প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে ইসি কর্মকর্তাদের লাগাতার বিদেশ সফর, মধ্যপ্রাচ্যে নেই নজর

প্রবাসীদের ভোটার বানাতে লাগাতার বিদেশ সফর চলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তাদের। তবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আগ্রহ কম। বরং ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশগুলোর দিকেই নজর। নিবন্ধন চালু হওয়া দেশগুলোর দিকেও নেই দৃষ্টি। ফলে, প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে অগ্রগতি নগন্য।
আগের কমিশন ২০২৩ সালে সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দায় ভোটার নিবন্ধন চালু করে। দুই বছরে সেখানে এনআইডি পেয়েছেন মাত্র ৬৫৯ জন। যদিও সৌদিতে থাকেন সবচেয়ে বেশি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার প্রবাসী।
মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের আরও কয়েকটি দেশেও ২০২৩ সালে ভোটার নিবন্ধন চালু হলেও সবখানেই ভোটার হওয়ার হার নগণ্য। মালয়েশিয়ায় ৩১৯, কাতারে ৩৯৪ এবং কুয়েতে ২১১ জন প্রবাসী এনআইডি পেয়েছেন।
অন্যদিকে, এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান ও বাহরাইনে। দুই দেশে প্রবাসী থাকেন প্রায় সাড়ে আট লাখ।
প্রবাসী অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্য বাদ দিয়ে বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইতালিসহ উন্নত দেশগুলোতে। ভোটার কার্যক্রম তদারকি ও এনআইডি বিতরণ উদ্বোধন করতে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন গিয়েছিলেন দশ দিনের কানাডা সফরে।
গত এপ্রিলে কানাডায় যান ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কদিন আগেই শেষ করে এসেছেন মালয়েশিয়া সফর। ইসি সচিব আখতার আহমেদ পাঁচদিনের সফর করেছেন জাপানে।
এছাড়া, এনআইডি বিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম সাত দিন অস্ট্রেলিয়া ও দুইদিনের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অক্টোবরে যাচ্ছেন সুইডেনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম মাহবুব বললেন, আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের একটা প্রবণতা আছে, কথায় কথায় দেশের বাইরে যাওয়ার। বেড়ানোর জন্য তো উন্নত বিশ্ব ভালো। কারণ খরচ তো সরকারই দিচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যবাসী প্রবাসীদের উপেক্ষা করার সুযোগ নাই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী ভোটার সংখ্যার আধিক্য যেখানে সেখানেই সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন, ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি লাগবে, এই যে আমাদের দূতাবাসগুলো আছে, হাইকমিশন আছে, সারা দুনিয়াতে ভোটারদের বুঝাতে হবে তারা কীভাবে ভোটটা দেবেন, ডামি ভোটের আয়োজন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যারা থাকেন, তারা কিন্তু অভিবাসী শ্রমিক, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যারা কানাডা, আমেরিকা, জাপানে থাকে তাদের চেয়ে অনেক কম, কাজে তাদেরকে বুঝাতে সময় লাগবে। এগুলো মধ্যপ্রাচ্যে করতে হবে। না হলে এরা কিন্তু তখন ভোটদানে ব্যর্থ হবে।
এখন পর্যন্ত নগণ্য পরিমাণ এনআইডি প্রদান সম্পন্ন করেই সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। ইসির দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে অনেক প্রবাসীর ভোটার নিবন্ধন আগেই হয়ে গেছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, আমাদের নিবন্ধন কার্যক্রম মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে আগেই। যেখানে যাওয়া হয়েছে সেখানে আর বাড়তি দ্বিতীয়বার যাওয়ার আবশ্যকতা থাকলে অবশ্যই যাবো। আর আমাদের দূতাবাসগুলো তো আছেই। তারা এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে তো কাজ করছেন। বরং মোটামুটিভাবে আমরা যতটুকু না গেলে নয় সেটুকুর ভেতরে সীমিত থাকতে চাই।
এদিকে, প্রবাসীদের অভিযোগ, একদিকে ইসির তদারকির অভাব, অন্যদিকে দূতাবাসের অসহযোগিতা নিবন্ধন কার্যক্রমে ধীর গতির মূল কারণ। তাই বিদেশ ভ্রমণের চেয়ে এনআইডি প্রক্রিয়ার জটিলতা দুর করার দাবি তাদের।