ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


মুশফিকের ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৪

বোঝাই যাচ্ছিলো, বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন মুশফিকুর রহীমের ডাবল সেঞ্চুরির। আইন্সলে দলুভুর অফস্টাম্পের বাইরের বলে স্কয়ার কাট করে মুশফিক পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে। তাকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্তটাও জানিয়ে দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক।

প্রায় আট ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ব্যাট করে ৩১৫ বল মোকাবেলা করে ২৮ চারের মাধ্যমে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার আগের দুইটি ডাবল সেঞ্চুরিই ছিলো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে। এবারই প্রথম পুরোপুরি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে দুইশ রানের গণ্ডি পেরোলেন মি. ডিপেন্ডেবল।

মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি, নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটে ৫৬০ রানের পাহাড়ে চড়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। যার সুবাদে লিড দাঁড়িয়েছে ২৯৫ রান। অর্থাৎ টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামানোর জন্য অন্তত ২৯৫ রান করতে হবে জিম্বাবুয়েকে।

মূলত জিম্বাবুয়েকে শেষ বিকেলের কয়েক ওভার ব্যাটিংয়ে নামানোর জন্যই এমন হুট করে ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৫৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন মুশফিক। সে ওভার শেষ হতেই উইকেটে থাকা দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও তাইজুলকে ডেকে নিয়েছেন মুমিনুল।

রোববার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুই ওপেনার সাইফ ও তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান ডানহাতি সাইফ। পরের ওভারে তামিমের ব্যাট থেকেও আসে দুই চার। মাত্র ৩ ওভারেই ১৮ রান করে ফেলে বাংলাদেশ।

কিন্তু চতুর্থ ওভারের শেষ বলে হালকা বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট এগিয়ে দেয়ার ভুল করে বসেন সাইফ। ফলে তার ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাভার হাতে। সমাপ্তি ঘটে সাইফের ১২ বলে ৮ রানের ইনিংসের।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আর বিপদ ঘটতে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তামিম ইকবাল। দুজন মিলে ৪ ওভার খেলে যোগ করেন ৭ রান। পরে দ্বিতীয় সেশনেও দারুণ ব্যাট করেন এ দুজন। পাল্লা দিয়েই নিজেদের রান বাড়াচ্ছিলেন শান্ত ও তামিম। মনে হচ্ছিল, দুজনই তুলে নেবেন ফিফটি।

কিন্তু দলীয় ৯৬ রানের মাথায় অফস্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন তামিম। সমাপ্তি ঘটে তার ৮৯ বলে ৪১ রানের ইনিংসের, একইসঙ্গে ভাঙে শান্তর সঙ্গে ১৫৯ বলে ৭৮ রানের জুটি।

তামিম না পারলেও বিরতির এক ওভার আগে ফিফটি তুলে নেন শান্ত। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করতে খেলেন ১০৮টি বল, হাঁকান ৬টি বাউন্ডারি। পরে বিরতির ঠিক আগের ওভারে মারেন আরও একটি বাউন্ডারি।

তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে নিয়ে শান্ত গড়েন ৭৬ রানের জুটি। কিন্তু ৫০তম ওভারে এসে বোকার মতো আউট হয়ে বসেন শান্ত। অভিষিক্ত তিশুমার বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৩৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে গড়া শান্তর ৭১ রানের ইনিংসটি থামে তাতেই।

তবে এরপর মুমিনুল আর মুশফিকুর রহীম দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি। দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে ২১.২ ওভারের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা। তৃতীয় দিনেও ব্যাট করেন প্রায় দেড় সেশন।

জিম্বাবুয়ের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল এই জুটি। মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহীমের ধৈর্যে কিছুতেই বাঁধ দিতে পারছিলেন না সফরকারি বোলাররা। ৬০.৪ ওভারে ২২২ রানের এই ম্যারাথন জুটিটি শেষতক ভাঙে মুমিনুলের আউটে।

এনলুভোকে তুলে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ হয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২৩৪ বল মোকাবেলায় তার ১৩২ রানের ঝকঝকে ইনিংসটি ছিল ১৪ বাউন্ডারিতে সাজানো।

বেশিদূর যেতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। ১৭ রান করে এনলুভোর দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। তবে মুশফিকের ধৈর্যে চিড় ধরাতে পারেননি জিম্বাবুয়ের বোলাররা। লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে লিডটা বড় করতে থাকেন তিনি।

দলীয় ৫৩২ রানের মাথায় খুবই দূর্ভাগ্যজনকভাবে কট বিহাইন্ডে পরিণত হন লিটন দাস। তবে তার আগে তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি। রেগিস চাকাভার অদ্ভুত এক ক্যাচে আউট হওয়ার আগে ৫৩ রান করেন তিনি। লিটনের বিদায়ে ভেঙে যায় ১১১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।

লিটন ফিরে গেলেও মুশফিক আরেকপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন। সপ্তম উইকেটে তাইজুল ইসলামের যোগ অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেন ২৮ রান। ইনিংস ঘোষণার ঠিক আগের ওভারে বাউন্ডারি হাকিয়েই মুশফিক তুলে নেন নিজের ডাবল সেঞ্চুরি। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২০৩ রান করে, তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান।