ঢাকা বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


সঠিক সময়ে ইফতার করার আহ্বান


১৭ এপ্রিল ২০২১ ২২:১০

ছবি- সংগৃহিত

‘ইফতার’ আরবি শব্দ, যার অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা। ইসলামি পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার। আর কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক ইফতার করাই আমাদের জন্য উত্তমপন্থা।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রেসবিজ্ঞপ্তীতে এমন আহ্বান করেন ‘সচেতন আলেম সমাজ’ অরাজনৈতিক ও অহিংস সংগঠন।

সংগঠনের দাবি, আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভিতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা তোমাদের জন্য পরিস্কার প্রতিভাত না হয়। অতঃপর তোমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করে নাও। (সূরা বাকারা : ১৮৭) এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা সাধারণত যখন ইফতার করি এই সময়টা কুরআনে বর্ণিত সময় কিনা এটা আমাদের ভেবে দেখার গুরুত্ববোধ করছি।

কারণ, আল্লাহ কুরআনে ইফতার করার বিষয়ে লাইল শব্দ ব্যবহার করেছেন। আরবী লাইল অর্থ ‘রাত্র’। আমরা সাধারণত যখন ইফতার করি তখন হয় ‘সন্ধ্যা’। সন্ধ্যা আরবীতে ‘আসোয়াল’। সূরা রাদ এর ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আসমানসমুহ ও যমীনে যা কিছু আছে, তারা সবাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আল্লাহতে সাজদা করে চলেছে, এমনকি সকাল সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলিও’। আবার এ সূরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘রাতের শপথ যখন তা ঢেকে যায়। এভাবে আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় ‘লাইল’ শব্দ দ্বারা রাত্র বুঝিয়েছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট আকাশে আমরা যে রক্তিম আভা দেখতে পাই সেটাকে কুরআনে বলা হয়েছে ‘সাফাক’। এই সাফাকের পরেই শরু হয় রাত।

সূরা ইনশিকাকের ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শপথ সন্ধ্যাকালীন রক্তিম আভার’। আবার পরের আয়াতেই আল্লাহ বলেন, ‘এবং শপথ রাতের’। এখানেও আল্লাহ রাতকে ‘লাইল’ বলেছেন। চিন্তার বিষয় আল্লাহ যেখানে সুস্পষ্টভাবে রাতের আগমন পর্যন্ত অর্থাৎ ‘লাইল’ আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করতে বলেছেন, সেখানে রাতের আগমন আসার আগেই সমাজে কিভাবে সন্ধ্যায় ইফতার করা চালু হলো! আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা কি সঠিক সময়ে ইফতার করছি ? নাকি মাত্র ২৫-৩০ মিনিটের জন্য রোযা নষ্ট করছি। এ বিষয়টা বুঝার জন্য আমরা কোরআন খুলে দেখতে পারি।

এছাড়াও বুখারি শরীফের ১৮১৬ নং হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন দেখবে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে’। হাদীসে উল্লেখ আছে ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত উপর বিন খাত্তাব ও উসমান বিন আফফান (রাঃ) উভয়ই মাগরিবের সলাত পড়তেন আদায় করতেন এমন সময় রাতের অন্ধকার নেমে আসতো। অতঃপর তারা ইফতার করতেন, এ শিক্ষা তারা মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে পেয়েছেন’। (মুয়াত্তায় মালেক, প্রথম খন্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা, ৬৯৪ নং হাদিস)

বোখারী শরীফের ১৮১৮ নং হাদিসে উল্লেখ আছে- ‘হযরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যতদিন লোকজন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না’। এই হাদীসে তাড়াতাড়ি ইফতার করার মানে এই নয় যে ইফতারের সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে ফেলতে হবে। এই হাদীস বলার মূল কারণ হলো এই যে, ইহুদী জাতি ইফতার করে রাতের মধ্যাংশে আর খ্রিষ্টান জাতি ইফতার করে এশার সলাতের দীর্ঘসময় পরে। আল্লাহ যেহেতু বলেছেন রাত্রি হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করতে হবে, তাই রাত্রি আসার সাথে সাথেই ইপতার করতে হবে।

এই অবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা কোরআর হাদীসের কথা মানবো নাকি সামাজের প্রচলিত সময়ে ইফতার করবো। আর সূরা বাকারার ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শুধু গোড়ামির বশবর্তী হয়েই তারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অস্বীকার করেছে’। আল্লাহ আমাদের গোড়ামী করা থেকে রক্ষা করুন।

সংগঠনের সভাপতি মুফতি আল্লামা খলিলুর রহমান জিহাদী, সাধারণ সম্পাদক শাইখ মাওলানা আলমগীর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা রবিউল আলম সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস আলম আল কাদরী, হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন রংপুরী, মুফতি আল্লামা ওসমান গণি উক্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তীতে স্বাক্ষর করেন।