ঢাকা শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫, ২৯শে চৈত্র ১৪৩১


শেষটা সামলাবে কে?


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:৩৭

আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্দা উঠবে এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের। এতে অংশ নেবে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও হংকং। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিজেদের প্রমণ করতে প্রস্তুত দল গুলো।

এশিয়া কাপের শেষ তিন আসরের টাইগাদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পরার মতো। ঘরের মাঠে দু-বারই বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনাল পর্যন্ত। শিরোপার স্বাদ মিলেনি এখনো। এবার কি পারবে টাইগাররা? তা দেখার জন্য কোটি ক্রিকেট প্রেমী অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এশিয়াকাপে বরাবরের মত টাইগাদের সবচেয়ে বেশী দুশ্চিন্তায় পরতে হতে পারে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। কারণ এখন পর্যন্ত বিগত ৩-৪ বছর লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে বার বার ব্যার্থ হয়েছে।

আগে স্কোরবোর্ডে ২৫০ রান করেও স্বস্তিতে থাকতো দলগুলো কিন্তু এখন ৩৫০-৪০০ রান অনায়েসে তাড়া করে ফেলে যে কোন দল। এর মূল কারণ হিসাবে দেখা যায় লোয়ার অর্ডারের ব্যাসম্যানরা মাঠে নেমেই দ্রুত রান তুলে। কারণ টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট চালু হওয়ার পর ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানদের মানসিকতাতেও পরিবর্তণ এসেছে।

তবে টাইগার একাদশে এখনও কোন নির্ভরযোগ্য লোয়ার মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান নেই। হার্ড হিটার পরিচয় খ্যাত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ফর্মে নেই। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। যদি এশিয়া কাপের স্কোয়াডে সাব্বির জায়গা পেতেনও তাহলে প্রশ্ন আসতো সাব্বির কোথায় ব্যাট করবেন? কখনও তিন কখনও লোয়ার অর্ডার এই দুজন পজিশন নিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে নয়-ছয় খেলা হয়।

স্ট্রাইক রেটের বিচারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাব্বির রহমান দ্বিতীয় স্থানে আছেন। তার ওপরে আছেন সৌম্য সরকার। দু-জনের স্ট্রাইক রেটের মধ্যে পার্থক্য মাত্র তিনের। সাব্বিরের ৯৪ ছুই ছুই আর সৌম্যর ৯৬। সম্প্রতি ওয়ানডে ফরম্যাটে সাব্বির কবে ভালো খেলেছেন এই পজিশনে তাও হয়তো ক্রিকেট প্রেমিদের মনে নেই। লোয়ার অর্ডারে সাব্বিরের ফিফটির সংখ্যা মাত্র দুটি আর স্ট্রাইক রেট প্রায় ১০০।

যেখানে আশা করা হয় একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১২০-১৩০। একই পজিশনে ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া সাব্বিরের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১১৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। একই জায়গায় শ্রীলংকার থিসারা পেরেরার স্ট্রাইক রেট ১১৩। থিসারা এবং হার্দিকের স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় কেন শ্রীলংকা এবং ভারত স্লগ ওভারে বেশি রান তুলতে সফল। শুধু যে সাব্বিরই একমাত্র লোয়ার অর্ডারে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে থাকেন তা নয়। মেহেদি হাসান মিরাজও একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। যুব বিশ্বকাপ পর্যন্ত মিরাজের পরিচয় ছিল বোলারের পাশাপাশি একজন ব্যাটসম্যান।

এদিকে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর সেই মিরাজ এখন একজন বোলার। যিনি কিনা মোটামোটি ব্যাটিং করতে পারেন। আর এই পজিশনে তার স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬০। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কেন মিরাজ শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে পারেন না। কয়েক বছর পেছনে গেলে বাংলাদেশ দলের লোয়ার মিডেল অর্ডারের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন নাসির হোসেন। কিন্তু তার স্ট্রাইক রেটও ১০০র নীচে। এসব পরিসংখ্যান থেকেই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ এখনও কেন বাকি দলগুলো থেকে পিছিয়ে।

লোয়ার মিডেল অর্ডার বা হার্ড হিটারদের কথা রেখে এখন যদি বাংলাদেশ দলের তিন নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এই নীচের দিকে পরিসংখ্যান দেখা হয় তাহলে এদের কারও স্ট্রাইক রেট ১০০র কাছেও নেই। সাকিব আল হাসান বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে আছেন কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট মাত্র ৮১। এ তিন ব্যাটসম্যানকে অবশ্য স্ট্রাইক রেটের বিচারে পেছনে ফেলেছেন কাপ্তান মাশরাফি। যিনি ৯১ স্ট্রাইক রেটে লোয়ার অর্ডারে রান করে থাকেন।

মাঝে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) থেকে আরিফুল হককে খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। যিনি আসন্ন এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তাকে দিয়েই লোয়ার অর্ডারে স্লগারের ঘাটতি পুরণ করবে বাংলাদেশ। যার টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে স্ট্রাইক রেট ১২০র কাছাকাছি। আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে দ্রুত রান তুলে নিজের নামের পাশে আরেকটি পরিচয় যোগ করেছেন মোহাম্মাদ মিথুন। যিনি আসছে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তার স্ট্রাইক রেট ৬০র নীচে হলেও টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে তার স্ট্রাইক রেট ১১৬। হয়তো সম্প্রতি দ্রুত রান করতে পারার কারণে আরিফুলকে টোপকে লোয়ার অর্ডারের দায়িত্ব পড়তে পারে মিথুনের ওপর।

নতুন কোচ স্টিভ রোডস চাইছেন সৌম্য সরকারকে দিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করতে। যদিও সৌম্য সরকারকে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা দেয়া হয়নি। এক কথায় আসছে এশিয়া কাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে সবচেয়ে ভালো স্ট্রাইক রেট থাকা দুই ব্যাটসম্যান সাব্বির এবং সৌম্যের কারও জায়গা হয়নি। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তুলতে না পারার ব্যর্থতা বাংলাদেশকে বারবার ভগান্তিতে ফেলছে।

দুবাইতে এশিয়া কাপের আগে এখন নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছেন স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপের আগে এ সমস্যার সমাধান করতে না পাড়লে গ্রুপে থাকা শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের চেয়ে এক কদম পিছিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশ দলকে।

এসএ/ইম