও তাদের নিয়ে আসার জন্য।’

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রেগুলো খুব কাছাকাছি, এক কিলোমিটারের মধ্যে সবাই।’

সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা- এই ৯টি জেলার মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘এছাড়া চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর জেলার লোকজনকেও আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।’

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার প্যাকেট করে প্রতি জেলায় শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এক একটি প্যাকেটে যে খাবার আছে একটি পরিবার সাতদিন পর্যন্ত খেতে পারবে। এছাড়া ২০০ টন করে চাল ও ১০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের সাথে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে প্রায় এক হাজার ৫৪৬টি মেটিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে। প্রচুর পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন তারা প্রস্তুত রেখেছে।’

এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে মাঠ থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে কতজন লোক আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে, কতটি আশ্রয় কেন্দ্রে তৈরি আছে। সেই অনুযায়ী আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় আমরা সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারব। উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তা শতভাগ দিতে পারব।’

‘আমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তিনি যেন বাংলাদেশের জনগণের উপর সহায় হন।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।