ঢাকা রবিবার, ১১ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২

ফেসবুকে চ্যাটিং থেকে হত্যার ষড়যন্ত্র ফাঁস দুই ভাইয়ের


২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:১৪

ঘটনার শিকার এফবিসিসিআইয়ের ট্যুরিজম বোর্ডের কো- চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম সুমন

ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে বড় ভাইকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে আপন দুই ভাই। ফেসবুকের চ্যাটিং থেকে এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার শিকার রজধানীর রামপুরার নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ও তরুন উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত আল কাদেরিয়া রেষ্টুরেন্টের মালিক ফিরোজ আলম সুমন।

ফিরোজ আলম সুমন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য ও ট্যুরিজম বিভাগের কো-চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির প্রথম যুগ্মমহাসচিব। পাশাপাশি মানবাধিকার কাজের স্বীকৃতস্বরুপ জাতিতিসংঘের ডিপ্লোমেটিক পাসপাপোর্ট হোল্ডার ও ইউএন গ্র্যান্ডপাস প্রাপ্ত।

অভিযোগ উঠেছে, তারই ছোট ভাই ইফতিখারুল আমিন প্রায় ১৪ মাস ধরে সুমনকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা চালায়। সর্বশেষ গত ৫ আগষ্টের ছাত্র জনতার গণঅভুথ্যানকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে প্রচার চালিয়ে ছাত্ররা যেন তার ওপর আক্রমন করে পিটিয়ে মেরে ফেলে সেই চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আসিফ নেওয়াজ নামের এক যুবকের ফেসবুকে হত্যার চ্যাটিং ফাঁস হয়ে যায়। এরপর সুমন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে সুমন প্রাণভয়ে একপ্রকার আত্নগোপন জীবন যাপন করছেন। সুমন রাজধানী বাড্ডা ও রামপুরা থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভালো করায় পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার দুই ছোট ভাই ইফাতখারুল আমিন ও হাসনাইন আমিনকেও প্রতিষ্ঠান দেখাশুনার দ্বায়িত্বে আনেন। তার দুই ভাইকে দ্বায়িত্বে আনার পর হটাৎ করেই দেখেন তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। দৈনন্দিন হিসাবে গরমিলসহ মাসে অন্তত ৮/১০ লাখ টাকার আর্থিক লসের দিকে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি খেয়াল করেন দৈনন্দিন নগদ টাকার বিক্রি থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনি গোপনে প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাশ কাউন্টারে আইপি ক্যামেরা বসান। এরপর খেয়াল করেন তার আপন দুই ভাই ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ বিক্রির টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ফিরোজ আলম সুমন তার ছোট ভাই হাসনাইন আমিনকে টাকা সরিয়ে নেয়ার সময় হাতে নাতে ধরে ফেললে ভাই শুরু হয় দ্বন্দ।

অভিযোগ জানা যায়, এরপর থেকে হাসনাইন আমিন ও ইফেতেখার আমিন দু’জন এক হয়ে হয়ে তাদের বড় ভাই ফিরোজ আলম সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এরই মাঝে গত আগষ্ট ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভ্যুথ্যানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেন তার ছোট ভাই ইফতিখারুল আমিন। আসিফ নেওয়াজ নামের এক ফেসবুক উদ্যোক্তাকে টাকার বিনিময়ে ফিরোজ আলম সুমনের কয়েকটি ছবি দিয়ে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক লিখে পোষ্ট দেয়। এ ঘটনার পর আলোড়ন সৃষ্টি হলে ছাত্ররা তার রেষ্টুরেন্টে যায়। পরে এ ঘটনাটি মিথ্যা প্রমানিত হলে তার পোষ্ট দাতা আসিফ নেওয়াজকে খুঁজে বের করে। পরে সেখানে আসিফ নেওয়াজের ফেসবুকে চ্যাটে সুমনকে নানাভাবে হত্যার চেষ্টার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এই পোষ্ট দেয়ার পর ছাত্র জনতা উত্তেজিত হয়ে সুমনের ওপর হামলা করে তাকে যেন মেরে ফেলে এমন চ্যাটও দেখা যায়। এছাড়াও গত প্রায় এক বছরের কিভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে সেই বিষয়গুলোও ফাঁস হয়। সুমনকে হত্যার পর তারা কিভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে সেই বিষয়গুলোও উঠে আসে।

ঘটনার শিকার ফিরোজ আলম সুমন বলেন, আমি আমার ভাইদের চেষ্টা করেছি ব্যবসা শিখাতে। কিন্তু তারা ব্যবসা থেকে টাকা নিয়ে নিজেরা নিজেরা সমৃদ্ধ হয়েছে। আমি তাদের বোঝাতে চেয়েছি কিন্তু তারা আমাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে চায়।

তিনি বলেন, আসিফ নামের ওই যুবককে টাকা দিয়ে ভাড়া করে আমার বিরুদ্ধে পোষ্ট দিতে বলেছে। তার ওই পোষ্টে উত্তেজিত হয়ে লোকজন আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। তখন তারা দ্বায়মুক্তি থাকবে। এমন ষড়যন্ত্র তারা করেছিল। এছাড়াও আমাকে অসংখ্যবার নানাভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয় সেটাও প্রমানিত হয়েছে। এসব বিষয়ে তিনি রামপুরা ও বাড্ডা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সেগুলোর তদন্তও হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও আরও একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়না জারি রয়েছে।

পোষ্ট দাতা আসিফ নেওয়াজ বলেন, ইফতিখারুল উদ্দেশ্য ছিল এই পোষ্টের মাধ্যমে লোকজন উত্তেজিত হয়ে সুমনের ওপর হামলা করবে। আমাকে সে বলেওনি সুমন তার ভাই হয়। এছড়াও সে প্রায় এক বছর ধরে সে আমাকেসহ আরও অনেককে ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি ইফতিখারুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। সিআইডি ও ডিবি সাইবার ক্রাইম ইউনিট বিষয়টি তদন্ত করছে।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সবগুলো অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইফতিখারুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি। এমনকি ম্যাসেজ পাঠিয়েও তিনি তার কোন উত্তর দেন নি।