ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


পারফর্ম নয়, ইমপ্যাক্ট চাই : শ্রীরাম


১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:৫২

দল ঘোষণার পরই যেন আসল ঝাঁকুনিটা এল, সেই ঝাঁকুনির ঘোর যখন কেটে গেল, ততক্ষণে বিস্মিত হৃদয়ে বিমুগ্ধ কণ্ঠে সবাই এক বাক্যে মেনে নিল। বলতে বাধ্য হল ‘স্মরণকালের সেরা সংবাদ সম্মেলন ছিল!’ যদিও দ্বিমত আসতে পারে, তবে বাংলাদেশের কোচদের মাঝে যে সেরা; তা বলতে হবে নিঃসন্দেহে।

প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসেই যেন কাঁপিয়ে দিলেন। হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘শুধু দেখতেই নয়, রাজ করতে এসেছি।’ যদিও তা ভিন্ন সুরে। বললেন, ‘স্বপ্ন দেখানোর জন্য ক্রিকেট কোচ আনা হয় না বিদেশ থেকে। আনা হয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্যে।’ এমন কথা কারো মুখে শুনেছেন কখনো স্মরণকালে? অনেকেই তো বাবু হয়ে ঘোরাফেরা করেন, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে কয়জন বুঝেন!

যাইহোক, সংবাদ সম্মেলনে ফিরি। ভূমিকা নিয়ে সংশয় থাকলেও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। শ্রীধরণ শ্রীরাম কী করতে পারেন, দেখিয়ে দিয়েছেন দায়িত্ব বুঝে নিয়েই। মাথার খেলায় যে বেশ পারদর্শী তিনি, তার প্রমাণ রেখেছিলেন আগেই। ‘জিনিয়াস’ উপাধি জুটেছে অস্ট্রেলিয়া থাকতেই। কেন তিনি জিনিয়াস, উত্তর মিলেছে আজ। তাইতো সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার প্রায় ২৪ ঘণ্টা হলেও এখনো মুখে মুখে তারই বাণী।

মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে প্রশ্ন হবে, জানাই ছিলো। উত্তরটাও হয়তো প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এমন গোছানো উত্তর কয়জন দিতে পারে। মাহমুদউল্লাহকে শুরুতে বসালেন ধোনির সাথে। বাংলার ধোনি উপমা দিয়ে বাস্তবতা দেখালেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে। পরিপূর্ণ সম্মান আর শ্রদ্ধা দিয়ে, আবেগের জবাবটা দিলেন আবেগ দিয়েই। ভারতীয় বলে কথা, জানেন উপমহাদেশে আবেগ দিয়েই হয় ক্রিকেট খেলা।

শ্রীরাম বললেন, ‘আমাদের সুন্দর কোনো পরিকল্পনায় আগাতে হবে, যা অন্য দলগুলো ভালোভাবে করেছে। আর তা হলো প্রতিটি ক্রিকেটারের উত্তরাধিকার ঠিক করা। মাহমুদউল্লাহ যখন থাকবেন না, সেই শূন্যস্থানে কাউকে না কাউকে তো খেলাতে হবে। আর সেই কাজটি করার এখনই সেরা সময়। আমাদের উত্তরাধিকার পরিকল্পনা থাকা দরকার, এরপর কে আসবে।’

তার মতে, ‘মাহমুদউল্লাহর জায়গায় কে খেলবে, সেটি ভাবার এখনই সঠিক সময়। এখনই কেউ একজন দরকার। এখন যদি না খেলাই, তাহলে বিকল্প তৈরি হবে কিভাবে?’

মাহমুদউল্লাহকে না হয় সামলে নিলেন, কিন্তু নিজের দর্শন সম্পর্কে কি বলবেন? প্রশ্নটা উঠতে দেননি, উত্তরটা আগেই দিয়েছেন। শত শত ক্যামেরা, বুম আর আলোর ভিড়ে নির্জলা সত্য বলতে পিছপা হননি শ্রীরাম। বললেন, টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্স ‘ওভাররেটেড।’ প্রয়োজন ইমপ্যাক্ট। ইমপ্যাক্ট কি তাও ভেঙে ভেঙে খাইয়ে দিয়েছেন। ইমপ্যাক্ট আর ওভাররেটেড এর সংজ্ঞাও শিখিয়েছেন। বলেন,

‘এশিয়া কাপে রিয়াদ আউট হওয়ার পর মোসাদ্দেক যেভাবে হাসারাঙ্গার ওভারে চড়াও হয়ে ১২ রান নিয়ে নিল, সেটি হল ইমপ্যাক্ট। আমাদের এখন এমন খেলোয়াড় খুঁজতে হবে যারা ম্যাচে ইমপ্যাক্ট রাখবে। আমি যেটা খুঁজছি, সেটা হল ইমপ্যাক্ট। আমি এখন পারফরম্যান্স খুঁজছি না। বাংলাদেশ যেমন দল, তাতে সাত থেকে আটজন ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারলেও জিতে যাবে। তো ১৭ থেকে ১৮ বলে ২৫ থেকে ৩০ রান করতে পারলে সেটিই আমার জন্য ইমপ্যাক্ট।’

অতপর নাজমুল হাসান শান্তের থেকে যাওয়া আর মেহেদীর বাদ পড়ে যাওয়া নিয়েও যেভাবে যুক্তি উপস্থাপন করলেন, মেনে নিতে না চাইলেও আপনি মেনে নিতে পারেন। শান্তের ক্ষেত্রে ইমপ্যাক্টকেই প্রাধান্য দিলেন। যেমনটা আগেও দেশী-বিদেশী কোচ আর সতীর্থরাও দিয়েছেন। আর মেহেদীর বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে কন্ডিশনকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, মেহেদী যেকোনো দলেই সুযোগ পাওয়ার সামর্থ্য রাখেন। কথা বলেছেন, লিটন, সোহান, রাব্বিকে নিয়েও।

অতপর নিজের লক্ষ্যটা পরিষ্কার করলেন। বললেন, ‘এক্সটেনশনের কথা ভাবা কাজ করার সঠিক উপায় নয়। আমি বাংলাদেশের জন্য সেরা কাজটা করব হৃদয় ও আত্মা দিয়ে। সাথে শ্রীরাম যোগ করেন, জয় পরাজয় দিয়ে খেলার বিচার না করতে। বরং খেলার ধরন ও উন্নতিতে লক্ষ্য রাখতে। একটা পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রিকেট খেলতে।

যাইহোক, নিজের দূরদর্শিতা, জ্ঞানের প্রখরতা, বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিকেটার চেনার সক্ষমতা মুগ্ধ করেছে সবাইকে, বলছেন একবাক্যে। ফলে প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই সাংবাদিকদের কাছে উপাধি পেয়ে গেছেন ‘হাথুরুসিংহে লাইট’ হিসেবে।