ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ভারতের মাটিতে অধিনায়কত্বে অভিষেক আল্পনার


১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৫৭

ঘরোয়া পর্যায়ে কখনও কোন দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করেননি। অথচ জাতীয় যুব দলের হয়েই অধিনায়কত্বের অভিষেক হতে যাচ্ছে তার! এমনটা কি কখনও কল্পনা করেছিলেন আল্পনা? ‘যেদিন দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার নামটি ঘোষণা করা হয়, সেদিন দারুণ অবাক হয়েছিলাম। কেননা কখনও ভাবিইনি অধিনায়ক হবো। পরে অনেক খুশি হয়েছি।’

কথাগুলো যার, তিনি আল্পনা আক্তার। বাংলাদেশ জাতীয় যুব নারী হ্যান্ডবল দল তারই অধিনায়কত্বে আগামী ১৯ আগস্ট রাতে বিমানযোগে ভারতের জয়পুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেখানে তারা ২১-৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ‘এশিয়ান ওমেন্স ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নেবে। এই আসরটি এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং ইন্ডিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে।

জামালপুরের ইসলামপুরের মেয়ে আল্পনা বলেন, ‘দলে আমার ভ‚মিকা প্লে-মেকারের। লক্ষ্য থাকবে সতীর্থ ফরোয়ার্ডদের উদ্দেশ্যে গোল করার জন্য বল সঠিকভাবে পাস দেয়া। সতীর্থরা ভুল করলে তা শুধরে দেয়া, তাদের স্বান্তনা দেয়া ও উজ্জীবিত করার চেষ্টা করবো।’

আল্পনাকে অধিনায়ক করা প্রসঙ্গে কোচ তৌহিদুর বলেন, ‘প্লে-মেকার হওয়ার কারণে আল্পনা দলকে ভালমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সতীর্থদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক তার। তাদেরকে মোটিভেট করতে পারে। অভিজ্ঞতায়ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। জাতীয় সিনিয়র দলের হয়ে একাধিক আসরে খেলেছে। সবকিছু মিলিয়েই মনে হয়েছে জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হবার মতো সব গুণাবলীই আছে আল্পনার।’

স্কুলে যখন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, তখন থেকেই হ্যান্ডবল খেলা শুরু আল্পনার। কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত আন্তঃস্কুল হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং তার স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়। সেখানেই আল্পনার খেলা নজর কাড়ে আনসারের কোচ তৌাহিদুরের। তিনি আল্পনাকে আনসারে নিয়ে আসেন। সেটা ২০১৬ সাল। কোচকে কৃতজ্ঞতায় ভাসিয়েছেন আল্পনা, ‘আনসারে এবং জাতীয় দলে আমার কোচ একজনই তৌহিদ স্যার। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। জাতীয় দলে তিনিই আমাকে ক্যাপ্টেন বানিয়েছেন।’

ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিয় আসরে দুটি গ্রুপে অংশ নেবে ১০টি দেশ। বাংলাদেশ (অ-১৭) পড়েছে খুবই কঠিন এবং ‘এ’ গ্রুপে। এই গ্রুপে তাদের সঙ্গে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন (তারা আগের সাতটি আসরেই চ্যাম্পিয়ন) দক্ষিণ কোরিয়া, বর্তমান রানার্সআপ জাপান, উজবেকিস্তান এবং চাইনিজ তাইপে। ‘বি’ গ্রুপে আছে স্বাগতিক ভারত, গত আসরের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকারী চীন এবং কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়া।

বাংলাদেশের গ্রুপ ম্যাচগুলো হচ্ছে ২১, ২৩, ২৫ ও আগস্ট যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চাইনিজ তাইপে এবং উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে। এই আসরের সেরা দুটি দল ২০২০ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ওমেন ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পাবে।

ইসলামপুর জে জে কে গালর্স কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিষয় নিয়ে প্রথম বর্ষে পড়ুয়া আল্পনার আদর্শ হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ডালিয়া আক্তার, ‘ডালিয়া আপুর খেলার ধরণ সবার চেয়ে ভিন্ন। অনেক ভাল লাগে তার খেলা। তিনি সবসময়ই আমাদের ভুল ধরিয়ে দেন, নানা পরামর্শ দেন।’

উল্লেখ্য, এশিয়ান ওমেন্স ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ এর আগে সাতবার অনুষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ দল এই আসরে এবারই প্রথমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছে। গত ১৬ জুলাই থেকে দলটি অনুশীলন করছে। মহিলা লিগ, জাতীয় চাম্পিয়নশিপ এবং যুব গেমসে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে মোট ৭০ খেলোয়াড়কে বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন। পরে বিভিন্ন ধাপে ধাপে সেখান থেকে ৫৬ জনকে বাদ দিয়ে চূড়ান্ত স্কোয়াডে রাখা হয় ১৪ জনকে। দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। অনেকেই আবার সিনিয়র বা জাতীয় দলেও খেলেছেন। দলের ১৪ খেলোয়াড়ের ৬ জনই হচ্ছেন আনসার দলের।

তৌহিদুর বলেন, ‘আশা করি ভারতের জয়পুরে আমাদের মেয়েরা একেবারে খারাপ করবে না। যদিও আমরা পড়েছি খুবই শক্ত গ্রুপে। প্রতিটি দলই দারুণ শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আমাদের দলটি গঠিত হয়েছে অভিজ্ঞ ও নবীন খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে। আমরা এই আসরে অন্তত একটি ম্যাচ জিততে চাই। হারাতে চাই উজবেকিস্তানকে।’ তৌহিদুর আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দলের প্রতিটি পজিশনেই খেলোয়াড়রা মোটামুটি দক্ষ। এরা যে যার পজিশনে দেশের সেরা খেলোয়াড়। আগামী ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠেয় এসএ গেমসে যে জাতীয় নারী হ্যান্ডবল দলটি অংশ নেবে, আশা করছি এই যুব দল থেকেই ৬-৭ জন বা এর বেশি খেলোয়াড় সিনিয়র দলে সুযোগ পাবে। ওই দলে থাকার মতো পারফরম্যান্স তাদের আছে।’

এই চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষ্যে শনিবার বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের অফিস কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. জাফর উদ্দিন এবং হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুর।

বাংলাদেশ যুব নারী হ্যান্ডবল দল ॥ খেলোয়াড় : সুমাইয়া বানু, আসিয়া আক্তার, পান্না আক্তার বর্ষা, বেবি আক্তার, শারমিন আক্তার রূপা, খাদিজা খাতুন (সহ-অধিনায়ক), সুবর্ণা আক্তার স্বর্ণা, নাজনীন নাহার, মিষ্টি খাতুন, ফৌজিয়া রহমান তরু, সানজিদা আক্তার ঊর্মি, স্মৃতি আক্তার, আল্পনা আক্তার (অধিনায়ক), ইসরাত জাহান ইভা; কোচ : তৌহিদুর রহমান, ম্যানেজার : নুরুল হক বিশ্বাস, টিম লিডার : সৈয়দা তাসলিমা আক্তার, অফিসিয়াল : নুরুল ইসলাম, পর্যবেক্ষক : তাসনিম মাহমুদ।