বাংলাদেশ ২৬১, মুশফিকের সঙ্গে তামিমের ‘একহাত’

মুশফিক
স্কোর বোর্ডে ২০০ পার হবে কি না তা নিয়েই অনেকে বাজি ধরেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে ২৬১ রান। মুশফিক রহিমের ১৪৪ রানের তাণ্ডবে লঙ্কানদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬২ রান। এশিয়া কাপের এই ম্যাচকে ক্রিকেট ভক্তরা মনে রাখবে অনেক দিন। এমনকি আগামীতেও এই ম্যাচ অনুপ্রেরণা যোগাবে নতুন খেলোয়াড়দের।
বাংলাদেশ পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিল ক্রিকেটর খেলতে লাগে আত্মবিশ্বাস। তামিম ইকবালের নাম নতুনভাবে ইতিহাসের পাতায় উঠে যায়। ম্যাচ শেষে তার নামের পাশে ২ রানে অপরাজিত থাকাতেই তামিমের ইতিহাস থাকার কারণ। আর কখনই হয়ত তামিম উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান হয়ে মাত্র ২ রানে অপরাজিত থাকবেন না। আর এক হাতে ব্যাট করার সেই দৃষ্টি ক্রিকেট ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে চিরস্মরনীয় স্থান।
টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায়। ৩৭৯ দিনের পরে লাসিফ মালিঙ্গা আর্ন্তজাতিক ম্যাচে ফিরেই নিজের প্রথম ওভারে লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসানে তুলে নিয়ে জানান দেন ‘আই এ্যাম ব্যাক’। নিজের নামের পাশে কোন রান না করেই সাজ ঘরে ফেরে লিটন এবং সাকিব। শুরু ধাক্কায় বাংলাদেশ সিবিরে আবার পেরেক ঠুকে দেয় ১ ওভার ৫ বলে তামিম হাতে আঘাত পেয়ে সেচ্ছায় বিশ্রামে চলে যায় তামিম ইকবাল। শুরুতেই এলোমেলো বাংলাদেশকে সামলাতে সাত নম্বর স্থান থেকে মিঠুন আলীকে প্রমোশন দিয়ে তুলে আনা হয় উপরের দিকে।
মুশফিক রহিম ও মিঠুন আলী দেখে শুনে শান্ত ভাবে দলের স্কোর সচল রাখে। প্রথম ১০ ওভারে স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে মাত্র ২৫ রান। প্রথম বাউন্ডারি আসে রহিমের ব্যাটে আর প্রথম ছক্কা আসে মিঠুনের ব্যাটে। মূলত এই শর্টের পরেই নিজেদের খোলশ ছেড়ে আসে বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ তম ওভারে বাংলাদেশ দলীয় ৫০ রানপূরণ করে। সেখান থেকে দলীয় শতরানের জুটি গড়ে শক্ত হাতে ভক্তদের উপহার দেন জোড়া অর্ধশত রানের জুটি। মোঃ মিঠুন তুলে নেন নিজের প্রথম অর্ধশত রান। ৫২ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় তিনি সাজান নিজের অর্ধশত। মুশফিক রহিম ও নিজের অর্ধশত তুলে নিতে ৬৭ বল খেলেন। ২২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১১৭ রান। এই জুটি যখন শ্রীলঙ্কার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়াচ্ছিল তখণ আবার বল হাতে আক্রমনে আসে মালিঙ্কা। নিজের পঞ্চম ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট হিসেবে মোঃ মিঠুন আলীকে তুলে নেন। এই উইকেট পতনে ১৩২ রানের জুটি ভাঙ্গে। মিঠুন আলী ৬৩ রান করে সাজ ঘরে ফেরেন। রহিমের সাথে জুটি বাধতে মাঠে নামেন রিয়াদ কিন্তু নিজের নামের সাথে ১ রান যোগ করেই আপনসের শিকার হয়ে সাজ ঘরে ফিরে যান তিনি। দলীয় স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৩৪ রান। ভক্তদের মনে আবার উকি দেয় আসঙ্কা। সেই আসঙ্কা সত্যি হয়ে মোছাদ্দেক হোসেন সৈকত আউট।
লাসিফ মালিঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হিসেবে হাজির করেন। সৈকতকে আউট করে তুলে নেন নিজের চতুর্থ উইকেট। ১৫ রানে যখন মিরাজ লাকমালের সিকার হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তখন স্কোর বোর্ডে ১৭৫ রান। অধিনায়ক মাশরাফিও রহিমকে সঙ্গ দিতে পারেনি। দুই চারে ১১ রান করে মাশরাফি যখন সাজ ঘরে ফেরে তখন স্কোর ১৯৫। অপর প্রান্তে রহিম তখন ৯০ রানে অপরাজিত। রুবেলের মধ্য দিয়ে নাটকের শুরু। একটি বলে রুবেলে এলবি হয়ে সাজ ঘরে ফিরতে যান। রহিম বাধা দিয়ে নেন রিভিউ। তৃতীয় আম্পিয়ার জানান এটা নট আউট। আর এ সুযোগেই রহিম তুলে নেন নিজের ষষ্ঠ শতক। ২২৯ রানে মোস্তাফিজুর রান আউট হলে সবাই মনে করেছিল এখানেই বাংলাদেশের স্কোর দাড়িয়ে যাবে। কিন্তু পুরো বিশ্বকে অবাক করে এক হাতে ব্যাট করতে মাঠে নামে তামিম ইকবাল। অন্য হাতে তখনও প্লাস্টার। আর এক হাতেই রহিমের সাথে তামিম গড়ে তোলে ৩২ রানের কার্যকারী ইনিংস। মুশফিক রহিম জ্বলে ওঠে বিষ্ফরনের মত। ১৪৯ বলে তুলে নেন ১৪৪ রানের চিরস্মরনীয় এর ইনিংস। লঙ্কানদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬২ রান।
লঙ্কানদের পক্ষে মালিঙ্গা ২৩ রানে ৪ উইকেট পায়। ডি সিলভা দুই উইকেটের সেই সাথে লাকমাল, আপনস, পেরেরা ১ টি করে উইকেট তুলতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ ৪৯.৩ বলে নিজেদের সব উইকেট হারায়।
আরআর/এমএ