ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


দরখাস্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ইচ্ছে নেই


৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৩

ছবি সংগৃহীত

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়। এর আগে এরশাদ এবং বিএনপি তাদের মতো তালিকা তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের এই ঘোষণার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।

একদিন শ্যামলী আমাকে বললো, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করছে, তুমি দরখাস্ত করেছ? আমি বললাম, দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছি। এখন দরখাস্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ইচ্ছে নেই।

শ্যামলী পাল্টা যুক্তি দিয়ে বললো, তোমার কথা ঠিক। কিন্তু আজ থেকে দুইশ বছর পর, যখন আমরা কেউ থাকবো না। তখন তালিকার ভলিয়মে ছোট্ট অক্ষরে তোমার নামটি দেখে তোমার উত্তরাধিকাররা গর্ব করবে। তারা এই বলে উচ্ছ্বাস করবে, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষের অবদান আছে।

শ্যামলীর এই যুক্তিটা আমার মনে ধরলো। পরদিন মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু আলী আসগারকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গেলাম। সেইসময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। তাঁকে গিয়ে বললাম, ভাই, আমরাওতো কিনার দিয়ে ছিলাম। আপনারা নতুন করে তালিকা করতে চাচ্ছেন, এখন আমাদের কি করতে হবে?
উনি জানতে চাইলেন, আমরা ট্রেনিং করেছি কোথায়?
বললাম, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরায়।

উনি তখন বললেন, ভারত থেকে ৭৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা উদ্ধার করা গেছে। সেখানে যদি আপনাদের নাম থেকে থাকে তাহলে আর কিছুই করতে হবে না। পাঁচ তলায় আমাদের লাইব্রেরীতে ভলিয়ম গুলো আছে। দেখে আসুন। আমি আর বন্ধু আসগার পাঁচ তলায় লাইব্রেরীতে গিয়ে ভলিয়ম খুঁজে আমাদের নাম পেয়ে গেলাম। সে কথা আহাদ চৌধুরীকে জানালে তিনি একটি ফরম দিয়ে বললেন, এটা ফিলাপ করে দিয়ে যান। মাস খানেক পরে এসে সার্টিফিকেট নিয়ে যাবেন।

মাস খানেক পরে সার্টিফিকেট পেলাম। এক পাশে শেখ হাসিনার স্বাক্ষর আরেক পাশে আহাদ চৌধুরীর স্বাক্ষর। সার্টিফিকেট এনে শ্যামলীর হাতে দিয়ে বললাম, এটা শুধু সংরক্ষণের জন্য। পরিবারের সদস্যদের দেখার জন্য। এই সার্টিফিকেট দিয়ে কোন স্বার্থ আদায়ের ধান্ধা করা যাবে না।

হে শাহবাগের কোটা আনন্দলের তরুণরা, তোমরা কিন্তু যুদ্ধ করনি। যুদ্ধ করেছি আমরা অর্থাৎ তোমাদের পিতারা। সেদিন কোন কিছু পাওয়ার আশায় আমরা যুদ্ধ করিনি। মাতৃভূমির স্বাধীনতাই ছিল আমাদের যুদ্ধ জয়য়ের মন্ত্র। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এই কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কোটা ব্যবস্থার আর কোন কার্যকারিতা ছিল না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধে প্রদান শুরু করেন।

শুরু হয় কোটা বিরোধী আন্দোলন। সে ইতিহাস সবার জানা। শেখ হাসিনা তাদের দাবী মেনে নেন। আমরাও তাই চেয়েছি। আমি সেই সময় কালের কণ্ঠে একটি কলাম লিখে বলেছিলাম, সরকার যদি আমাদের কোন সুযোগ সুবিধে দিতে চায় তা যেন নির্ভেজাল হয়। অন্যের অধিকার হরণ করে আমরা কোন সুবিধে নিতে চাই না।

তোমারা কি জানো, তোমাদের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কত আজেবাজে কথা বলছে লোকজন? তোমরা আমাদের ভিক্ষুকের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছ। এ অধিকার তোমাদের আমরা দেইনি। অতীতের সব সরকার আমাদের নিয়ে তামাশা করেছে। আমাদের বলা হতো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। অথচ শ্রেষ্ঠত্বর কোন নমুনা আমরা দেখিনি। সেই তামাশার সঙ্গে তোমরাও যোগ দিয়ে আমাদের নতুন করে অপদস্থ করবে এটা আমরা আশা করিনি। তোমাদের এই আন্দোলনে তোমাদের সঙ্গে কে আছে? কেউ নেই। শূন্য ময়দানে অসহায় ভাবে তোমরা বসে আছ। এ দৃশ্য ভয়ংকর পীড়া দায়ক। লজ্জার।

আমি এবং আমরা চাই, এই মুহূর্তে আন্দোলন বন্ধ করে তোমরা ঘরে ফিরে যাও। বীরের সন্তান তোমরা। বীরের মতোই তোমরা যুদ্ধ করবে। অন্যের দাসত্ব করার জন্য তোমাদের জন্ম হয়নি। তোমরা নেতৃত্ব দেবে দেশ পরিচালনার। তোমাদের কল্যাণ হোক।

মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

আরকেএইচ