ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ফেলে দিল ১৭শ কোটি টাকা!


১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮

কিলিয়ান এমবাপ্পে ফাইল ফটো

চেলসিতে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলেন এমবাপ্পে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। সে সময়ে তাকে না কিনে ফেরত পাঠিয়েছিল চেলসি কর্তৃপক্ষ। সে সময়ের গল্পই বলেছেন চেলসির একসময়ের স্কাউট ডেনিয়েল বোগা। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সিভি লিখতে বলা হয় তবে তিনি কী লিখবেন? নিজের সিভি ভারী করার মতো অনেক কিছুই করে ফেলেছেন এমবাপ্পে। নামের পাশে একটি বিশ্বকাপ, দুইটি ফ্রেঞ্চ লিগ শিরোপা, এমনকি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাও শেষ এমবাপ্পের। একজন খেলোয়াড়ের পুরো ক্যারিয়ারেই হয়তো এ পরিমাণ শিরোপা জেতা হয় না, ১৯ বছরেই প্রায় সব পেয়ে গেছেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড।

এমবাপ্পের এমন উত্থান দেখে হিংসা হতেই পারে চেলসির। নিজেদের বোকামির জন্য মাথা চাপড়াতেও পারে। একসময় চেলসিতে খেলার জন্য ট্রায়াল দিতে গিয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু তাকে চেলসি নেয়নি, কারণ রক্ষণকাজে নাকি অলস ছিলেন এই ফরোয়ার্ড।

মোনাকো থেকে গত বছর তাকে ধারে নিয়ে গিয়েছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই। এবার প্রায় ১৭শ কোটি টাকা (১৮০ মিলিয়ন ইউরো) দিয়ে পাকাপাকিভাবে প্যারিসে নিয়ে আনা হয়েছে এমবাপ্পেকে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন এমবাপ্পে। অবশ্য গত এক মৌসুমে যা করেছেন এমবাপ্পে, তাতে এই ১৮০ মিলিয়ন ইউরোকেও বড় দাও মারা বলে ভাবা হচ্ছে এখন। অথচ আজ পার্ক ডি প্রিন্সে নয়, তাঁর থাকার কথা ছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। সেই গল্প শোনালেন চেলসির সাবেক স্কাউট সার্জ ডেনিয়েল বোগা।

২০১২ সালের কথা। এমবাপ্পে তখন ১৩ বছরের কিশোর। সে সময় তাকে চোখে পড়ে বোগার। মাকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের রাস্তায় প্রথম পা পড়েছিল ছোট্ট এমবাপ্পের। বোগা দিয়েছেন সে বর্ণনা, ‘আমাকে এমবাপ্পের সঙ্গে প্রথম দেখা করিয়ে দেয় এক বন্ধু, নাইকিতে কাজ করত। সে বলেছিল, তুমি কি এমবাপ্পেকে দেখেছ? প্যারিসের ছোট্ট একটা ক্লাব বন্ডিতে খেলে। তোমার তাকে দেখা উচিত।’

‘ওর খেলা দেখার পর আমি সর্বপ্রথম যে কাজটা করি, সেটা হলো চেলসির যার সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলতাম, তাকে ফোন দিই। একে অন্তত একবার দেখ। তারা রাজি হয়, বলে তাকে লন্ডনে এনে একবার ট্রায়াল দিতে।’

এত ছোট বাচ্চাকে একা আনা যায় না, তাই সঙ্গে তার পরিবারকে নিয়ে আসেন বোগা। প্রথম ম্যাচে নেমেই সে চার্লটন দলকে ৭-০ গোলে হারিয়ে দেয়। চেলসি বোর্ড এমবাপ্পের ড্রিবলিং ও স্কিলে মুগ্ধ হলেও রক্ষণাত্মক দিক নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিল না। ইংল্যান্ডে একটু নিচে নেমে দলের রক্ষণে সাহায্য করাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। ফলে পরের সপ্তাহে আবার নতুন করে ট্রায়ালে ডাকা হয় এমবাপ্পেকে। এমবাপ্পের রক্ষণাত্মক কাজে উন্নতি এসেছে কি না, বা ইচ্ছে আছে কি না সেটাই দেখার ইচ্ছা ছিল তাদের।

চেলসি সে সুযোগ পায়নি। ছেলের প্রতিভা নিয়ে নিঃসন্দেহ এমবাপ্পের মা চেলসির আচরণে অসন্তুষ্ট হন। বোগা জানাচ্ছেন কতটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এমবাপ্পের মা, ‘এমবাপ্পের মা তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে বলছিলেন, আমার ছেলে আবার আসবে না। আজ তারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিল। তারা যদি ওকে নিতে চায়, তবে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে ৫ বছর পর ওকে কিনতে ৫০ মিলিয়ন নিয়ে আসতে হবে!’

এমবাপ্পের মায়ের পক্ষে দোভাষী হয়ে কথা বলছিলেন বোগা, ‘এটাই বলেছিলেন তিনি। আমি বলেছিলাম এটা বলা সম্ভব না আমার পক্ষে। খুব উদ্ধত শোনাবে, তবে তিনি কিন্তু সঠিক ছিলেন। ৫ বছর পর ৫০ নয় ১৮০ মিলিয়ন দিয়ে এমবাপ্পেকে কিনেছে অন্য কেউ। এর মানে তিনি তাঁর ছেলের প্রতিভা সম্পর্কে জানতেন, এবং তিনিই ঠিক ছিলেন’

সেদিন লন্ডন ঘুরে এসে আশাহত হয়নি ছোট্ট এমবাপ্পে। তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্লোরেন্ত মালুদার সঙ্গে। এমনকি একটি জার্সিও উপহার পেয়েছিল। ছয় বছর আগে, ভাঙা-গড়ার দোলাচলে এমবাপ্পেকে পেলে ব্লুজদের কী হতো তা হয়তো বলা যায় না। কিন্তু এই সময়ের এমবাপ্পেকে পাওয়া চেলসির জন্য আশীর্বাদ হতো, তা অনেকটাই নিশ্চিত।

বোগা চেলসির সাফাইও গেয়েছেন, ‘সত্যি বলতে চেলসি তখন স্বাক্ষর করালে ভালো হতো, এসব কথা এখন বলে লাভ নেই। সে সময় চেলসির একটি ভালো দল ছিল। সে দলে এমবাপ্পেকে নেওয়া সম্ভব হতো না। তার থেকে বড় কথা সে সময় চেলসি এমন একজন খেলোয়াড় চাইছিল যে কিনা দলকে রক্ষণে সাহায্য করবে। কিন্তু সে সময় সে ট্র্যাকব্যাক করত না। বল পায়ে সে এখনকার মতোই স্কিলফুল ছিল, কিন্তু বল ছাড়া সে খুব অলস ছিল। যেটা চেলসি ম্যানেজমেন্টের খুব একটা পছন্দ হয়নি।’