এশিয়া কাপে টাইগারদের শক্তিশালী একাদশ

এশিয়া কাপের জন্য এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে দিন গণনা। চলতি মাসের ১৫ তারিখ বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে এবারের আসর শুরু হবে। মূলপর্বে অংশগ্রহণ করবে ছয় দল। এদের মধ্যে বাংলাদেশ শিরোপার অন্যতম দাবিদার। নিজেদের দেশের মাটিতে ২ রানের জন্য ২০১৪ সালে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল। সেই আক্ষেপটা এবার ঘুচবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে। ধরা দেবে কাঙ্খিত শিরোপা এমনটাই প্রত্যাশ্যা কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর। কিন্তু সেই চাওয়াতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আবহাওয়া এবং ইঞ্জুরি।
দল নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অনেক দিন মাথা ঘামাতে হয়েছে। প্রাথমিক দলে ছিলো ৩০ জনের সেখান থেকে চূড়ান্ত ১৫ জনের দল যাচ্ছে দুবাইয়ের মাটিতে। এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত এশিয়া কাপে অংশগ্রহণের আগেই ইঞ্জুরির চোখ রাঙ্গানো রোসে পড়ল বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত পড়েছে চোটের কবলে। মিরপুরে অনুশীলনে বাঁ-হাতের তর্জনিতে চোট পান এই ক্রিকেটার। আর এই চোটেই এশিয়াকাপ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই তরুণ ব্যাটসম্যানের। তার স্থানে দলে সুযোগ পেতে পারেন মমিনুন হল।
বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারেরই এই দুবাইয়ের মাটিতে খেলাত কোন অভিজ্ঞতা নেই। দুবাই এবং আবুধাবির আবহাওয়া যথেষ্টই গরম থাকবে এশিয়া কাপের সময়। আর এই গরমের মধ্যে ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলা কোন দলের পক্ষেই খুব একটা সহজ যে হবে না তা বলাই যায়। সুতরাং বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ হিসাবে টাইগারদের লড়তে হবে সেখানকার প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে।
বাংলাদেশ সর্বশেষ এই মাঠে খেলেছে ১৯৯৫ সালে। অর্থাৎ এবারের ঘোষিত বাংলাদেশ দলের কারো এই মাঠে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলার কোন অভিজ্ঞতা নেই।
বিসিবির জন্য এবারের দল নির্বাচন ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। অভিজ্ঞ এবং তরুণ্য এই দুই মিলিয়ে বিসিবি যে দলটি নির্বাচন করেছে সেটাকে সময় উপযোগী সেরা দল হিসেবে মেনে নিয়েছেন ক্রিকেট বিষেজ্ঞষরা। দল ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি কানাঘুষো যাকে নিয়ে তিনি মিথুন আলি।
মিথুন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করছেন গত দুই বছর ধরেই। তবে নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন গত বিপিএলে, রংপুর রাইডার্সের হয়ে মিডিল অর্ডারে দায়িত্ব নিয়ে খেলেছিলেন। কখনো পরিস্থিতি বুঝে ধরে খেলেছেন আবার কখনো বিগ শট নিয়েছেন। এমন পরিণত ব্যাটিং করেই জানুয়ারি মাসে ট্রাই-নেশনের দলে এসেছিলেন। তবে সেবার বিজয়কে সুযোগ দেয়া হয়েছিলো বলে ফাইনালে অপ্রত্যাশিত একটি সুযোগ পেয়েছিলেন হুট করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজয়, সৌম্য দুইজনই সুযোগ পেয়েছিলেন এবং কাজে লাগাতে পারেননি, আর কায়েস নেই বিবেচনায়, সুতরাং মিথুনের দলে আসাটা অবিশ্বাস্য কিছুনা, বরং মিথুন এই ডাকটা প্রত্যাশিত ছিল।
মিথুন দলে এসেছেন একাধিক কারণে, প্রথমত ৬ বা ৭ নাম্বারে দ্রুত রান তোলার জন্য। আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে মিথুনের ৮৭* আর ৭৩ রানের ইনিংস দেখে মিথুনকে লোয়ার অর্ডারে সাব্বিরের জায়গায় দলে চেয়েছেন খোদ হেড কোচ স্টিভ রোডস, যিনি নিজেও আয়ারল্যান্ডে ছিলেন। আবার অধিনায়ক মাশরাফি চেয়েছেন ব্যাক-আপ ওপেনার হিসেবে দলে রাখতে। মিথুনের সুবিধা হচ্ছে তিনি ওপেনার হলেও মিডিল অর্ডারে মানিয়ে নিয়েছেন।
একসময় লিটনকে নিয়ে এমন ফিসফিসানি হতো, এখন সেটা মিথুনকে নিয়ে হচ্ছে। কোচ এবং অধিনায়ক যেহেতু চেয়েছে মিথুনকে সুতরাং সময়ই কথা বলবে।
বিজয়ের বাদ পড়াটা সময়ের দাবি ছিলো। ৭ ম্যাচে ৮৮ রান করলে যা হবার তাই হয়েছে। একইভাবে লিটনের দলে আসাটা খুবই যৌক্তিক এবং সময়োচিত। তামিম-লিটন জুটির কাছ থেকে ভাল একটা শুরু হলে প্রতিপক্ষেল ঘাম ঝরতে দেরি হবে না।
নাজমুল হোসেন শান্ত যদি ছিটকে পড়ে তবে, তার স্থানে সুযোগ পাবে মমিনুল। আয়ারল্যান্ডে রান পেয়েছিলেন তিনি।
পঞ্চপান্ডব বিসিবির আটো চয়েজ ছিল আর তাদের সাথেই নতুনদের যুক্ত করা হয়েছে। বেলিং বিভাগে একজন জেনুইন ফিংগার স্পিনার হিসেবে মিরাজ আর বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে অপু দলে আছে। পেস বিভাগে অধিনায়ক মাশরাফি আর মুস্তাফিজ অটো চয়েজ। তারপর অভিজ্ঞতা বিচারে রুবেল হোসেন আসবে। আর সবচেয়ে বড়কথা উইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে এবং টি-২০ তে ডেথ ওভারে বোলিং করার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি দেখিয়েছেন রুবেল হোসেন। দল গঠনে বাদ থাকে একজন, আবু হায়দার রনি। উইন্ডিজ সফরের টি-২০ সিরিজে রনি যেভাবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন তারপর তাকে কিভাবে বাদ নেন নির্বাচকেরা। ক্যারিবিয়ান হার্ড হিটারদের শট খেলা থেকে বিরত রাখতে পেরেছিলেন তিনি, সুইং বলে পরাস্ত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। তাই রনির মূল দলে থাকাটাও যৌক্তিক।
অনেক ক্রিকেট বিষেজ্ঞরা মনে করছেন এবারের নির্বাচিত দলটি সময়য়ের সেরা ব্যালেন্সিং দল।
বাংলাদেশ দল
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত অথবা মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও আবু হায়দার রনি।
এমএ