ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ক্ষমা! জামায়াতীদের নতুন কৌশল


৫ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৯

কবীর চৌধুরী তন্ময়

সাম্প্রতিক জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমা চাওয়ার ‘মন্ত্রে’ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। সেই সাথে অনলাইনসহ কাগজের পত্রিকাগুলোর (অধিকাংশ) সম্পাদকীয় থেকে উপ-সম্পাদকীয়তে নানান জনের নানান মতামত প্রকাশ করেছে। অনেকে আবার এই ক্ষমা চাওয়া আর না চাওয়ার অন্তড়ালে কী থাকতে পারে-গোল টেবিল বৈঠক করে এটিও তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
অনেক দিন পর ব্যাপারটি সত্যিই ভালো লাগার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের সুশীল সমাজের বিরাট একটি অংশ আজ জামায়াতে ইসলামকে ক্ষমা না করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান কথায়, বক্তব্যে এবং লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেছে। কিন্তু সবাই জামায়াতে ইসলাম ক্ষমা না করার জন্যে বললেও জামায়াতীদের ব্যাপারে তেমন কেউ কথা বলেনি।

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, জামায়াতী কারা?

আসলেও তাই। জামায়াতী কারা? জামায়াতী তারা, যারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অশুভ ছায়া, রাজাকারের জন্মদাতা, কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে বাংলাদেশে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে স্থায়ীভাবে বাংলার পবিত্র মাটিতে অপবিত্র আত্মার দেহকে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছিল। জামায়াতী তারা, যারা স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে তদবীর, লবিং করেছিল! জামায়াতী তারা, যারা ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষেরও বেশি সম্ভ্রব বিনাশে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। জামায়াতী তারা, যারা নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে নিজেদের স্বাক্ষর দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে তখনকার সময়ে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছে।

১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর মন্ত্র পড়ে যারা একমত পোষন করেছে, যারা মওদুদীর মন্ত্রে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে; তারা সবাই জামায়াতে ইসলাম। আর এই জামায়াতে ইসলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কী করেছিল-এটি ৭৫’র পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের কয়েকটা প্রজন্মের কাছে আড়াল করতে পারলেও, একটা সময় ইতিহাসের নিজেস্ব সত্যতার কাছে জামায়াতীরা পরাজয় বরণ করেছে। সত্য প্রকাশিত হয়েছে এবং আরও প্রকাশিত হবে।

এই জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস বাহিনী গঠন করে দেশের সুর্য সন্তানদের হত্যা করেছে। আল-বদর বাহিনীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের অঙ্গীভূত করেও নিয়েছিলো। গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত করা তাদের কাছে পেশি শক্তির অপব্যবহার ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যদিকে মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ আরও কিছু দল পাকিস্তানকে সমর্থন করলেও দলগতভাবে বা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউই জামায়াতে ইসলামীর মতো দেশের মানুষের ওপর এত নৃশংস অত্যাচার-নির্যাতন করেনি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের নিজেস্ব জল্লাদখানা বা টর্চার সেল তৈরি করেছিল। আবার জেলায় জেলায় সেই জল্লাদখানা বা নির্যাতন কেন্দ্র খুলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের অনামবিক নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
জামায়াতে ইসলাম রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু নিজেদের বাহিনী গঠন করে নিজেস্ব স্টাইলে অত্যাচার, নির্যাতন করত না; পাশাপাশি পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগি হয়ে- কখন, কোথায়, কাকে হত্যা করতে হবে, কার সম্পদ লুট করতে হবে, কোন বাড়ীর মেয়ে মানুষকে ধর্ষণসহ হত্যা করে অগ্নিসংযোগ ঘটাতে হবে; তার সবই জামায়াতে ইসলামী করেছে এবং ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে তারা বাসা থেকে তুলে নিয়ে বহু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রে সাম্প্রদায়িক দল গঠনের ওপর শাসনতান্ত্রিক বিধি-নিষেধ করে জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়াউর রহমান সেই শাসনতন্ত্র থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে পরিকল্পিতভাবে পুনরায় সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে এই জামায়াতে ইসলামকে পুনর্বাসন করে যা ১৯৭৬ সালে জামায়াতে ইসলামীও তার সনামে নিজেস্ব মওদুদীবাদের ভ্রান্ত আদর্শে আবারও পুনর্গঠিত হয়।

