ঢাকা বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২


শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের


১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:১৩

ছবি সংগৃহীত

বিশ্বকাপজয়ী দল হিসাবে ইতিহাসের পাতায় উঠে গেল বাংলাদেশের নাম। আজ রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রীড়াক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা।

এদিন জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। ভালো সূচনার পর মাঝে পরপর উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা। সেখান থেকে আকবর আলী, ইমন ও রাকিবুলের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌঁছে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাষায় যুবারা।

এর আগে ৪১ ওভারে ৭ উইকেট ১৬৩ রান করার পর বাংলাদেশের মনে শঙ্কা জাগিয়ে নামে বৃষ্টি। এর আগে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫৪ বলে ১৫ রান। কাছেই সহজ জয়ের সুবাস। কিন্তু বৃষ্টির পর কী হয় ভয় ছিল সবার। খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের জন্য বৃষ্টি আইনে ৩০ বলে ৭ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ৭ বল খেলে জয়ের উৎসবে মাতে।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকবর আলী ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৪৭ রান করেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রাকিবুল। ভারতীয় স্পিনার বিশোনি নেন বাংলাদেশের ৪ উইকেট।

ভারতের দেওয়া ১৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। দলীয় ৫০ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড-উইকেটে কার্তিকের হাতে ক্যাচ হন তানজিদ। ওপেনিং জুটি ভাঙতেই বিপদে পড়ে যায় টাইগার যুবারা। পরের কয়েকজন ব্যাটসম্যান আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন।

সেমিফাইনাল ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল হাসান জয় ফিরে যান ব্যক্তিগত ৮ রানে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় রানের খাতায় খুলতে পারেননি। ১৫তম ওভারে এলবিডব্লিউ হন তিনি। দলীয় ৬৫ রানে স্ট্যাম্পিং হন শাহাদাৎ হোসেন। ১০ বল খেলে তার সংগ্রহ ১ রান।

পরপর কয়েকটি উইকেট হারানোর পর আশা ছিল পরের কেউ একজন হাল ধরবেন। কিন্তু আশা ভাঙে। শামীম হোসেনের ব্যাটিংয়ে সুনাম থাকলেও ১৮ বলে ৭ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। দলীয় ১০৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ে গেলে আকবর আলীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে মাঠ ছাড়া ইমন।

এই জুটি দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াই করে যান। ইমন খোঁড়া পা নিয়ে দেশের জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্বপ্নজয়ের পথে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ৩২তম ওভারে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে আকাশ সিংয়ের হাতে ক্যাচ হন তিনি। পরে আকবর আলী ও রাকিবুলের জুটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেফস্ট্রুমে এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করতে সক্ষম হন। ৮৮ রান করে আউট হন যশওয়াল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ করেন তিলক ভার্মা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ২টি, তানজিম হাসান সাকিব ২টি, অভিষেক দাস ৩টি ও রাকিবুল হাসান ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

 

ভারতের দলীয় ৯ রানে প্রথম আঘাতটি এনেছিলেন অভিষেক দাস। এরপর যশওয়াল ও তিলকের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভারত। ২৯তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব। পরে আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থিতু হওয়ার সুযোগ দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। একের পর এক উইকেট নিয়ে তাদের অলআউট করে দেয় আকবর আলীর দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ ইনিংস: ১৭৭ (৪৭.২ ওভার)
(যশওয়াল ৮৮, স্যাক্সেনা ২, তিলক ৩৮, গর্গ ৭, জুরেল ২২, ভির ০, অ্যাঙ্কোলেকার ৩, বিশোনি ২, মিশ্র ৩, কার্তিক ০, আকাশ ১*; শরিফুল ২/৩১, তানজিম ২/২৮, অভিষেক ৩/৪০, শামীম ০/৩৬, রাকিবুল ১/২৯, তৌহিদ ০/১২)।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ইনিংস: ১৭০/৭ (৪২.১ ওভার)
(ইমন ৪৭, তানজিদ ১৭, জয় ৮, তৌহিদ ০, শাহাদাৎ ১, আকবর ৪৩*, শামীম ৭, অভিষেক ৫, রাকিবুল ৯*; কার্তিক ০/৩৩, মিশ্র ২/২৫, আকাশ ০/৩৩, বিশোনি ৪/৩০, অ্যাঙ্কোলেকার ০/২২, যশওয়াল ১/১৫)।

ম্যান অব দ্য ফাইনাল: আকবর আলী (বাংলাদেশ)।

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: যশওয়াল (ভারত)