ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২রা আশ্বিন ১৪৩২


ঢাকা সিটির ভোট ১ ফেব্রুয়ারি


১৯ জানুয়ারী ২০২০ ০৭:৩৮

নানা সমালোচনার পর অবশেষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তন করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক জরুরী বৈঠকে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষনার পর থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করা প্রার্থীরাও তারিখ পরিবর্তনের কথা বলেছিলো। ভোট পেছানোর কারনে এস.এস.সি পরীক্ষাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পেছালে সমস্যা হবে কিনা। তারা বলেছে কোন সমস্যা হবে না। সে অনুযায়ী, তারা তারিখও পরিবর্তন করেছে। তাই আমরাও তারিখ পরিবর্তনের নিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহন করা হবে।

এর আগে বিকেল ৪টায় জরুরী ঐ বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে চার কমিশনার ও ইসি সচিব ছাড়াও দুই রিটানিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছিলো ইসি। সরস্বতী পূজার কারণে ওই তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এমনকি গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক দল ও ঢাকার দুই সিটির প্রার্থীরাও ভোট পেছানোর দাবি তুলে। ভোট পেছানোর ক্ষেত্রে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই বলে শুক্রবার জানিয়ে দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে আমাদের কিংবা সরকারের কোন সমস্যা নেই। একই দিনে সিটি নির্বাচন এবং সরস্বতি পূজা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের সঙ্গে কথা বলে গ্রহণযোগ্য একটি তারিখ ঠিক করবে বলে প্রত্যাশা করছি।

নির্বাচনে আলোচনায় থাকা চার মেয়র প্রার্থীই ভোটের দিন পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আউয়াল তাদের প্রচারনায় দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। তারা বলেন, যদি ঐদিন ঈদ হতো, তাহলে কি ভোট হতো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, তাই ইসির উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা।

হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও জাতীয় হিন্দুজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-খছাত্রীদের একটি অংশ এ দাবিতে আমরন অনশনও করছিলো। তারা গেল ৩দিন যাবৎ রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ দাবিতে অনশন করছিলো।

ভোট পিছানোর দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছিলো। অবশ্য রিট খারিজ করে দিয়েছিলো হাইকোর্ট। তবে ঐ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছিলো। রোববার যার শুনানী হওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা হওয়ার কথা। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছিলো, তাদের তিথি অনুযায়ী ৩০ তারিখে সরস্বতী পূজা। এটি তাদের বৃহৎ উৎসব। রাজধানীর অনেক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার সিটি ভোটের কেন্দ্রও অনেক স্কুলে পড়েছে। ফলে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিলো।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

নতুনসময়/আইকে