এখন জামায়াতে ইসলামের ক্ষমার মন্ত্রটি মুলত জামায়াতীদের। এই মন্ত্র নিয়ে আগে কথা হলেও জোরদার হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির পর। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামকে কেন বিএনপি ধানের শীষ মার্কা দিয়ে নির্বাচন করতে সুযোগ করে দিয়েছিল-এটি নিয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ার এক পর্যায় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়াটা বোকামি। তারা ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হবে জানলে ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব নিতাম না।’ আবার একই সুরে কথা বলেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিঁনি তো প্রকাশ্যেই টকশোতে বলেছে, জামাতকে ক্ষমা চাইতে হবে।
আর তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমার তকমা দিয়ে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর বহিষ্কার সব মিলিয়ে জামায়াতে ইসলামের বহুদিনের খোলস পরিবর্তনে বাংলাদেশেও নতুন করে চেষ্টা করছে। কারণ, সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর মন্ত্র পড়ে কতিপয় মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে আসতে পারলেও উল্লেখযোগ্য হারে টেনে আনা সম্ভব হয়নি, হচ্ছে না। তাই পুরনো বোতলে নতুন মোড়ক লাগানোর চেষ্টা।

জামায়াতে ইসলাম তুরস্কের ওয়েল ফেয়ার পার্টির মডেল অনুসরণ করছে বলে কিছুটা আমার কাছে মনে হচ্ছে এবং বাস্তবে এই ধরনের সংগঠনও কাজ করছে বলে প্রমাণ পেয়েছি।

আর তুরস্কেরে ওয়েল ফেয়ার পার্টির মডেল কী-এটি খোঁজতে গিয়ে জানা যায়, ধর্মীয় সেøাগান তুলে ১৯৭২ সালে তুরস্কের মাটিতে গঠিত হয় মিল্লি সেলামেত পার্টিসি (এমএসপি)। শুরুতেই উল্লেখযোগ্যভাবে জনগণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষমও হয়েছিল তারা। জনগণ যাতে খুব সহজে বুঝতে পারে, গ্রহণ করতে পারে-এমন ভাবনা থেকে তারা সুন্দর সুন্দর ভাষা প্রয়োগে সেøাগান দিয়ে জনগণের মনে জায়গা করে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করে। আর এই চেষ্টায় অনেকগুলো ছোট ছোট ইসলামী দলকে নিজেদের ব্যানারে নিয়ে আসতেও সক্ষম হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করে। পার্টি গঠনের মাত্র এক বছরের মাথায় মোট ভোটের ১২ শতাংশ অর্জন করে এবং সংসদে ১১ শতাংশ আসন নিয়ে তুরস্কের মাটিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। কিন্তু তাদের এই সাফল্য বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। পার্টি ও জোটের মধ্যে নানা ধরনের মতানৈক্য আর টানাপোড়েনের কারণে তাদের বিকাশ সেই সময়ে আর বাড়েনি। নানান অপকর্ম আর জনগণ বিরোধী কর্মকান্ডে অনেকে জড়িয়ে পড়ে। যার কারণে ১৯৮০ সালে সামরিক শাসক এই পার্টি বিলুপ্ত করে।

বিলুপ্তির পর এমএসপি’র নেতাকর্মীরা বেশ কিছুদিন তাদের দলীয় ও ব্যক্তিগত কর্মকান্ড নিয়ে কিছুটা নিরবতা পালন করলেও পরে এমএসপির বড় একটা অংশ ‘ওয়েল ফেয়ার পার্টি’ হিসেবে নতুন রূপে তুরস্কের রাজনীতিতে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। তারা কৌশলে এমএসপির সকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিপরীতে জনসাধারণকে আবারও আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন কর্মসূচী দিয়ে কর্মকান্ড চালানোর কৌশল নির্ধারণ করে এবং নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলে।

এমএসপি’র অতীতের সকল দায় পাশ কাটিয়ে নিজেরাও নতুন নামে, নতুন কৌশলে, নতুন ফর্মুলায় সেই দায় রীতিমত ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়। কিন্তু এমএসপির সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, তাদের ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্ক ও সংগঠনের বিপুল সম্পদ ওয়েল ফেয়ার পার্টিতে ব্যবহার করত।

ওয়েল ফেয়ার পার্টিতে তারা শুরুতেই সমাজের বিভিন্ন যৌক্তিক ইস্যুতে জনগণের মাঝে ঐক্য করার রাজনীতি করে। ধর্মীয় ইস্যু আর দলীয় ও ব্যক্তিগত এজেন্ডাগুলোকে প্রচারের ক্ষেত্রে খুব কম গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের এবং দলকে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পুরনো বোতলে নতুন মোড়ক লাগানোর মাত্র ১১ বছরের মাথায় তারা ইস্তাম্বুল, আংকারার মতো বড় বড় নগর সহ অনেকগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। পরের বছর জাতীয় নির্বাচনে ওয়েল ফেয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় এবং অন্য একটি দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে যায়।

তুরস্কের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ওয়েল ফেয়ার পার্টির নানা সময়ে নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সময়ে সময়ে পরিবর্তন ঘটলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন একেপি সেই ওয়েল ফেয়ার পার্টির রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সেই উত্তরাধিকার আজও বহন করে চলেছে।

