ঢাকা রবিবার, ১১ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২

কারাগারের ভেতরে আসামিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ


২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৫৮

কারাগারের ভেতরে এক আসামিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

মুমূর্ষু অবস্থায় এ্যাভোকেট পলাশ কুমার রায় (৩৭) নামে ওই আসামিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীররের ৪৭ শতাংশ পুড়েগেছে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি নিজেই নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পলাশ কুমার রায় জানান, তিনি গত ১১ বছর যাবৎ ঢাকায় আইন পেশায় নিয়োজিত। ২০১৩ সালে তিনি রাজধানীর তেজগাঁওস্থ কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানিতে আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের কিছু দিন পরই ওই কোম্পানীর ডিএমপি রেজাউল করিম তাকে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড কাওরানবাজার শাখার একটি অর্থঋণ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি দেখেন কোহিনূর কেমিক্যালের সমস্ত কাগজপত্র ভুয়া।

এরপর নজরুল ইসলাম তাকে বেশ কিছু জমির জাল দলির তৈরি করতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ সময় কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানির কাছে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওনা আদায়ের জন্য ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারি কমিশনার সাত্যকি কবিরাজ ঝুলন দুই পক্ষকেই তার কার্যালয়ে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোহিনূর কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ উল্টো তার নামে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ এনে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি কারাগারে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। সেখানে গত ২৫ মার্চ এসবি পরিচয়ে ৩ জন লোক এসে তার ছবি তুলে নিয়ে যায়।

শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পুনরায় দুই জন লোক তার কাছে আসে এবং কারা হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডের টয়লেটের পাশে নিয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তাকে কারা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ভর্তি করে।

পলাশ কুমার অভিযোগ করেন, কোহিনুর কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানির মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান আসলাম বেগ জানান, তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কোম্পানির ৩১ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। সেই টাকা যাতে না দিতে সেজন্য নানা রকম নাটকীয়তা করে আসছে। এর আগেই তিনি আত্মগোপন করে গুমের অভিযোগ করেছেন।

এরপর র‌্যাব তাকে নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করে।

পঞ্চগড় জেলা কারাগারের জেলার মুশফিকুর রহমান জানান, গত ২৬ মার্চ পলাশ রায়কে কারাগারে আনা হয়। তার পায়ের সমস্যার কারণে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা রয়েছে। শুক্রবার তাকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিলো। সেখানে রোববার তার অর্থ আত্মসাত মামলার হাজিরা ছিলো। কিন্তু সকালে হঠাৎ টয়লেটের পাশে গিয়ে তিনি নিজের পরনে টাউজারে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, পলাশের শরীরের ৪৭ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

নতুনসময়/শাফি/আইকে