ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


শ্রমিকদের বিক্ষোভ নিয়ে যা বললেন সাকিব


২২ এপ্রিল ২০২০ ২০:০০

যে যার অবস্থানে থেকে করোনো ভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই করছেন। মার্কিন মুল্লুকে বসে সে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। নিজের নামে ফাউন্ডেশন গড়ে ফান্ড তৈরী করে দেশের অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। এসব কাজে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যস্ত সময় কাটছে সাকিবের। এরই মাঝে একটি নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হতে হয় তাকে।

সাতক্ষীরায় তার এগ্রো ফার্মের শ্রমিকরা চার মাসের বেতন বকেয়া দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে।
তবে সমাধান করতেও সময় নেননি ফার্মের অন্যান্য অংশীদাররা। সাকিবের নির্দেশনাতেই চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সব বেতন পরিশোধ করে দেয়া হবে জানিয়েছেন ফার্মের অন্যতম মালিক ও ব্যবস্থাপক সাগির হোসেন পাভেল।

এ বিষয়ে মিডিয়াতে কিছু না বললেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

সেখানে সাকিব নানা ভাবে মিডিয়ার উপর দায় চাপিয়ে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্ঠা করছেন।
নিচে সাকিবের পোস্টটি তুলে ধরা হলো :

‘দেরিতে সাড়া দেয়ার কারণে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি সমস্ত তথ্য আর চিন্তাভাবনাগুলো একটু গুছিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম, যেন আপনাদের সবার কাছে সত্যটা তুলে ধরতে পারি। যদিও আমার নামটা ওই এগ্রো ফার্মের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু ব্যস্ত সূচির কারণে এটিও আমার অন্যান্য কোম্পানির মতোই পার্টনাররা পরিচালনা করেন।

আমি এগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখার বা ঘুরে দেখার সুযোগ খুব কমই পাই। আপনারা জানেন যে বছরের বড় একটা সময় আমি দেশের বাইরে থাকি। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে এবং এই পুরো সময়টায় আমি এগ্রো ফার্মের ব্যবসার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। মিডিয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের বিষয়টা আমি জেনেছি।আমার ব্যবসায়িক অংশীদাররা আমাকে জানায়নি যে, শেষ কয়েক মাসে আসলে কী হয়েছে?

কিন্তু তারা কিছু শ্রমিককে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও সব শ্রমিকের কাজ জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে গেছে। তবু ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এলো, বিক্ষোভ করলো। সম্ভবত নিচু মনমানসিকতার কিছু মানুষের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য।

যাই হোক, বিষয়টা জানার সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে পুরো বিষয়টা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি।তাদের বেতন আমার নিজের আয় থেকে পরিশোধ করে দেব। কোন কোম্পানি প্রদত্ত অর্থ বা আমার অংশীদারদের থেকে নিয়ে নয়। আসলে আমি মনে করি এটা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একটা বিষয় যা অভ্যন্তরীণই থাকাই উচিত ছিল।

আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি তাদেরকে মাস শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না দেখে। যেহেতু তারা নিজেরাই এই বিষয়ে রাজি হয়েছিল। আরও অনেকের মতোই আমিও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি, তাই অবাক হচ্ছি যে, মানুষ এটা কিভাবে ভাবল এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আমি বঞ্চিত করব, যাদেরকে গত ৩ বছর ধরে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসা হচ্ছে।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমি বুঝতে পারছি যে, এটা মিডিয়ার কোন একটা অংশের কাজ যারা ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখেনি। ভালো হতো যদি তারা সত্যটা খুঁজে দেখত, চটকদার হেডলাইন বানানোর দিকে মনযোগ না দিয়ে। যেটার কিছু অংশ মিথ্যা এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

আমি মনে করি, মিডিয়ার একটা শক্তিশালী ভূমিকা আছে সত্য যাচাই করার এবং সঠিক তথ্যের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার। তা না হলে হয়তো তারা আরও অনেককেই আমার মতো আঘাত করবে কোন কারণ ছাড়া। তারা পুরো বিষয়টায় ভালোভাবে নজর দিয়ে বাকি অংশীদারদের নামেও দায় আনতে পারত শুধুমাত্র আমার নামটা তুলে ধরার বদলে। আমি আশা করি, মিডিয়া এবং সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করার বেলায় আরও যত্নবান হবেন।

জাতি হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে মনযোগ দেয়ার এবং আমাদের উচিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং কঠোর হওয়া। আমার মনে হয় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।

সবাই নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।’