ঢাকা শুক্রবার, ১১ই এপ্রিল ২০২৫, ২৯শে চৈত্র ১৪৩১


ঘটনাবহুল ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ


১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:৪৫

এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। তামিম-মুশফিক-মিঠুনদের গড়ে দেয়া ভিতকে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাংলাদেশের মাশরাফি, মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন ও সাকিব আল হাসান।

উদ্বোধনী ম্যাচের আগে থেকেই ইনজুরিতে জর্জরিত দল। সাকিব, তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত। দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে। মাঠে নামার পরেরটা যেন পুরোটাই স্বপ্ন। ইনজুরির ওপর ইনজুরিতে পড়ে তামিমের মাঠ ছাড়া, মালিঙ্গার একের পর তোপে দিশেহারা হয়ে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মুশফিক-মিঠুনের ১৩১ রানের অবিশ্বাস্য জুটি, মুশফিকের অসাধারণ এক সেঞ্চুরির পর শেষ মুহূর্তে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তামিমের মাঠে নামা এবং মুশফিকের ব্যাটিং তাণ্ডব-সত্যি অবিস্মরণীয়।

বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ২২ রানে মোস্তাফিজের বলে কুশল মেন্ডিস আউট হওয়ার পর থেকে বিপর্যয় শুরু লঙ্কানদের। ২৭ রান করা উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করে মাশরাফি একটা বার্তা দিয়ে দেন।

২৮ রানে ২, ৩২ রানে ৩, ৩৮ রানে ৪, ৬০ রানে ৫, ৬৩ রানে ৬ এবং ৬৯ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। ২৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক লঙ্কানদের উইকেট হারানো জয় ত্বরান্বিত হয় বাংলাদেশের।

শুরুতেই ঝড় তুলেছিলেন মোস্তাফিজ এবং মাশরাফি। তাদের সঙ্গে পরে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং রুবেল হোসেনরা। একটি আবার রানআউটও হয়েছে।

লঙ্কানদের কোনো ব্যাটম্যানকেই দাঁড়াতে দিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছিলেন উপুল থারাঙ্গা। মাশরাফির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। ১৬ রান করেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার উইকেট তুলে নেন রুবেল হোসেন। ১১ রান করেছিলেন কুশল পেরেরা। তার উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

থিসারা পেরেরা ছিলেন শেষের শঙ্কা। কিন্তু তাকে সরাসরি বোল্ড করে মোস্তাফিজ প্রমাণ করলেন তারাও অনেক দুর এগিয়ে গেছেন। তিনি করেন মাত্র ৬ রান। অন কোনো ব্যাটসম্যানও দাঁড়াতে পারেননি। দুই অংকের ঘর স্পর্শও করতে পারেননি। মাশরাফি, মোস্তাফিজ এবং মিরাজ নেন ২টি করে উইকেট। রুবেল নেন ১ উইকেট।

এর আগে, স্কোর বোর্ডে ২০০ পার হবে কি না তা নিয়েই অনেকে বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে ২৬১ রান। মুশফিক রহিমের ১৪৪ রানের তাণ্ডবে লঙ্কানদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬২ রান। এশিয়া কাপের এই ম্যাচকে ক্রিকেট ভক্তরা মনে রাখবে অনেক দিন। এমনকি আগামীতেও এই ম্যাচ অনুপ্রেরণা যোগাবে নতুন খেলোয়াড়দের।

বাংলাদেশ পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিল ক্রিকেটর খেলতে লাগে আত্মবিশ্বাস। তামিম ইকবালের নাম নতুনভাবে ইতিহাসের পাতায় উঠে যায়। ম্যাচ শেষে তার নামের পাশে ২ রানে অপরাজিত থাকাতেই তামিমের ইতিহাস থাকার কারণ। আর কখনই হয়ত তামিম উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান হয়ে মাত্র ২ রানে অপরাজিত থাকবেন না। আর এক হাতে ব্যাট করার সেই দৃষ্টি ক্রিকেট ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে চিরস্মরনীয় স্থান।

টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায়। ৩৭৯ দিনের পরে লাসিফ মালিঙ্গা আর্ন্তজাতিক ম্যাচে ফিরেই নিজের প্রথম ওভারে লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসানে তুলে নিয়ে জানান দেন আই এ্যাম ব্যাক। নিজের নামের পাশে কোন রান না করেই সাজ ঘরে ফেরে লিটন এবং সাকিব। শুরু ধাক্কায় বাংলাদেশ সিবিরে আবার পেরেক ঠুকে দেয় ১ ওভার ৫ বলে তামিম হাতে আঘাত পেয়ে সেচ্ছায় বিশ্রামে চলে যায় তামিম ইকবাল। শুরুতেই এলোমেলো বাংলাদেশকে সামলাতে সাত নম্বর স্থান থেকে মিঠুন আলীকে প্রমোশন দিয়ে তুলে আনা হয় উপরের দিকে।

