শান্তর সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের দিন
মুমিনুল হক, লিটন দাস কিংবা মাহমুদুল হাসান জয় কী বড় কিছু হাতছাড়া করলেন? বড় রান করার এমন সূবর্ণ সুযোগ আবার কী তারা পাবেন? দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরীক্ষার মঞ্চে জাঁঝালো আক্রমণের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু আফগানিস্তানের বোলিং এতোটাই সাদামাটা হবে তা ভেবেছিল কেউ?
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের স্কোরবোর্ড দেখলে এমন কথাই বলবে যে কেউ। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে ৩৬২ রান তুলেছে। যা টেস্টে একদিনে বাংলাদেশের রেকর্ড রান। তাও দিনের খেলা ১১ ওভার কম হয়েছে। ৭৯ ওভারে ৪.৫৮ রান রেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। তাতে টেস্টের প্রথম দিন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
সেঞ্চুরি পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, ফিফটি এসেছে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে। রান পাননি মুমিনুল, লিটনরা। তারা নিশ্চিতভাবেই রান করার বড় সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। মুশফিকুর রহিম ৪১ ও মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছে। তাদের দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশের ইনিংস কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার।
সেঞ্চুরিয়ান শান্তর ইনিংসটি ছিল আজকের দিনে ব্যাটিংয়ের আসল চিত্র। দাপট দেখিয়ে, রান ফোয়ারা ছুটিয়ে, স্ট্রোকসের পসরা সাজিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পেয়েছেন তিন অঙ্কের দেখা। ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি আছে আরো দুটি। কিন্তু দেশের মাটিতে এটিই প্রথম। তাই উদযাপনে কিছুটা খ্যাপাটে ভাব ছিল।
স্পিনার আমির হামজার বল আলতো করে ব্যাট ছুঁইয়ে দৌড় দেন শান্ত। রান পূরণ করে ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটে যান। লাফিয়ে উঠে, ব্যাটে চুমু এঁকে ছড়িয়ে দেন ভালোবাসা। সম্প্রতি ব্যাট হাতে বেশ ধারাবাহিক শান্ত। কিছুদিন আগেই চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দারুণ শতকের দেখা পান। এবার ঘরের মাঠে মিলল টেস্ট শতক। এ সেঞ্চুরিটা তার বেশ আরাধ্য। কেননা ২৫ টেস্ট ইনিংস পর তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারের দেখা পেয়েছেন।
সেঞ্চুরি পেতে তার একটু বেগ পেতে হয়নি। কেননা উইকেটে শুরুর সুবিধা নেওয়ার পর আফগান বোলাররা ছিলেন একেবারেই নির্বিষ। নিয়মিত আলগা বল করেছেন। প্রায় প্রতি ওভারেই একাধিক বাউন্ডারির বল করেছেন। শান্তর সঙ্গে ২১২ রানের জুটি গড়ার পথে মাহমুদুল হাসান জয়ও সেসব বল কাজে লাগিয়ে পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। জয় অবশ্য থেমেছেন সেঞ্চুরির অনেক আগেই।
পার্ট টাইম বোলার রহমত শাহর বল কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ৭৬ রানে। ১৩৭ বলে ৯ চারে সাজান সেই ইনিংস। অন্যদিকে সেঞ্চুরির পরও দু্যতি ছড়িয়ে যান শান্ত। মনে হচ্ছিল সাদামাটা বোলিংয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপ দেবেন। কিন্তু নিজের ভুলে মনোযোগ হারিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। ২৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৭৫ বল খেলে ১৪৬ রানে থামে তার ইনিংস। ১৪৩ রানে মাসুদের বল স্টাম্পে টেনে আনলেও তিনি বেঁচে যান 'নো' বল হওয়ায়। কিন্তু আর ৩ রান পরই আবারও আত্মঘাতী শটে বিলিয়ে দেন উইকেট।
এর আগে সকালে দিনের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন জাকির হাসান। অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদের সুইং ডেলিভারী থেকে ব্যাট সরাতে পারেননি জাকির। শুরুর ওই ধাক্কা সামলে শান্ত ও জয় ২১২ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়ে যান।
কিন্তু এই জুটি ভাঙার পর আফগানরা চেপে ধরে বাংলাদেশকে। শেষ বিকেলে তারা তুলে নেয় ৪ উইকেট। জয়ের পর মুমিনুল আউট হন পেসার নিজাত মাসুদের বলে। উইকেটের পেছনে মুমিনুল ক্যাচ দেন মাত্র ১৫ রানে। এরপর ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন শান্ত। দ্বাদশ অধিনায়ক হিসেবে লিটনের পথ চলা শুরু হয়েছে আজ থেকে। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের প্রথম ইনিংস রাঙাতে পারেননি। রিষ্ট স্পিনার জাহির খানের বলে স্লিপে ইব্রাহিম জার্দানের হাতে ক্যাচ দেন ৯ রানে। ২১৮ থেকে ২৯০ রানে যেতে বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট।
সেখান থেকে মুশফিক ও মিরাজ দলের হাল ধরেন। দুজনের ১৫.৫ ওভারের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ বিকেল কোনো বিপদে পড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। এ সময়ে ৭২ রান যোগ করেন তারা। মুশফিক ৪১ ও মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত আছেন। এই দুজনের ব্যাটেই বড় কিছুর স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ।
নিয়মিত লাইন ও লেন্থ হারানোর পাশাপাশি আফগানিস্তানের বোলাররা প্রচুর অতিরিক্ত রান দিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রথম দিনই অতিরিক্ত রান এসেছে ৩১। যেখানে নো বলআই আছে ১৫টি! বিস্ময়কর নয়?