ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারীদের যেভাবে পারা যায় তাদের দমন করা হবে : গওহর রিজভী


২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৪

ফাইল ফটো
‘যারা উন্নয়নের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে যেভাবেই পারা যায় তাদের দমন করা হবে।’  এই কথা গুলো বলছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী।
 
দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ইন্টার রিলেজিয়াস ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড হারমনি’ নামের একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভিত্তিক সংগঠনের উদ্বোধন ও লগো উন্মোচনের প্রধান অতিথির বক্তেব্যে তিনি বলেন ‘অর্থনীতির অ্যানালিটিক্যাল ক্যাটাগরিতে আমরা মানুষকে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি ভাগে ভাগ না করে আমরা মানুষকে ধনী-গরিব, পুরুষ-মহিলা, কর্মজীবী-বেকার ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে হিসেব করি।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও আমাধের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আলোচনা করতে হচ্ছে, সংগঠন গড়ে তোলতে হচ্ছে। অথচ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামটাই হয়েছিলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর ভিত্তি করে। ১৯৭১ সালে কেউ বলেনি আমি মুসলমান, আমি হিন্দু, আমি বৌদ্ধ। সবাই বলেছে আমরা বাঙালি, আমাদের রক্ত এক, আমাদের রক্ত লাল।’
 
অধ্যাপক রিজভী বলেন, ‘আমাদের (সকল ধর্মের মূল কাজে) মাঝে কোনো ভেদ নেই, মাঝে মাঝে ভেদ করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের সবার ক্ষুধা একই রকম। আমাদের কমন সংগ্রাম হচ্ছে ক্ষুধা দূরকরা, বেকারত্ব দূরকরা, জঙ্গিবাদ দূরকরা। যারা সন্ত্রাস তাদের কোনো ধর্ম নেই।’
 
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এবং মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। সাম্প্রতিক সময়ে ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে তিনি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘সকল ধর্মীয় চিন্তাবিদ নিরপেক্ষ ছিলেন। আমাদের মাইজভান্ডার দরবার শরীফ সকল ধর্মের লোকদের জন্য উন্মুক্ত। আমাদের এখানে অন্য ধর্মের লোকেরাও অনেক মেহনত করেছেন এবং করছেন।’
 
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে দেশে আলেম-ওলামাদের চাপে শিক্ষা ব্যবস্থায় সিলেবাস পাল্টাতে হয়, নারী শিক্ষায় এখনো যারা বিরোধীতা করে, যেখানে এখনো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না সে দেশে বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে? এই সরকারের আমলেই তাদের পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশ স্বাধীন তার কোনো হদিস নেই।’
 
সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারির সভাপতিত্বে এবং জনাব নির্মল কুমার চট্টপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসংঘের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জীনাবোধী ভিক্ষু, চার্চ অব বাংলাদেশের প্রাক্তন মডারেটর বিশপ পাল শিশির সরকার।
 
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিয়া হক। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। তারপর  বাংলাদেশ ইন্টার রিলেজিয়াস ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড হারমনির সমন্বয়কদের মধ্যে নির্মল রোজারিও এবং ভিক্ষু সুনান্দপ্রিয় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আমরা দুষিত বাতাস দেখছি। যা আমাদের আধ্যাতিক পরিবেশকে নষ্ট করছে।’
তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন মন্দকে ভাল দিয়ে প্রতিহত কর, মন্দকে মন্দ দিয়ে প্রতিহত করতে গেলে মন্দই বাড়বে।’
 
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশ গুপ্ত তার বক্তব্যে বলেন, ‘বক ধার্মিকেরা মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে মানুষকে মানুষের বিরোদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। উন্নয়নকে টেকসিই উন্নয়নে রূপ দিতে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি গড়ে তোলতে হবে।’
 
সভাপতির বক্তব্যে  সৈয়দ তৈয়বুল বশর বলেন, ‘সকল ধর্মেরই মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তি চাই, শান্তি চাই, শান্তি চাই। সকল ধর্মই যেহেতু শান্তির বার্তা দেয় তাই আমরা সবাই এই শান্তির জন্য একসাথে হয়েছি। আমাদের মুরুব্বিরা ৫২ থেকে ও ৭১ থেকে কাজ করছে আমরা তাদের থেকেই শক্তি পেয়েছি।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘যেখানে হামলা হয় সেটা আমাদের ওপর হামলা হয়। কোনো এক বিখ্যাত লোক বলেছিলেন, এক ধর্ম একজায়গায় মেজরিটি অন্য জায়গায় মাইনরিটি। তাই আমরা আর সভা-সেমিনারে থাকবো না। আমরা মসজিদে, মন্দিরে, পেগোডা, গির্জায় সর্বত্র যাব। সকলকে নিয়েই সম্প্রিতির বন্ধন তৈরি করবো।’
 
অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসন্ন শীতকালে সারা বাংলাদেশে ৮টি বিভাগে ৮টি মহাসমাবেশ করা হবে। তারপর উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে কমিটি করে দেওয়া হবে।