ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


২৪ জানুয়ারি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান


২৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:৩৪

২৪ জানুয়ারি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান

বছর ঘুরে আবারো এসেছে ২৪ জানুয়ারি। ৪৯ বছর আগের এই দিনটি বাংলাদেশের জন্মের ঐতিহাসিক দিনপঞ্জির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক নয়া যুগসন্ধিক্ষণের সূচনা করেছিল। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার সমস্ত জল এক মোহনায় মিলিত হয়েছিল। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। সমুদ্রের জোয়ার বা নদীর প্লাবন যেভাবে সবকিছুকে খড়-কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সেদিন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জোয়ারে তৎকালীন লৌহমানব ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য করে।

১৯৬৯ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর। মতিউরের শহীদ হওয়ার সংবাদ বাতাসের মতো ছড়িয়ে যায় সারাদেশে। দীর্ঘদিন যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলার ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সূচিত হয় মহান গণঅভ্যুত্থানের। এর আগে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ও ডাকসু আহুত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন শেষে মিছিল বেরুলে, সেই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) গ্রুপের নেতা আসাদুজ্জামান। আসাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। কবির ভাষায় সেই দিনের স্লোগান ছিল ‘আসাদের রক্তমাখা শার্ট জাতির পতাকা’।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকেই দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের ওপর থেকে বাঙালির মোহ কেটে যেতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির ওপর জাতিগত ও অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয়। বাংলা ভাষাভাষী জনগণ পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও জিন্নাহর এই ঘোষণা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলার ছাত্রসমাজ-শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীসহ সচেতন জনগোষ্ঠী প্রতিবাদে নেমে পড়ে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা’ বাঙালির আত্মমর্যাদার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য পৃথিবীতে কোনো জাতিকে এভাবে বীরের রক্তে শোণিত হতে হয়নি। এরপর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর গণরায় যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়নি। শহীদ আসাদ দিব

১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করেন। পাকিস্তানের ইতিহাস ধর্মের লেবাসে পরিচালিত সামরিক শাসনের ইতিহাস। ১৯৬২ সালে শিক্ষার আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ বাঙালি জাতির মধ্যে এই উপলব্ধি এনে দেয় যে, পশ্চিমাদের হাতে বাঙালির নাগরিক অধিকার শিক্ষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জাতিগত পরিচয় কোনোটাই নিরাপদ নয়। মহান ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল মতিন, গাজিউল হকসহ অনেকে সেই আন্দোলনে বাঙালিকে পথ দেখিয়েছিলেন।

কিন্তু বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে পশ্চিমা জাতিসত্তার যে বিরোধ, সেই বিরোধের মর্মকথা যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিকশিত হতে থাকে। অন্য নেতারা শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে শোষিত জনগোষ্ঠীর মূল দ্বন্দ্বটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন সংগ্রামে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছিল। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গঠিত হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’।

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ৬ দফা। এই ৬ দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ যৌথভাবে দেশব্যাপী আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। এরই পাশাপাশি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি, মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) স্বকীয় ধারায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হয়।

পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার লাভ করায় সব রাজনৈতিক দল রাজনৈতিকভাবে কাছাকাছি অবস্থানে আসে। ১৯৬৮ সালে নভেম্বরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন তীব্রতর রূপ লাভ করে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী জনতা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা মূলত ছিল বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিচ্ছায়া।

 

১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ১১ দফার ভিত্তিতে গঠিত হয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। ডাকসুও এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা ও ছাত্রসমাজের ১১ দফার মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য ছিল না। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ও ডাকসুর সমন্বয়ে এই প্লাটফর্ম গঠিত হয়। ডাকসু ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে শহীদ কিশোর মতিউরের আত্মদানের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় মহান গণঅভ্যুত্থান ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯।

গণঅভ্যুত্থান দমন করতে ব্যর্থ হয়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাতেও জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার ঠেকানো যায়নি। এই গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই মুক্ত হন কারাবন্দী আগরতলা মামলার (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব) আসামি শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যরা। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, পশ্চিমাদের ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা ও ষড়যন্ত্র বাঙালি জাতিকে অনিবার্যভাবে এক দফা অর্থাৎ বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে (স্বাধীনতার) কেন্দ্রীভূত হয়।

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই দিন থেকে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন ও ছাত্রসমাজের আপসহীন অবস্থান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে যা থেকে পিছিয়ে আসার আর কোনো পথ কারো জন্য খোলা ছিল না। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে অগ্রগ্রামী অংশটি জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা ও জয়বাংলা বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতার আন্দোলনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদন ক্রমেই এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ডাকসু ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারাই মূল ভূমিকা পালন করেন।

আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না যে, আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সমাজতন্ত্রকালের বিবর্তনে শোষণমুক্ত সমাজ এই কথার মধ্যে বিবর্তিত হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রের ধর্ম। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত কোনো কোনো মহল

বিগত এক দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে, অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা উল্লেখ করবার মতো। এর অনেকটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আবার এর অনেকটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের মহাসোপানে পা দিয়েছি। আমরা দরিদ্র দেশসমূহের মাত্রা কাটিয়ে এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি এবং সেটা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। আমাদের সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে যেসব উন্নয়নগুলো হয়েছে সেক্ষেত্রে মৃত্যুর হার কমানো, শিক্ষার প্রসার, যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ সমুদ্র বিজয়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রেরণ, মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে বিবেচনা করা যায় যে আমরা একটা সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা

