ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


কেউ এড়িয়ে যাবেন না; বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ


১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৪

ফাইল ফটো

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আমাদের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে সকাল আটটার মধ্যে না গেলে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ওই দিনের জন্য লাইব্রেরীতে পড়াশোনার অধিকার হারালেন। সকাল আটটার আগে আপনি লাইব্রেরী চত্ত্বরে গেলেই দীর্ঘ এক লাইন দেখতে পাবেন। পড়াশোনা করার জন্য এরুপ দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার নজির পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা তা আমার জানা নেই।

আপনার মনে হতে পারে, "এ আর এমন কি কাজ!" কিন্তু জনাব, লাইব্রেরী নামক এই তীর্থ স্থানটিতে সারা দিনের অধিকার হারানোর ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী সকাল ছয়টার আগেই সেখানে গিয়ে লাইনে দাঁড়ায়। আটটায় গ্রন্থাগারটির দরজা খোলে, তারপর পড়াশোনা শুরু। কিন্তু প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এই এক থেকে দুই ঘন্টা সময় নষ্ট করানোর দাঁয়ভার আসলে কার? এজন্য কি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ন্যূনতম কোন অনুশোচনা আছে? নাকি তাঁরা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেতে পারলেই খুশি?

বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য যেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইট্রোকন্ড্রিয়া নামে খ্যাত এই লাইব্রেরীর উন্নয়নে পরিকল্পনাটা আসলে কি হওয়া উচিত ছিলো? কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে অপ্রতুল আসন সংখ্যা বাংলাদেশের সেরা এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে বিশাল এক অসুবিধার সৃষ্টি করে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমার কিংবা আমাদের জন্য সম্মাণজনক নয়। বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ বহু উন্নয়নমূলক কাজ চোখে পড়ার মত এবং সেই জন্য কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে আমার কার্পণ্যতা নেই। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিংবা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমেই মূল উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয় যদি না তাতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিকাশ কিংবা গবেষণায় উন্নয়ন না হয়। আর এক্ষেত্রে লাইব্রেরীর ভূমিকা অনেক বড়। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর কতটুকু উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতেও গত কয়েক বছরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে; তবে সেটাই কি পর্যাপ্ত? লাইব্রেরীর পাঠাগারে যদি শিক্ষার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থাই না করতে পারি তবে এসির ব্যবস্থা কিংবা গেইটের সংস্কার কাজ করাটাই কি যথেষ্ট?

আসলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযোক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারলে অন্যান্য দিকে যতই উন্নয়ন ঘটুক না কেন মূল উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক আমি দু'টি সুপারিশ পেশ করছি-

১. পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হোক। এজন্য দরকার হলে নতুন ভবন করা যেতে পারে।

২.আমাদের লাইব্রেরী নরমালি সকাল আটটা থেকে থেকে রাত ৮.৪৫ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট এই সময়ে নানাবিধ কাজের কিংবা ক্লাসের দরুন অনেকেই ঠিকমত লাইব্রেরী ওয়ার্ক করতে পারে না। তাছাড়া লাইব্রেরী যদি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকতো তবে দিনের ওই নির্দিষ্ট সময়টাতে এতটা চাপ থাকতো না। এখানে টাইম লিমিটেশন জ্ঞান আহরনে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। আর আমরা জানি, "জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব"। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা লাইব্রেরী খোলা রাখতে পারলে জ্ঞানপিপাসু অনেক শিক্ষার্থীই উপকৃত হতেন। এক্ষেত্রে চব্বিশ ঘন্টা লাইব্রেরী খোলা রাখার জন্য কতৃপক্ষের নিকট আবেদন রাখছি যেন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণে সুবিধা হয়। এর জন্য লাইব্রেরীতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ডিউটি টাইম দু'ভাগে কিংবা তিনভাগে ভাগ করে নিলেই চলবে। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।।