ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


রেডিও ভূমির পথচলায়- বিশ্বাসে বাংলাদেশ


১ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:১৪

আমরা যারা গাড়িতে, মোবাইলে এফ.এম রেডিও টিউন করি বা ফেইসবুক লাইভে এফ.এম রেডিও অনুষ্ঠানমালা শোনার অভ্যেস আছে, তারা প্রায়ই শুনতে পান কোন এক নারী কিংবা পুরুষ কণ্ঠ প্রমিত উচ্চারণে বাংলায় খুব সুন্দর ও সাবলিলভাবে বলছে- বন্ধুরা শুনছেন রেডিও ভূমি এফ.এম ৯২.৮, বিশ্বাসে বাংলাদেশ। বাংলা গান কিম্বা ক্রিকেট/ফুটবল যেকোন খেলার বাংলা ধারাভাষ্য শুনতে যুক্ত থাকুন আমাদের সঙ্গে। ‘হৃদয়ে লাল সবুজের সুর’ বলেই বাজিয়ে দিল সুন্দর একটা হারানো দিনের বাংলা গা –যা শুনে আপনি হয়তো মুহুর্তেই খুঁজে পেলেন আপনার হারানো যৌবন কিংবা কৈশোরকে। এমনি করেই রেডিও ভূমি রাতদিন ২৪ ঘন্টা সাতদিন নগরবাসীকে শুধুমাত্র বাংলায় ইনফোটেইমেন্ট দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এই কাজটা করছেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী উপস্থাপক যাদের হালের নাম আরজে।

বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যস্থাপনায় এফ.এম রেডিও’র পথচলা শুরু হয়েছিল ২০০৬-২০০৭ সালে। এরপর ২০১২-২০১৩ সালে আরো বেশকিছু এফ.এম রেডিও স্টেশন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এতটুকু একটা শহরে আর কত রেডিও স্টেশন চলবে? এনিয়ে অনেকের নানারকম মতামত ছিল কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঠিকই রেডিওগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং যথেষ্ট শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছে।

রেডিও ভূমি এফ.এম ৯২.৮ তাদের প্রথম যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। সেদিনের সেই ছোট শিশু হামাগুড়ি দিতে দিতে হাঁটতে শিখেছে, আজ সাতে পা রাখছে। আজ রেডিও ভূমির জন্মদিন–অফুরান শুভেচ্ছা আর শুভকামনা তোমার জন্য।

রেডিও ভূমির স্টেশন চিফ হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন বিশিষ্ট অভিনেতা শামস সুমন। একঝাঁক তরুণ, মেধাবী এবং প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গুটি গুটি পায়ে। মনে হয় এইতো সেদিন, কিন্তু সেটাই ছয় পেরিয়ে আজ সাতে পৌঁছে গেল। শুরুর গল্পটা মোটেও সহজ ছিলনা। বাজারে এতগুলো এফ.এম স্টেশন চালু আছে তথাপিও মানুষ কেন রেডিও ভূমি টিউন করবে। অনুষ্ঠানমালা সাজাব কি দিয়ে? ততোদিনে দেশের এফ.এম রেডিও অঙ্গনে একধরণের সুপারফাস্ট বাংলিশ উপস্থাপনা জেঁকে বসেছে। যেহেতু রেডিও ভূমির ট্যাগ লাইন ‘বিশ্বাসে বাংলাদেশ’।

তাই আমাদের দেশজ শিল্প-সাংস্কৃতির যে মুল ধারা আছে, সেখানেই থিতু হবার চেষ্টা করে রেডিও ভূমি। প্রমিত বাংলায় শুধুমাত্র বাংলা গান নিয়েই এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে থাকে তারা। এক্ষেত্রে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, লোক সংগীত, হারানো দিনের গান, চলচ্চিত্রের গান, আধুনিক গান, ব্যান্ড সংগীত ইত্যাদি সবধরণের বাংলা গানই তাদের অনুষ্ঠানমালায় ঠাঁই পেয়েছে। শুরুর দিকে সংশ্লিষ্টজনেরা ভাবতেন এখনকার প্রজন্ম হিন্দি বা ইংলিশ মিউজিক নিয়ে পড়ে আছে, তাদেরকে কি বাংলা গান খাওয়ানো যাবে? কিন্তু স্টেশন চিফের ভাবনায় ছিল, এ প্রজন্ম মানে শুধু টিনএজাররাই নন, বরং বর্তমান সময়ের সব শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ মিলেই এই প্রজন্ম। আর বিশ্বাস করতেন বাংলা গান এবং বাঙালি সংস্কৃতি অত্যন্ত সম্মৃদ্ধ। তাই যা করার বাংলা গান দিয়েই করতে হবে।

