ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


সংসারে সচ্ছলতা আনতে নৌকার মাঝি শাপলা


২৮ জুলাই ২০১৯ ২৩:৫০

সংসারে সচ্ছলতা আনতে নৌকার মাঝি শাপলা

অভাবের সংসার। দিনমজুর বাবার আয়ে তিন সদস্যের সংসার চলে না। তাই পরিবারে একটু সাচ্ছন্দ আনার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি এবং আমার মা নৌকায় যাত্রি পারাপার করে কিছু বাড়তি অর্থ আয় করি। যা দিয়ে কিছুটা হলেও সংসারের অভাব পুরণ হয়। কথা গুলো বলছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার নাওভাঙ্গা গ্রামের কুদ্দুস শেখের মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী শাপলা। সে নাওভাঙ্গা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে অথবা ছুটির পর সে নবগঙ্গা নদীর নাওভাঙ্গা ঘাট থেকে নদীর ওপার গোয়াল বাথান ঘাটে নৌকা করে যাত্রি পারাপার করে। ১০ বছর বয়সী শাপলার পক্ষে নৌকার বৈঠা টেনে নৌকা এ ঘাট থেকে ওপারের ঘাটে নেওয়া কষ্টসাধ্য। যে কারণে তার বাবা নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত রশি বেঁধে দিয়েছেন। সেই রশি টেনে নৌকা এ ঘাট থেকে ওই ঘাটে নিয়ে যায় শাপলা।

পারিবারিক কজের অবসরে শাপলার মা মনোয়ারা খাতুনও তার এ কাজে সহযোগিতা করেন। মা মেয়ের এই কষ্টাজিত অর্থ দিয়েই শাপলার লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের অন্যান্য চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ হয়। তাদের তেমন কোন জমাজমি নেই। বাবার রোজগারেই তিন সদস্যর পরিবার কোন রকম চলে যাচ্ছে। গোয়াল বাথান ঘাটে গিয়ে দেখা যায় শাপলা কয়েকজন যাত্রি নিয়ে নাওভাঙ্গা ঘাট থেকে গোয়াল বাথান ঘাটে এসে নৌকা ভিড়ায়। এরপর এপার থেকে যাত্রি নিয়ে নাওভাঙ্গা ঘাটে গিয়ে শাপলা তার মায়ের কাছে নৌাকাটি দিয়ে বাড়িতে ফিরে যায়। এ ঘাট থেকে আবারো কয়েকজন যাত্রি নিয়ে শাপলার মা মনোয়ারা খাতুন গোয়াল বাথান ঘাটের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রশি টানতে থাকে।

সেখানেই কথা হয় মনোয়ারা খাতুনের সাথে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, অভাব অনাটানের সংসারে স্বামীর আয়ে আমাদের যাবতীয় খরচ চালাতে কষ্ট হয়। যে কারণে স্কুল ছুটির পর শাপলা এবং আমি এই খেয়া ঘাটে যাত্রি পারাপার করি। এর থেকে যে অর্থ আয় হয় তা দিয়ে সংসারের কিছুটা হলেও অভাব পুরণ হয়। আগে স্থানীয় গোয়াল বাথান বাজারে জমজমাট ভাবে দুই দিন হাট বসতো। তখন অনেক লোক এ ঘাট দিয়ে পারাপার হত। এখন আগের মত জমজমাট হাট বসেনা। হাটে আগের চেয়ে লোক কম আসে বলে নৌাকায় যাত্রিও কম পারাপার হয়। সাংসারিক কাজের অবসরে যেটুকু সময় পায় সেই অবসারে মা মেয়ে মিলে এই কাজ করি । তাতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টাকা আয় হয়। মনোয়ারা খাতুন জানান, তাদের সংসারে তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্বামী স্ত্রী এবং সন্তান শাপলাকে নিয়েই তাদের সংসার চলে যাচ্ছে কোন রকম।

তিনি আরো জানান, যেদিন স্বামী কোন কাজে যেতে না পারেন সেদিন তিনিও নৌকা করে যাত্রী পারাপারের কাজ করেন।