ঢাকা শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫, ২৯শে চৈত্র ১৪৩১


এক অবহেলার নাম মিঠুন আলী


১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৭

মানুষ কখনই দু’টো মুখ ভুলতে পারে না। প্রথম মুখ যে বিপদের সময় মুখ ফিরিয়ে দেন আর দ্বিতীয় হল যে বিপদের সময় মুখ এগিয়ে দেয়। বাংলার ক্রিকেট ভক্তরাও দ্বিতীয় কারণে মিঠুন আলীর মুখ ভুলতে পারবে না। এশিয়া কাপের আসরে চরম বিপদে মুশফিকুর রহিমের সাথে ১৩২ রানের জুটি গড়ে ক্রিকেট ভক্তদের মনে স্থায়ী স্থান করে নেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

২০০৮ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলের সদস্য মনোনীত হন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে তিনি তার আদর্শ মনে করেন, যিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে সীমিত ওভারের খেলায় ১০৫ গড়ে ২৮৫ রান করেন। এ সাফল্যে ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের দরুণ তাকে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি-২০ প্রতিযোগিতায় দলের সদস্য মনোনীত করা হয়।

২০১০ সালের নভেম্বরের শেষদিকে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে ১৩-সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। চূড়ান্ত খেলায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জয়লাভ করে। এর ফলে বাংলাদেশ দল এশিয়ান গেমসে প্রথম স্বর্ণপদক লাভ করে।

অনেকেই বলেন নাসির-বিজয়রা অবহেলিত। কিন্তু প্রকৃত অবহেলিত অর্থে কেউ যদি থেকে থাকে তবে তা মোহাম্মাদ মিথুন আলী। কারণ ১০-১২ বছর ধরে লীগে পারফর্ম করেও যদি কেউ দলে সুযোগ না পায় বা এক্সপেরিমেন্টের মতন তাকে ইউজ করে তবে তাকে অবহেলিত বলাই বাহুল্য।

২০১২-১৩ সাল থেকেই মিথুন অনেকটা হাইলাইট। ঘরোয়া লীগ ও ‘এ’ টিমের কল্যাণে ক্রিকেট ভক্তরা নিয়মিত তার নামের সাথে পরিচিত। তখন তাকে রাকিবুল সাথে ওপেনিংয়ে আনা হত। ২০১৪ তে যখন তার টি-২০ ডেবু হলো তখন তাকে ১ ম্যাচে ডাক মারার কারণে পরের ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসালো। পরে ভারতের সাথে ডেবু ম্যাচে ভাল করেছিলো। বাংলাদেশ ওইদিন ৫৮ তে অলআউট হলেও সেই ম্যাচে মিথুন হাইয়েস্ট ২৬ রান করেছিলো। পরে উইন্ডিজ সিরিজে বাদ পড়লো। পরে ২ বছর দলে আসলেও তাকে গিনিপিগের মতন ইউজ করা হয় তাকে। আরব আমিরাতের সাথে ৪৭ করার পরও তাকে পরের ম্যাচে ৭ নম্বরে নামালো। যদিও ওইম্যাচে তিনি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি।

পরে ওয়ার্ল্ড কাপে একেক ম্যাচে একেক অর্ডারে নামানো হল তাকে। ২ ম্যাচ ৭ ডাউন, ১ ম্যাচ ওয়ান ডাউন আর ২ ম্যাচ ওপেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২২ বলে ২৩ ও করেছিলো এই সুপ্ত প্রতিভা। আবর বাদ পড়লেন। ২০১৮ তে অর্থাৎ এ বছরের শুরুতে এক ম্যাচে ১০ করার পর পরের উইন্ডিজ সিরিজেই বাদ পড়লো। এ দলে ভাল করার পরও ডাক পেলো না।

পরে এশিয়া কাপে বিজয়ের ব্যার্থতার সুবাদে দলে আসলো। তার দলে আসাতে অনেকেই নানা মন্তব্য করেছিল। কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সাথে ৬৮ বলে ৬৩ রান করে সকল অবহেলা আর এক্সপেরিমেন্টের জবাবটা দিলেন মিঠুন।

মিঠুন আলীর বড় ভাই সুজন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নতুনসময়কে জানান, মিঠুন নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সুযোগ পায়নি। এশিয়া কাপে দেশ ছাড়ার আগে মিঠুন বলেছিল, দলের প্রয়োজনে তিনি যে কোন স্থানে ব্যাট করতে প্রস্তুত। শ্রীলঙ্কার সাথে মিঠুন দলের আস্থার প্রতিদান রেখেছে। সুমন আরো জানান, যতেষ্ট সুযোগ না পেয়ে মিঠুনের প্রতিভার অপচয় হয়েছে। ২০১২ সালেই জাতীয় দলের তার অভিষেক হবার কথা ছিল কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে তখন তাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে এবার আশা রাখছি দলে সুযোগ পেয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে নির্বাচকদের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং জাতীয় দলে নিজের স্থান পাকা করতে এবারের এশিয়া কাপ হবে তার সেরা মঞ্চ।

এমএ