জামায়াতীদের ফর্মুলায় জামায়াতে ইসলাম পুরনো বোতলে নতুন মোড়ক লাগাতে কিংবা তুরস্কের মতন ওয়েল ফেয়ারের আদলে ইতোমধ্যেই ক্ষমার ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছে। এখানে ক্ষমার ইস্যুটি নতুন করে আলোচনা হলেও ইতোমধ্যেই ভিতরে ভিতরে ওয়েল ফেয়ারের মতন তারা কাজ শুরু করেছে।

কয়েকদিন আগে একটি সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার ব্যক্তিগত অফিসে এসে খুব অনুরোধ করে তাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হতে আমার সম্মতি নিয়েছে। আমিও যথা সময়ের প্রায় ৫০ মিনিট পরে অনুষ্ঠানে উপস্থি হয়ে একটা সময় জরুরী কাজ আছে বলে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। অনেকে তাদের পুরনো সেøাগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ গোপন করতে পারলেও এক পর্যায় কয়েকজনের আলোচনার মধ্যে আসল চরিত্রটি আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে। পরে একান্তভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখি, তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।

স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য জামায়াতীরা নতুন করে ক্ষমার কৌশল নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলোচনা ছুড়ে দিয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই জেনে গেছে, জামায়াতে ইসলাম নামে এদেশে তাদের রাজনীতি আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। সেই সাথে ছাত্রশিবির বিশ্বের তৃতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার, প্রকাশ হয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন কংগ্রেসে মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য চলমান হুমকি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারকে তাদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিলও উত্থাপন করা হয়েছে।

আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষগুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জামায়াতে ইসলামীর স্বাধীনতাবিরোধীতার তথ্য-প্রমাণ, যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, সাঈদীর চাঁদে দেখা গেছে-এই ধরনের মিথ্যাচারও যখন নতুন প্রজন্মসহ দেশের সাধারণ জনগণ জেনে গেছে; তখন শুধু নতুন কর্মী সংকটেই পড়েনি, দলীয় শিক্ষিত নেতাকর্মীর কাছেও জামায়াত-শিবির সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান নিজেকে জামাতী বলে যে কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করেছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে তার স্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়া। শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলামের হাত ধরে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনও সেই জামায়াতী ঝান্ডা হাতে নিয়ে জামায়াতে ইসলাম থেকে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। কারণ, ড. কামাল হোসেনও জানে, জামায়াতে ইসলামকে সাংগঠনিকভাবে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় হতে হবে। তাই ক্ষমার ইস্যুটি সামনে এনে একদিকে জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার একটা চেষ্টা। অন্যদিকে পুরনো বোতলে নতুন মোড়ক লাগিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অপরাধ থেকে মুক্তির পথ খোঁজার নতুন কৌশল।

এই ক্ষমার কৌশল শুধু জামায়াতে ইসলামীর একার নয়, এখানে যারা পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল; যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে লাল-সবুজের পতাকা তুলে দিয়েছিল, আজ তারাই জামায়াতী হয়ে জামায়াতে ইসলামকে ভিন্ন নামে, ভিন্ন কৌশলে রাজনীতির মাঠে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে।

একটু সহজভাবে চিন্তা করলে আপনার মধ্যেও একটি প্রশ্ন আসবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বড় কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধীতার ঘটনার, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট আর পেশি শক্তির অপব্যবহার করে ধর্মান্তরিত করা মতন জঘন্য কর্মকান্ডের জন্য সে নিজে ক্ষমা না চেয়ে জামায়াতে ইসলামকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন?

জামায়াতে ইসলামের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও জানে, খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক সিন্ধান্ত নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীতার ও একাত্তরে যে বর্বর হত্যাযজ্ঞ করেছিল; সেইসব অপরাধে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতে ইসলামেরও বিচার শুরু হবে। তাই জামাতীতের ক্ষমার তকমা নিয়ে জামায়াতে ইসলামের এই শীর্ষ নেতা ক্ষমার ইস্যু দিয়ে শেষ রক্ষা পেতে মরিয়া।

বাংলাদেশের জনগণ ধর্ম, কর্ম আর রাজনৈতিক সচেতন। পুরনো বোতলে নতুন মোড়ক লাগিয়ে এদেশের জনগণকে স্থায়ীভাবে বিভ্রান্ত করা কঠিন। সেই সাথে এটা যে জামায়াতীদের ক্ষমার এজেন্ডা দিয়ে জামায়াতে ইসলামকে রক্ষা করার নতুন কৌশল-এটিও জনগণ বেশ ভালোভাবেই অবগত বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)
 সেলফোন : ০১৭১১০৭৫১৮৭