মেরাদিয়ায় বাজার বসিয়ে চাঁদাবাজি করছে খালিদের সিন্ডিকেট

রাস্তা দখল বাজার বসিয়েছে চাঁদাবাজ চক্র। মেরাদিয়ায় টু স্টাফ কোয়ার্টার রোড এবং মেরাদিয়া থেকে বনশ্রীর লিঙ্ক রোডের রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে বাজার। যার কারণে রাস্তায় গাড়িতো ঠিকমত চলতে পারেনা পায়ে হেঁটেও মানুষের চলাচল দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিশালী সিন্ডিকেট হওয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেও কোন লাভ হয়না বলে অভিযোগ করেন। আর এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা আবু নাছের খালিদ। সম্প্রতি চাঁদাবাজির কারণে র্যাব তাকে গ্রেপ্তারও করেছিল। জামিনে এসে আবারও এ কাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতার কারণে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে রাস্তার মধ্যে বাজার বসিয়েছে। এই বাজারে অবৈধভাবে ১০০ থেকে ১২০টি দোকান বসিয়েছে চাঁদাবাজ চক্র। দৈনিক দোকানভেদে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা ওঠানো হয়, যা গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ লাখ টাকা আদায় করছে এই চক্রটি। এছাড়াও প্রতি বুধবার করে হাটের দিন চাঁদার পরিমান বেড়ে দুই থেকে আড়াই লাখে পৌঁছে।
জানা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেরাদিয়া বাজারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে থাকা ডিএসসিসির মালিকানাধীন ১ একর ১৪ শতক জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তুলেছিল স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই সময় এ জায়গা পুনরুদ্ধার করে তারকাঁটা ঘিরে নিজেদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় সংস্থাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদের জায়গার যেহেতু টিনের বেড়া দেয়া হয়েছে এ কারণে চক্রটি বনশ্রীর লিঙ্ক রোড ও রামপুরা টু স্টাফ কোয়ার্টার রাস্তার দু’পাশে বসিয়েছে বাজার। এই বাজারের মধ্যে মাছের ও শাকসবজির দোকান বসিয়েছে ৭০ থেকে ৮০টি। আর মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দোকান রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি। সবমিলিয়ে ১০০ এর অধিক বসানো হয়েয়েছ। এসব দোকান থেকে আকার অনুযায়ী প্রতি বুধ ও শুক্রবার ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানো হয়। এ ছাড়া সপ্তাহের বাকি অন্যদিনগুলো দোকানভেদে ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা নেয় চাঁদাবাজরা। এরই মধ্যে আকারভেদে মাছ দোকান থেকে ৫০০-৮০০ টাকা, দোকানের আকারভেদে শাকসবজির দোকান থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। মুরগির দোকান থেকে ওঠানো হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। খাসির মাংসের দোকান থেকে ১০০০ থেকে ১৫০০ ও গরুর মাংসের দোকান ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা ওঠায় এই চক্রটি।
চাঁদা তোলার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরগির দোকানি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এসব দোকান বসিয়েছেন। এসব লোক স্থানীয় কাউন্সিলরের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেন।
টাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুধ ও শুক্রবার আমার কাছ থেকে নেন ১৫০০ টাকা। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে দৈনিক ১২০০ টাকা নেন। শুধু নেতারা নন, পুলিশ নেয় দৈনিক ৫০ টাকা, আর প্রহরীরা নেয় ৩০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাছ দোকানি বলেন, আমার কাছ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা নেন। তবে বুধ ও শুক্রবার নেয় ৬০০ টাকা। কিছু কম দিলে তারা নিতে চান না। উল্টা ধমক দিয়ে দোকান আর না বসাতে হুমকি দেন তারা। কারা টাকা ওঠান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খালিদ হচ্ছে প্রধান। তার কয়েকজন সহযোগী রয়েছে । আর টাকা ওঠায় রুবেল, সজীব ও আলামীন। তবে এদের সঙ্গে আরো লোক আছে।
এদিকে রাস্তা দখল করে সংকুচিত করে ফেলায় কোন গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারেনা। এমনকি পথচারীরা ঠিকমত চলতে পারেনা। বিশেষ করে সকাল এবং বিকেলে দীর্ঘ জ্যামেরও সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।
তারা বলছেন, রামপুরা থানার ঠিক পেছনে, এছাড়াও একই রাস্তায় পিবিআই এবং ট্যুরিষ্ট পুলিশের অফিস কিছুদুর পরে খিলগাঁও থানা। পুলিশের আশ্রয়ে প্রশ্রয় ছাড়া কিভাবে রাস্তা দখল করে বাজার বসাতে পারে ??
তারা বলছেন, কোন ফাঁকা জায়গায় বসালে সেটা ঠিক আছে কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে সেই রাস্তা দখল করে এভাবে বাজার বসানো কতটা যুক্তিযুক্ত।
অভিযোগের বিষয়ে খালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, টাকা কি আমি একাই খাই, থানা পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদেরও দিতে হয়।
তিনি বলেন, ওপরের সবাইকে দিতে হয় তারা সবই জানে। আমি সবাইকে ম্যানেজ করেই বাজার বসিয়েছি। বনশ্রীর লোকজন এখানে বাজার করে।
এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি ফারুকুল আলম বলেন, পুলিশকে জানিয়ে চাঁদাবাজি করবে এটা হয় নাকি। আমি এখনো ব্যবস্থা নেব।
রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বাজার খিলগাঁও থানার মধ্যে। আমার করার কিছু নাই। এখান থেকে কেউ টাকাও দেয়না।
এদিকে চলতি বছরের গত ৭ এপ্রিল মেরাদিয়া বাজারে চাঁদাবাজির সময় খালিদসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা হলো কামরুল হোসেন (২১), জাকারিয়া ইসলাম ওরফে রুবেল (৩২), মো. সিদ্দিক (৪৬), রেজাউল করিম পাভেল (৩৫), জিয়াউল ইসলাম (৩৮), মকবুল হোসেন বাবু (৩৩), বাবুল (৫২), মো. খোকন (৪৩), ও জাকির হোসেন (৪০)। এই গ্রুপটিই বর্তমানে জামিনে বেরিয়ে চাঁদাবাজি করছে। গ্রুপের অন্য আরেক সদস্য হলো আলামিন।
মেরাদিয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, আমি অতি সম্প্রতি ওমরাহ পালন করে এসেছি। এখানে কারা চাঁদাবাজি করছে সে বিষয়ে আমি জানিনা। এটা ভালো বলতে পারবেন কাউন্সিলর। পরে কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।