কিন্তু আমাদের কথাটি ভুলে গেলে চলবে না উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে তার সাথে গণোতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করতে হলে সংবিধানসম্মত যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেই সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে আমাদের আরও সুদৃঢ় করতে হবে। যেমন আমাদের বিচার ব্যবস্থায় কখনও কখনও দুর্বলতা পরীলক্ষিত হয়, আমাদের নির্বাচন কমিশন নানা কারণেই সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে না, মানবাধিকার কমিশন আমাদের একটি আছে বটে কিন্তু সেই কমিশন মানবাধিকার রক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ সবসময় নিতে পারে না, আমাদের একটি তথ্য কমিশন রয়েছে যেখানে মানুষ যেকোন তথ্য পেতে পারে কিন্তু সেখানেও আমাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও স্বাধীনতা দেয়া দরকার।

যদিও সাংবিধানিকভাবে এটা স্বাধীন কিন্তু কার্যকলাপে মনে হয় যে তারা দেশের যেসকল বড় বড় আলোচিত দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে তারা খুব একটা তৎপর বলে মনে হয়না। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর, ১৪ দলের বিজয়ের পর বা মহাজোটের বিজয়ের পর দেখা যাচ্ছে একসময়ে জামায়াতের যে ধারা ছিলো সে ধারাটা জনগণ একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেছে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের বা মৌলবাদী রাজনীতিকে মোকাবেলা করতে হলে আমাদের একটা আদর্শিক ভিত্তি দরকার। সেই আদর্শিক ভিত্তিটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সে চেতনা অনুযায়ীই আমাদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহকে গড়ে তুলতে হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে মানুষের মাঝে একটা আস্থা ফিরে এসেছে যে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এটা চলমান থাকবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, মাদক এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন এবং উনার সহযোগী হিসেবে যাদেরকে তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান করে দিয়েছেন সকলে মিলে এই দেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উপর আমাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, বিচার বিভাগের উপর আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, সংসদকে কার্যকরী রাখতে হবে সর্বোপরি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যবার ক্ষেত্রে আমাদের যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোকে সুদৃঢ় করে ও যেগুলোতে দুর্বলতা আছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে।

একটি জিনিস এখানে বলতে হয়, অতীতের সূত্র ধরে যদি বলি তবে নিরঙ্কুশ বিজয় যেমন বিজয়, তেমন সমস্যাও তৈরি করে। সেক্ষেত্রে অনেক দলীয় নেতাকর্মী প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরণের অতি উৎসাহী হয়ে অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। এ অরাজক পরিস্থিতিগুলো যাতে দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে ও অতীতের যে সমস্যাগুলো সেগুলো যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, জঙ্গীবাদ যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে মাদক যেভাবে সহজলভ্য বা মাদক দিয়ে যে আমাদের দেশ সয়লাভ হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে যেভাবেই হোক সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে।

কোনো সূচকেই বাংলাদেশ আজ পিছিয়ে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপলাভ করছে। শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীমুক্তি, সামাজিক ন্যায় বিচার, দারিদ্র বিমোচন, মুক্তিযোদ্ধের কল্যাণকর বাস্তবমুখী পদক্ষেপ, গ্রামীণ অবকাঠামো যুগোপযোগী করাসহ সমস্ত ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।

পাশাপাশি আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, এর মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে যেসব রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো তাদেরকে বাংলাদেশের দিকে পাঠানো হচ্ছে। আবার মিয়ানমারেও নতুন করে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ইতোমধ্যেই অং সাং সু চি নির্দেশ দিয়েছেন রাখাইনে আক্রমণ পরিচালনা করবার জন্য। সেক্ষেত্রে আরও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আমাদের দেশে আসতে পারে।

এমনিতেই আমরা একটি জনবহুল দেশ এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। যদিও বিশ্বের সমস্ত দেশ এবং জাতিসংঘ এই রোহিঙ্গাদের আমাদের এখানে আশ্রয় দেয়ার জন্য আমাদের প্রশংসা করে এবং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো একটি দেশের পক্ষে এভাবে বছরের পর বছর এই বোঝা বহন করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে যতদ্রুত রোহিঙ্গাদের যথাযথভাবে প্রত্যাবর্তন করানো যায় তা আমাদের কূটনৈতিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করবে, সেদিকটাতে আরও মনযোগী হওয়া দরকার।

সমস্ত চ্যালেঞ্জ যেমন- উন্নয়ন, সুশাসন, গণতন্ত্র, মাদক জঙ্গিবাদের মতো চ্যালেঞ্জগুলো এবং পররাষ্ট্র নীতিতে যে ভারসাম্য রক্ষা করার নীতিগুলোতে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে আমরা যাতে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ যাকে এসময়ে আমরা বলি একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের দিকে যেতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধের যে অভিষ্ট লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ২৪ জানুয়ারি মহান গণ অভ্যুত্থ্যান দিবস সে গণঅভ্যুত্থানের ধারা প্রতিষ্ঠা পাক তাই কাম্য।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক মেহনতি মানুষের।

লেখক- শফী আহমেদ, নব্বই’র গণ-অভ্যুত্থ্যানের অন্যতম নেতা ও আওয়ামীগ নেতা।