ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


গতকাল সরকার আদালত অবমাননা করেছে: ফখরুল


৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৩

চ্যারিটেবল মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে যে অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেটাকে ‘সরকারের আদালত অবমাননার’ বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, দেশে বিচার বিভাগের যে অবস্থা, সেখানে কে কতটা সাহস রাখবেন তা আমি জানি না। সরকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যখন বলেন, ‘সব ঠিক আছে, তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ আছেন’, তখন বিএসএমএমইউ উপাচার্য এবং ডাক্তারদের কয়টা মাথা আছে যে বলবেন- বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ। গতকাল সরকার আদালত অবমাননা করেছে।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য আয়োজিত খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের অবৈধ সাজা বাতিল এবং স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কালকে বিএসএমএমইউ উপাচার্য আদালত অবমাননা করেছেন। কারণ ৫ তারিখের মধ্যে দুটি রিপোর্ট আদালত চেয়েছিলেন। কোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন এই রিপোর্ট ডাক্তারদের স্বাক্ষরসহ হাজির করতে হবে। কিন্তু তারা করেননি। তারা আদালতের আদেশ অমান্য করেছে। তার আগেরদিন (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘খালেদা জিয়া খুব ভালো আছেন, সুস্থ আছেন, রাজার হালে আছেন’। একজন মানুষ হুইল চেয়ারে, তারপরও বলা হচ্ছে তিনি ভালো আছেন। এজন্যই আদালত অবমাননা হওয়া উচিত ছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব সব সময় সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এমনভাবে চেষ্টা করেন যে সরকার না, দলীয়ভাবে স্বার্থরক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এতকিছুর পরও আমরা হতাশ হয়েছি, সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগ এই বিষয়টাকে লক্ষ্য করেননি। এবং এই বিষয়ে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেননি।’

‘জাতি আজ গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায়’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য, এ জাতি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছে। তার মূল বিষয়বস্তু ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। অথচ সেই জাতি আজ গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায়। এরশাদের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যারা রাস্তায় নেমে প্রাণ দিয়ে জাতির জন্য গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন, তাদের সঙ্গে বেঈমানি করে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচন করেছে আজকের ক্ষমতাসীনরা। আজকেও তারা সেই স্বৈরাচারী এরশাদের দলের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’

দেশে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিনহা সাহেব (সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা) তার বইতে লিখেছেন, আমাদের যা কিছু অর্জন তা দানবের মত তছনছ করে দিচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র সব ধ্বংস।’

‘অসুস্থতায় খালেদা জিয়া প্রাণ হারিয়ে ফেলতে পারেন’- এমন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। ডাক্তাররা বলছেন, বিলম্ব হলে তাঁকে সুস্থ অবস্থায় আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এমনকি প্রাণহানিও হতে পারে। আমরা সরকারকে বারবার বলছি- সবকিছু বাদ দেন, অন্তত মানবিক কারণে তাঁকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এ সময়ে বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে রাস্তায় নেমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আজকে তাই আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে। আমাদের নেত্রীকে উদ্ধার করতে হবে, গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে। এটাই এখন আমাদের দায়িত্ব। বড় চ্যালেঞ্জ।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায়। তাইতো একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলায় সরকার জোর করে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। কারণ বেগম জিয়া এতটাই জনপ্রিয় যে, তিনি যদি বেরিয়ে আসেন তখন বর্তমান সরকারের পক্ষে এক মুহূর্ত ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। সে কারণেই তাঁকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি শুধু কারাগারে আছেন তা নয়, তিনি এখন অত্যন্ত অসুস্থ।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- দলটির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম প্রমুখ।

নতুনসময়/আইকে