উপস্থাপনে যতটা সম্ভব বৈচিত্র্য এনে, একে শ্রোতাদের নিকট আরো আকৃষ্ট করে তোলার তীব্র বাসনা এগিয়ে নেয় রেডিও ভূমিকে। যাত্রা শুরুর কিছুদিন পর থেকেই ভাল সাড়া পেতে শুরু করেন। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রেডিও ভূমিকে।

২০১৩ সালে কিজানি কি ভেবে, হঠাৎ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচগুলো দিয়ে ক্রিকেটের বাংলা ধারাভাষ্য শুরু করে রেডিও ভূমি। শুরুর দিকে স্টেশনের কভারেজ এরিয়া সীমিত থাকায় শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুব বেশী জানার সুযোগ হয়নি। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশ-বিদেশে সর্বত্র পৌঁছে যায় রেডিও ভূমির কভারেজ। এখন প্রথাগত এফ.এম রেডিও’র পাশাপাশি অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং, ফেইসবুক লাইভ (অডিও/ভিডিও) এবং মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমেও শুনছে অগনিত শ্রোতা। ক্রমাগত সর্বত্র রেডিও ভূমির বাংলা ধারাভাষ্য শ্রোতানন্দিত হতে শুরু করে। একজন ক্ষুদ্র ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে অনুপ্রাণিত হই, যখন দেখি- ঢাকা শহরের কর্মজীবী মানুষগুলো কর্মস্থলে আসা-যা্ওয়ার পথে টিউন করে শুনতে থাকেন খেলার ধারাভাষ্য, তাদের অধিকাংশের কাছেই শোনা যায়, আছেন তারা রেডিও ভূমির সাথে।

রেডিও ভূমির ধারাভাষ্যে খুঁজে পাবেন-সতস্ফুর্ত, সাবলিল ও সুন্দর উপস্থাপনা, সম্মৃদ্ধ শব্দ ভান্ডার থেকে সঠিকসময়ে সঠিক শব্দচয়ন, গতিময় ও ছান্দিক ধারাবর্ণনা, খেলার সাথে তাল মিলিয়ে উত্তেজনা ধারণ করা, ভাষ্যকারদের উপস্থাপনায় নিজস্ব স্বকিয়তা, প্রমিত উচ্চারণ, সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া/ইভেন্টের প্রায়োগিক উপমা, উদাহরণ ও বিশ্লেষণ, সময়মতো খেলার দরকারি রেকর্ডস/পরিসংখ্যান উপস্থাপন, টেকনিক্যাল টার্মসমূহের সঠিক প্রয়োগ, ধারাভাষ্যে চমৎকার মডিউলেশন। এইসব বৈশিষ্ট্যগুলোর নিয়মিত চর্চা এবং প্রয়োগ রেডিও ভূমির ধারাভাষ্যকে অন্যদের চেয়ে খুব সহজেই আলাদা করেছে।

‘গানে গানে সকাল’ দিয়ে দিবসের শুরু, এরপর বেলা বাড়লে ‘ঘরে বাইরে’, দিবসের মধ্যভাগে ‘গানের দুপুর’,পড়ন্ত বেলায় ‘সিনে সুর’, বিকেলে ‘রোড নং ৯২/৮’ আর ‘জেব্রা ক্রসিং’, সন্ধ্যা রাতে অনুরোধের আসর ‘এক কাপ গানে’ চলতে থাকে শ্রোতাদের আড্ডা। রাত ১০ টায় শুরু হয়ে যায় ‘খেলার আপডেট/ক্রিকেট আলাপ’। দেশী/বিদেশী সব খেলার সর্বশেষ খবর আর তার বিশ্লেষণ নিয়ে চলতে থাকে নতুন আড্ডা। আড্ডাটা জমে উঠতেই রাত ১১ টায় শুরু হয়ে যায় ‘এই রাতে’ তা চলতে থাকে মধ্যরাত অবধি। রেডিও ভূমির প্রাত্যহিক এই আয়োজনগুলো আপনাকে সুর-ছন্দ আর কথামালার আবহে আবিষ্ট করে রাখবে সারাটা দিন। বিভিন্ন শিরোনামের এই শোগুলোতে গান বাজানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট গানের কলাকুশলীদের খুব যত্ন সহকারে তুলে ধরা হয়। গান আর কথার মাঝে সামাজিক সচেতনতামূলক নানাবিধ বিষয় উঠে আসে উপস্থাপকদের উচ্চারণে।

রুচিশীল সংস্কৃতিমনা শ্রোতা যারা একবার টিউন করেন তারা কিন্তু আর ফিরতে চাননা। বাংলা গান আর খেলার ধারাভাষ্যকে উপজীব্য করে একটি রেডিও স্টেশন চলতে পারে, তার নগদ উদাহরণ রেডিও ভূমি। রেডিও ভূমির বিশ্বাসে যে বাংলাদেশ! তাইতো তারা এগিয়ে চলছে- দৃপ্ত পদক্ষেপে। রেডিও ভূমির এই অন্তহীন পথচলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই প্রানঢালা অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।

এমএ