মুশফিক রহিম ও মিঠুন আলী দেখে শুনে শান্ত ভাবে দলের স্কোর সচল রাখে। প্রথম ১০ ওভারে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে মাত্র ২৫ রান। প্রথম বাউন্ডারি আসে রহিমের ব্যাটে আর প্রথম ছক্কা আসে মিঠুনের ব্যাটে। মূলত এই শর্টের পরেই নিজেদের খোলশ ছেড়ে আসে বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ তম ওভারে বাংলাদেশ দলীয় ৫০ রানপূরণ করে। সেখান থেকে দলীয় শতরানের জুটি গড়ে শক্ত হাতে ভক্তদের উপহার দেন জোড়া অর্ধশত রানের জুটি। মোঃ মিঠুন তুলে নেন নিজের প্রথম অর্ধশত রান। ৫২ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় তিনি সাজান নিজের অর্ধশত। মুশফিক রহিম ও নিজের অর্ধশত তুলে নিতে ৬৭ বল খেলেন। ২২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১১৭ রান। এই জুটি যখন শ্রীলঙ্কার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়াচ্ছিল তখণ আবার বল হাতে আক্রমনে আসে মালিঙ্কা। নিজের পঞ্চম ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট হিসেবে মোঃ মিঠুন আলীকে তুলে নেন। এই উইকেট পতনে ১৩২ রানের জুটি ভাঙ্গে। মিঠুন আলী ৬৩ রান করে সাজ ঘরে ফেরেন। রহিমের সাথে জুটি বাধতে মাঠে নামেন রিয়াদ কিন্তু নিজের নামের সাথে ১ রান যোগ করেই আপনসের শিকার হয়ে সাজ ঘরে ফিরে যান তিনি। দলীয় স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৩৪ রান। ভক্তদের মনে আবার উকি দেয় আসঙ্কা। সেই আসঙ্কা সত্যি হয়ে মোছাদ্দেক হোসেন সৈকত আউট।

লাসিফ মালিঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হিসেবে হাজির করেন। সৈকতকে আউট করে তুলে নেন নিজের চতুর্থ উইকেট। ১৫ রানে যখন মিরাজ লাকমালের সিকার হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তখন স্কোর বোর্ডে ১৭৫ রান। অধিনায়ক মাশরাফিও রহিমকে সঙ্গ দিতে পারেনি। দুই চারে ১১ রান করে মাশরাফি যখন সাজ ঘরে ফেরে তখন স্কোর ১৯৫। অপর প্রান্তে রহিম তখন ৯০ রানে অপরাজিত। রুবেলের মধ্য দিয়ে নাটকের শুরু। একটি বলে রুবেলে এলবি হয়ে সাজ ঘরে ফিরতে যান। রহিম বাধা দিয়ে নেন রিভিউ। তৃতীয় আম্পিয়ার জানান এটা নট আউট। আর এ সুযোগেই রহিম তুলে নেন নিজের ষষ্ঠ শতক। ২২৯ রানে মোস্তাফিজুর রান আউট হলে সবাই মনে করেছিল এখানেই বাংলাদেশের স্কোর দাড়িয়ে যাবে। কিন্তু পুরো বিশ্বকে অবাক করে এক হাতে ব্যাট করতে মাঠে নামে তামিম ইকবাল। অন্য হাতে তখনও প্লাস্টার। আর এক হাতেই রহিমের সাথে তামিম গড়ে তোলে ৩২ রানের কার্যকারী ইনিংস। মুশফিক রহিম জ্বলে ওঠে বিষ্ফরনের মত। ১৪৯ বলে তুলে নেন ১৪৪ রানের চিরস্মরনীয় এর ইনিংস। লঙ্কানদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬২ রান।

লঙ্কানদের পক্ষে মালিঙ্গা ২৩ রানে ৪ উইকেট পায়। ডি সিলভা দুই উইকেটের সেই সাথে লাকমাল, আপনস, পেরেরা ১ টি করে উইকেট তুলতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ ৪৯.৩ বলে নিজেদের সব উইকেট হারায়।

ম্যাচ সেরা মুশফিক রহিম। পরবর্তী ম্যাচ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান।

এমএ