ঢাকা শনিবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৫, ৬ই বৈশাখ ১৪৩২


জয়টা ধরা দিলো লাল-সবুজের হাতে


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:২০

ছবি সংগৃহীত

শেষ সময়ে ম্যাচটা একবার হেলে যায় আফগানদের দিকে আরকেবার টাইগারদের দিকে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দুই দেশের দর্শকদের মধ্যেও বিরাজ করছিল চরম অস্থিরতা। তাদের মধ্যে তখন কি হবে, কারা জিতবে এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল। দুই দিকেই জয় উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু জয়টা শেষ পর্যন্ত লাল-সবুজের হাতেই ধরা দিয়েছে। এশিয়া কাপ সুপার ফোরের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তাদের বিপক্ষে তিন রানে জয় পেয়েছে। রোমাঞ্চ ছড়ানো এই জয়ের নায়ক মুস্তাফিজ।

শেষ ওভারে যখন জেতার জন্য ৮ রান দরকার আফগানিস্তানের, তখন মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়ককে আস্থার প্রতিদানও দিলেন ‘কাটার মাস্টার’। উইকেটও তুললেন, শেষ বলে ৪ রান প্রয়োজন ছিল আফগানদের। ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ শেনওয়ারির দিকে বল ছুঁড়ে দিলেন। কিন্তু কোন রান নিতে দিলেন না। বরং সামিউল্লাহর হাত থেকে ব্যাট ছুটে গেল। সেই সঙ্গে ম্যাচও হাত ফসকে গেল। আর তাতেই হারের সম্ভাবনার মুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতল। আফগানদের বিপক্ষে এ জয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ টিকেই থাকল না শুধু, ফাইনালে ওঠার পথও খুলে রাখল।

দুবাইতে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত ইতিমধ্যেই ফাইনালের টিকিট কেটে ফেলেছে। আর বাংলাদেশের কাছে হারে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তানও। টিকে থাকা বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যকার ২৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচটি তাই হয়ে উঠেছে এই এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালও। ফাইনাল ভাগ্য নির্ধারণী ওই ম্যাচও হবে এই আবুধাবিতেই।

দুবাইয়ের আবুধাবি শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করে আফগানিস্তানকে ২৫০ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। খেলতে নেমে আফগানিস্তান ৫০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান তুলতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ঝুলিতে জমা হয় একটি করে উইকেট।

আফাগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন হাসমতুল্লাহ শাহীদি। তার ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ শাহজাদ করেন ৫৩ রান। এ ছাড়া আসগর আফগান ৩৯, মোহাম্মদ নবী ৩৮ রান করেন। সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ২৩ ও গুলবাদিন নাইব ০ রানে অপরাজিত থাকেন।

টাইগারদের ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রান আসে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে। ইমরুল কায়েস ৭২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। এ দুজনের ১২৮ রানের জুটিতেই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া লিটন দাস ৪১ ও মুশফিকুর রহিম ৩৩ রান করেন।

শুরুর ধাক্কাটা মুশফিক-লিটনের ৬৩ রানের জুটিতে সুন্দর ভাবেই কাটিয়ে উঠছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রশিদ খানের এক ওভারেই সব চুরমার হয়ে যায়। লিটন দাস রশিদকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা দেন ইহসানুল্লাহর হাতে। ফিরে যাওয়ার আগে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান।

লিটন ফিরে যাওয়ার সাকিব এসেও দুই বলের বেশি খেলতে পারেননি। নিজের ভুলেই রানের খাতা খোলার আগে ফিরে যান সাজঘরে। সামিউল্লাহ সেনওয়ারির সরাসরি থ্রোতে সাকিব আউট হন। সাকিব আউট হওয়ার ছয় রানের পর দলীয় ৮৭ রানের মাথায় আবারও রান আউটের শিকার হয়ে ফিরে যান মুশফিক।

টাইগারদের ওপেনিং সমস্যা প্রকট রুপ ধারণ করেছে। দেশ থেকে তড়িগড়ি ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে নেওয়ার পর গুঞ্জন ছিল ওপেনিংয়ে পরিবর্তন নিয়েই নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট লিটন-শান্তর ওপর আস্থা রাখলেও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত।

আগের ম্যাচগুলোতে তিন নাম্বারে সাকিব আল হাসানকে নামতে দেখা গেলেও ব্যতিক্রম ঘটেছে আজ রোববার। শান্ত ফিরে যাওয়ার পর মাঠে আসেন মোহাম্মদ মিথুন। কিন্তু দুই বলের বেশি খেলতে পারেননি এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। দুই বলে এক রান নিয়ে মুজিবের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়েন মিথুন।

ওপেনিংয়ে টানা ব্যর্থ হওয়ার পরও লিটন-শান্তর ওপর আস্থা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ওপেনিংয়ে গত তিন ম্যাচে লিটনের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১৩ রান। অন্যদিকে এশিয়া কাপেই অভিষেক হওয়া নাজমুল হোসেন শান্তও ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাট হাতে।

আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন আফতাব আলম। রশিদ খান ও মুজিব নেন একটি করে উইকেট। সাকিব-মুশফিক ফিরে যান রান আউট হয়ে।


স্কোর: বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৪৯/৭, আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ২৪৬/৭,
ফল বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।

আরকেএইচ