ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


এক ডুবে ২ ঘন্টা পানিতে, অতঃপর...


২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:২৯

মৎস মানব বলে খ্যাত মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি দীর্ঘ সময় পানির নিচে অক্সিজেন না নিয়ে থাকতে পারেন। তার এ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে নওগাঁবাসীকে এক প্রকার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। 
 
নওগাঁর একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘একুশে পরিষদ’ এর ২৫ বছর পূর্তিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নওগাঁ শহরের গাঁজা সোসাইটি পুকুরে মৎস মানবের ডুব প্রদর্শন করা হয়।
 
পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষে তিনি একটানা দুই ঘন্টা অক্সিজেন ছাড়াই পানির নিচে এ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। 
 
তবে তিনি পানির নিচে বাঁশের একটি খুঁটিতে বাঁধা চেয়ারে এ দীর্ঘসময় বসেছিলেন। কিছু সময় পর পর হাত উঁচু করে এবং হাত তালি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। ডুবে থাকা অবস্থায় তাকে আগত অনেকেই টাকাসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সম্মানিত করেছে।তাকে ডাকা হলে পানির নীচ থেকে তিনি বুঝতে পেরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে করমর্দন করেন এবং তাকে উপহার হিসাবে টাকা দিলে তিনি টাকা নিচ্ছেন। আর পানির নীচে চেয়ারে বসেই তিনি আপেলসহ অন্যান্য খাবার গ্রহণ করছেন ও খাচ্ছিলেন।
 
ডুব প্রদর্শন দেখতে পুকুরের চারিধারে কয়েক হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুসহ নানা জনের আগমন ঘটে। এ উপলক্ষে সেখানে এক গ্রামীন মেলা বসে। 
 
দীর্ঘ সময় মিজানুর রহমান চৌধুরীর পানিতে ডুবে থাকায় আগতদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। এ নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলেন। অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া এতো সময় অক্সিজেন ছাড়া কেউ পানির নীচে থাকতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন কেউ। 
 
ডুব প্রদর্শন শেষে সাতার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সাঁতারুদের মাঝে এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান অতিথি হিসাবে পুরস্কার বিতরণ করেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। 
 
অন্যান্যদের মাঝে পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, পরিষদের উপদেষ্টা সাবেক এমপি ওহিদুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান, জেলা প্রেসক্লাবে সভাপতি কায়েস উদ্দীন, রফিকুদ্দৌলা রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল, ড্যাফোডিলস স্কুলের অধ্যক্ষ মাহবুব আলমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
 
মৎস্য মানব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘক্ষণ পানির নিচে ডুবে থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। আমার ডুবে থাকা দেখে মানুষ আনন্দ পায়। জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি। এখন জনগনের সেবা করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
জড়িত থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। 
 
সেই সাথে ‘গিনেস বুকে’ নাম লেখানো এবং এক ডুব দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
 
মিজানুর রহমান চৌধুরী চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার অতিশ্বর গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মোহাম্মদপুর এআর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০০০ সালের মে মাসে চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় কচুয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন পুকুরে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পানিতে ডুবে থাকায় তাকে মৎস মানব আখ্যায়িত করা হয়। 
 
তিনি চৌধুরী ফাউন্ডেশন আতিশ্বর কচুয়া, চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করলেও নানা দায়িত্ব পালন শেষে এখন তিনি কুমিল্লায় বসবাস করছেন।
 
একেএ