ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


ওয়ান-ইলেভেনে নির্যাতিত নেতারাই স্বেচ্ছাসেবক লীগে আলোচনায়


২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৪৫

খাইরুল হাসান জুয়েল

কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক প্রস্তুতি সভায় শুরু হয়েছে একের পর এক। সাত বছর পর হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। নেতৃত্বের পালাবদল ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়গ নেমে আসার পর যুবলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। প্রায় দশককাল পর সম্মেলন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। নানা কারণে যারা দুর্নাম কুড়িয়েছে, এমন নেতারা এবার বাদ পড়বেন বলেও তাদের আশা।

এবারের নেতৃত্ব কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, ইমেজ নষ্ট, এমন কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবে না। যারা নেতৃত্বে আসবে, তাদের অবশ্যই সৎ, অভিজ্ঞ এবং সাংগঠনিক হতে হবে। ১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেব নাথ। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটিই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কাসিনোকাণ্ডে নাম এসেছে কাওসারেরও।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি দেখভাল করছেন সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম। ফলে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকার দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা রয়েছেন বলে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

বর্তমান চার সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, আব্দুল আলীম বেপারী রয়েছেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের লড়াইয়ে। এছাড়া কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু, সহ সভাপতি মতিউর রহমান মতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনও কেন্দ্রীয় পদের লড়াইয়ে আছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের পুনরায় শীর্ষ পদে থাকতে কোনো আপত্তি নেই।

সম্মেলন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে সোহেল রানা টিপু বলেন, “স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব, সাংগঠনিক দক্ষতা।

খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, এক-এগারোতে নেত্রীর কারা মুক্তির আন্দোলনে এক বছর জেলে থেকেছি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বার বার হামলার শিকার হয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। সততা স্বচ্ছতা কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। আমি মনে করি, নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট থাকে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।

নেতৃত্ব নির্বাচনে সারাদেশের ২২০০ নেতা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক জেলা থেকে ২৫ জন করে কাউন্সিলর আসবে, এর বাইরে আমাদের কেন্দ্র ও সাংগঠনিক মহানগর শাখা মিলিয়ে ২২০০ নেতাকর্মী কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে, তারাই নেতা নির্বাচন করবে।

নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে নাছিম বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী সারা দেশের কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা নেতা নির্বাচন করবে। তবে সর্বোপরি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সর্বশেষ সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে কাউন্সিলরদের ভোট দিতে হয়নি।

কিভাবে হয়েছিল- জানতে চাইলে পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, “কাউন্সিলররা দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেইভাবে মাননীয় নেত্রী আমাদের নাম জানিয়ে দিয়েছিলেন।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নতুন নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের সময় অনেকেই নির্যাতিত হয়েছে, ওই সময়ে দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা এগিয়ে থাকবে