শেষ হচ্ছে অপেক্ষা; আগামীকাল দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
শেষ হচ্ছে অপেক্ষা; আগামীকাল দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
শেষ হচ্ছে অপেক্ষা; অবশেষে আগামীকাল দেশে ফিরছেন বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজ জন্মভূমি, মাটির কাছে; মায়ের কাছে এই ফেরা। ব্যক্তিগত-পারিবারিক নিপীড়ন আর শোক পাশ কাটিয়ে তার এই দেশে ফেরাকে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনই বলছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বলছেন, দূর প্রবাসে থেকেও তরুণ মন আর উদ্যোমকে সঙ্গী করে সংগঠিত করেছেন দলকে। এবার সামনে থেকে সামলাবেন সব।
২০০৮ সালে তারেক রহমান যখন লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার যান, তখন তিনি বিপর্যস্ত। রিমান্ডে অকথ্য নির্যাতনে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ।
দেশের মাটিতে মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা সেই ২০০৮-এর ১১ সেপ্টেম্বর। বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই খালেদা জিয়া ছুটে যান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছেলে তারেককে দেখতে।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন অনেকটা নিজের বয়সের সমান। মাত্র ৬ বছর বয়সে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—পরিবারের অন্যতম ঘটনা। জিয়াউর রহমান যখন রণাঙ্গনে, ছোট ভাইকে নিয়ে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাবন্দী হতে হয় তাকেও। পিতা জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি, তখনও ঘরের কিশোর ছেলে তারেক।
নেতাকর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়া যখন বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে রাজপথে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে; বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তারেক রহমান তখন নানান চিন্তক ও দার্শনিকের মাঝে। সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, থমাস হবেস, জন লক, রুশো থেকে ভলতেয়ার কিংবা কার্ল মার্কস—বিশ্ব রাজনীতি আর মানুষের অধিকারের পাঠ থেকে নিজেকে ঋদ্ধ করছিলেন তিনি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েকবার গৃহবন্দীও হতে হয় তাকেও।
আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ১৯৮৮-তে। পিতৃভূমি বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে। ১৯৯১-এর নির্বাচনে যোগ দেন প্রচারণায়। ২০০১-এর নির্বাচন-পূর্ব সময়েই তৃণমূলের সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধানের লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা শুরু করেন তারেক রহমান। ২০০২-এ ধীরে ধীরে দলের নেতৃত্বে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হয়ে ২০০৫ থেকে ছুটে বেড়ান গ্রামেগঞ্জে, পথে-প্রান্তরে।
এরপর আসে আলোচিত ২০০৭। রিমান্ডে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেলেও ঘরে ফেরা হয়নি। হাসপাতাল থেকেই ১১ সেপ্টেম্বর চলে যেতে হয় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে।
২০০৯-এ দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন তারেক রহমান। রাজনৈতিক নানান উত্থান-পতন সঙ্গী করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। কর্মীরা বলছেন, উন্নত দেশে বসে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ নিয়ে ভেবেছেন। নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুনের শিকার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যেও ভর করেছেন সাহসে।
নেতাকর্মীদের দাবি, ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শেষ—পুরোটা সময় নেপথ্যের দারুণ কুশীলব ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কর্মীদের সংগঠিত ও উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে নিখুঁত কৌশলী ভূমিকা নেন। একদিকে সরকার পতনের আন্দোলনে তীক্ষ্ণ নজর, অন্যদিকে রাষ্ট্র মেরামতের সংস্কার ভাবনা। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সরকারের গুরুত্ব নিয়ে নির্বাচনের তাগিদও দিতে থাকেন তিনি।
অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা, শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। নিজেদের অনুপ্রাণিত মনে করছেন কর্মীরা। বলছেন, এটি জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমিকের অনন্য এক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
এই পলিমাটির সৌরভ গায়ে মেখে তারেক রহমান নামছেন এক কঠিন পরীক্ষায়। তার প্রত্যাবর্তনকে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন অনুসারীরা।
