ঢাকা রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১

ভিপিএন ব্যবহার কতটা নিরাপদ


২৭ জুলাই ২০২৪ ১৮:২১

ফাইল ফটো

ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ভিপিএন। এটি এমন এক ধরনের নেটওয়ার্ক কাঠামো, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক দিয়ে ভার্চুয়াল টানেলের সাহায্যে অন্য এক বা একাধিক নেটওয়ার্কিংয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ মেলে। ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজের ব্যক্তিগত সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাড়ানো ও অপ্রবেশযোগ্য কনটেন্ট দেখার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভিপিএন। প্রযুক্তি বিশারদদের মতে, এটি অনলাইন কার্যক্রমের সুরক্ষা নিশ্চিতে অদৃশ্য একটি চাদর। তবে ভিপিএন ব্যবহার করা অবস্থায় ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির সহিংসতায় ডেটা সেন্টার  পুড়িয়ে দেয়ার পর দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গুগল প্লে স্টোরে ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রবণতা বেড়ে যায়। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, গুগল প্লে স্টোরে শীর্ষ ডাউনলোড করা পাঁচটি অ্যাপসের মধ্যে চারটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিপিএন। এরপর রয়েছে টিকটক।
ইন্টারনেট সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা। ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নব্বইয়ের দশকে ভিপিএনের আবির্ভাব ঘটে। মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই ভিপিএন ব্যবহার করা হলেও স্ট্রিমিং, গোপনীয়তা, গেমিং, ভ্রমণ এবং নিষিদ্ধ সাইট ও কনটেন্টে অ্যাকসেস পেতেও ভিপিএন ব্যবহার করা হয়। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়েই বেশি ব্যবহার করা হয়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩১ শতাংশ। বর্তমানে ভিপিএনের বাজার প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এটি বেড়ে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তিবিদরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারে নানারকম কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। সেসব দেশে মূলত ভিপিএন ব্যবহার করছেন বহু মানুষ।
বর্তমানে ভিপিএন ব্যবহারকারীর শীর্ষ দেশ হলো কাতার। দেশটিতে ৭০ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৬২ শতাংশ) এবং সিঙ্গাপুর (৫৪ শতাংশ)। অন্যদিকে কম ভিপিএন ব্যবহারকারীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সাউথ আফ্রিকা। দেশটিতে মাত্র ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর রয়েছে জাপান (১ দশমিক ৮৩ শতাংশ) এবং কেনিয়া (১ দশমিক ৯২ শতাংশ)।
অনেক ভিপিএন বিনামূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা যায়। আবার অনেক ভিপিএন ব্যবহার করতে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এসব ভিপিএনে বিভিন্ন উন্নত ফিচার ও উচ্চগতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা মেলে।
বাজারে থাকা সব ভিপিএনই যে ভালো পরিষেবা দেবে তা নয়। ব্যক্তিভেদে ভিপিএন বাছাই নির্ভর করে। এজন্য ভিপিএনের নিরাপত্তা ফিচার, গোপনীয়তা নীতিমালা, সার্ভার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটের গতি ও সক্ষমতা এবং ব্যবহারকারীর জন্য কতটা সহায়ক এসব বিষয়ও নির্ভর করে। এ কারণে ভিপিএন পছন্দের ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচিতি, অবস্থান, ফিচার ও সুরক্ষা স্তরের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা।


ভিপিএনের সুবিধা

নিরাপদ সংযোগ থেকে ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট ডেটায় অন্য কারও মনিটরিং বা ব্যাঘাত ঘটানোর বিষয়টি ঠেকিয়ে দেয় ভিপিএন। ভিপিএনের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিজের আইপি অ্যাড্রেস ও ভৌগোলিক অবস্থান গোপন রাখার সুযোগ পান, যার ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপনদাতা এবং অনলাইন ট্র্যাকারের পক্ষে ব্যবহারকারীর অনলাইন গতিবিধি নজরদারি করা জটিল হয়ে ওঠে।
পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাইবার নিরাপত্তা হুমকি যেমন ‘ম্যান ইন দ্য মিডল’ ধাঁচের সাইবার আক্রমণ, ‘ডিএনএস স্পুফিং’ এমনকি ওয়াই-ফাই থেকে ব্যবহারকারীর গতিবিধি আড়ি পেতে শোনার মতো ঘটনার ক্ষেত্রেও সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার। এগুলো বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ মেলে। অনেকে বাধ্য হয়ে আবার অনেকে না বুঝে এসব ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এসব ক্ষেত্রে হ্যাকাররা সহজেই ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত নানা তথ্য পেয়ে যান, যা দিয়ে পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে পারেন এমন ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। ভিপিএনের মাধ্যমে এসব থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

ভিপিএনের অসুবিধা

বর্তমানে হাজার হাজার ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ পাওয়া যায়। ভিপিএন টুল ডাউনলোড করার সময় মোবাইল বা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণসহ ফেসবুক, ইমেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ওই ভিপিএন নির্মাতার কাছে। ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা। এ ঝুঁকির পাশাপাশি অনেক সময় ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। কারণ বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় ভিপিএন।

একটি ভিপিএন সেটআপ বা কনফিগার করা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর কাছে ভীতিকর হতে পারে, বিশেষ করে এনক্রিপশন প্রটোকল, সার্ভার বাছাই ও ‘টানেলিং’ আলাদা করার মতো বিভিন্ন উন্নত ফিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগে ‘ট্রাবলসশুটিং’, ‘ডিএনএস’ বা ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম’ ফাঁস বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডিভাইস সেটআপের বেলায় কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা, এমন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তুলনামূলক কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে।

ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু তথ্য গোপন করা তাই সরকারি সংস্থাগুলো চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব তথ্য উদঘাটন করতে পারে না। ভিপিএন ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বহু অপরাধের ঘটনা ঘটে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।