হুমকির মুখে এসকে সিনহা

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রকাশিত তার বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেসক্লাবে উন্মোচিত হয়। শনিবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেন সিনহা। কিন্তু নিজের লেখা বইয়ের কারণেই বিপাকে পড়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। এমনকি তার যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ও পড়ছে হুমকির মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিয়ম হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকলে, দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া বা পালিয়ে গেলে, জীবন আশঙ্কার মধ্যে থাকলে, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেই কেবল সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো রাজনৈতিকভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পক্ষে থাকলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান। কিন্ত এমন বিষয়ে সিনহার অনিয়ম দেখতে পায় ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়নীতিতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে ওই ব্যক্তির দেশের মার্কিন দূতাবাসে চিঠি পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। রিকল নোটিশে জানতে চাওয়া নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির দেশে অবস্থা কী, রাজনৈতিক কী হাল ইত্যাদি তথ্য। জানা গেছে, রিকল নোটিশের উত্তরে মার্কিন প্রশাসন জানতে পেরেছে বিচারপতি সিনহা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য তাঁকে বিবেচনা করা কঠিন। এছাড়া বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও জানতে পেরেছে মার্কিন প্রশাসন।
এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তির আশা ধীরে ধীরে নিরাশায় পরিণত হতে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় না পাওয়ার জন্য সিনহার বই বড় ভূমিকা রাখছে বলেই মানছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বইয়ের কিছু অংশের লেখায় সিনহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে বলেই মত তাঁদের। বইয়ের একটি স্থানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, তাঁর ব্রাদাররা ( অপর বিচারপতিরা) একই বেঞ্চে বসতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালের সেনাবাহিনী প্রধান মঈন ইউ. আহমেদ। কিন্তু তার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বড় কোনো প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। এমনকি তিনি একটি বইও তৎকালীন প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন তাঁর প্রকাশ করেনি। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েও কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে তার বই লেখার প্ররোচকদেরও পাশে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বই লেখার প্ররোচক হিসেবে দেখা হয় ড. কামাল হোসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের বাংলা ও ইংরেজি দুটি সংবাদপত্রের সম্পাদককে। কিন্তু এখনো প্রকাশ্যে তাদের কাউকেই সিনহার জন্য বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সিনহা ও তাঁর বইয়ের সমর্থনে এখনো দৃশ্যমান কিছুই করেননি তারা।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়াটা সহজ হচ্ছে না। প্রশ্নবিদ্ধ অতীত ও বর্তমানের সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মার্কিন রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আগে অনেক বিষয়ের সদুত্তর পেতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।
এমএ