ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২

দল পাল্টে আরো ভয়ঙ্কর রুপে খিলগাঁওয়ের ডিশ বাবু


৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৩৬

ফাইল ফটো

দল পাল্টে আরো ভয়ঙ্কর রুপে ফিরেছে খিলগাঁওয়ের ডিশ বাবু। ডিশ, ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অটো রিকশার টোকেন বাণিজ্য, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রকসহ এমন কোন অপরাধ নাই যা তারা করছেনা। সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীর ডান খ্যাত ডিশ বাবু, বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় পুরো খিলগাঁও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই গ্রুপে রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, মাইনুর, সমশের ওরফে ডাকু সমশের, জিন্নাত, অন্তর, বাবু ওরফে খলিল বাবু, টাকলা বাবু, রিপন,ডিশ বাবুর আপন ভাই কাওসার, পনির, শফিক, গুলবাগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মহসিন আলম ঝুটন, ফরহাদ, বনশ্রী সিকিউরিটি গার্ড  কামরুল ও জয়নাল। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।  

খিলগাঁও থানার ওসি আবু দাউদ খান বলেন, আমরা তার সম্পর্কে জানি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তার বিরুদ্ধে থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে। এছাড়াও বিগত ছাত্র জনতার আন্দোলনেও হামলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাও তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাবু ডিশ ব্যবসায় একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তারের কারণে তার নামের আগে ডিশ বসে যায়। অর্থাৎ এলাকায় ডিশ বাবু হিসেবে পরিচিতি পায়। ডিশ ব্যবসার পাশাপাশি সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছের লোক হওয়ার কারণে ইন্টারনেট, ময়লার ব্যবসার নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে পুরো এলাকাতেই তার একচ্ছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত সরকারের সময়ই নানা অপকর্মের তার বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধশতাধিক মামলাও চলমান রয়েছে।

 

বিগত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাতারাতি দল পাল্টে ফেলে ডিশ বাবু। ওই রাতেই ডিশ বাবু ও খিলগাঁও থানার তিন নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি হালিমের সান্নিধ্যে তাদের সহযোগীরা পুরো এলাকার নির্মাধীন ভবনের ইট, রড, সিমেন্ট লুটপাট চালায়। এছাড়াও চার টি বড় বড় জায়গা দখল করে নেয়। 

খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসা,গ্যাসের ব্যবসা, ময়লা ব্যবসার, অটো রিকশার টোকেন নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে এই সিন্ডিকেট। মূলত বিএনপি নেতা হালিম আধিপত্য ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ নেতা হওয়া সত্বেও কৌশলে ডিশ বাবুকে তার সঙ্গে নিয়েছেন। 

তার অভিযোগ, অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুক্তভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, আগে আওয়ামী লীগের নামে যে সকল লোকজন অপকর্ম করতো এখন তারাই বিএনপির নামে করছে।

ডিশ বাবু সম্পর্কে সবাই জানে। এখন সে বিএনপি নেতা হয়ে গেছে। ডিশ বাবু, হালিমসহ অন্যরা এলাকায় পূর্বের মতই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। 

তিনি বলেন, রাস্তায় সবজি ভ্যান থেকেও তারা টাকা উঠাচ্ছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তারা হাত দিচ্ছেনা। 

এত মামলা থাকার পরও বর্তমান সময়ে কিভাবে এই সকল সন্ত্রাসী প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন প্রশ্ন করেন তিনি। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবসায়ী বলেন, আগে আমরা গ্যাসের ব্যবসা করতাম। গত ৫ আগষ্টের পর থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠান তারা দখলে নিয়েছে। এখন আমরা কিছু বলতেও ভয় পায়। 

কার বিরুদ্ধে বলবো, কার কাছে বলবো এমন প্রশ্নও করেন তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমার ওয়ার্ডেও সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হালিম আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এমনকি ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে করে নিয়ে নানা অপকর্ম করছে। এগুলো নিয়ে আমি দলের সিনিয়র নেতাদের অবহিত করেছি। পরে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। এরপরও দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি থানাতেও কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, ডিশ বাবু খিলগাঁওয়ের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আমার ওয়ার্ডেরই কিছু নেতা নানাস্থানে চাঁদাবাজি এমনকি জায়গা জমি দখল ও দখল করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এগুলো আমাদের নজরে আসছে। এগুলোর বিষয়ে দ্রুতই আমরা ব্যবস্থা নেব।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। একই সাথে ডিশ বাবুও কোন কোন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবের চৌধুরী এমপি থাকাকালীন সময়ে সে কি করেছে তা তিনি জানেন না।