ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২


সংসদে যেতে চান উপজেলা চেয়ারম্যানরা


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৯

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে অক্টোবরেই। এখন রাজনীতির আকাশে নির্বাচনকে ঘিরে নানা রঙয়ের খেলা। ক্ষণে ক্ষণে সে রঙ বদলাচ্ছে। ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার কথা বলে আসলেও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বলছেন।

চলমান অনিশ্চয়তার রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেই জোর প্রচারণা চলছে ভোটের মাঠে। ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই প্রচার-প্রচারণায় মাঠ দখলে রেখেছে। উত্তরের জেলাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও প্রচারে রয়েছে। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে সন্দিহান বিএনপি নানা কৌশলে নির্বাচনী গণসংযোগ করছে। আর দৃশ্যত জামায়াত মাঠছাড়া থাকলেও গোপনে গোপনে চালাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারনা।

জাতীয় নির্বাচন এখন রাজনীতির কেন্দ্রে। আর উপজেলা চেয়ারম্যানরাও সে কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন। এবার উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনেকেই দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। বিশেষ করে অন্তত শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে আলোচনা হচ্ছে। যেসব উপজেলা চেয়ারম্যানেরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের নির্বাচনী এলাকা রঙিন পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে দিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় মহড়া দিচ্ছেন তারা। নিয়মিত নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদ। স্থানীয় এমপির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে কোথাও কোথাও প্রকাশ্যে প্রচার চালাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এছাড়া দলীয় আদেশ অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তারাও দলের করুণা পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

শুধু ক্ষমতাশীন দল নয় বিএনপি-জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যানরাও নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। ২০০৮ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি-জামায়াত থেকে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন এমপি হতে চাচ্ছেন। এই সময়ে নির্বাচনী বাতাসে দোলাচালে থাকা বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের মধ্যে স্থানীয় সরকারে বিজয়ীরাই খানিক মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে তারা এই বাড়তি সুবিধাই কাজে লাগাতে চান।

উত্তরের জেলা নীলফামারী-৪ আসনে সৈয়দপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমেনিন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই নৌকা প্রতীকে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে ভোট চাচ্ছেন মোখছেদুল মোমেনিন। অবশ্য আসনটিতে নৌকা প্রতীকে আরও কয়েকজন ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন মোখছেদুল মোমেনিন। তিনি বলেন, আমি এলাকার মানুষের কাছে পরীক্ষিত। তৃণমূলের রাজনীতি থেকে আমি ভীত গড়েছি। সংসদে যেতে পারলে এলাকার আরও উন্নয়ন করতে পারবো। দলের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা রেখেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবেক ছাত্রনেতা রুহুল আমিনের পারিবারিক পরিচয়ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও লালমনিরহাট-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তিনি। পরে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন পরপর দু’বার নির্বাচিত এই উপজেলা চেয়ারম্যান।

রুহুল আমিন বলেন, আমি সরকারের উন্নয়নের সারথী। পাটগ্রামকে আওয়ামী লীগের হয়ে ঢেলে সাজিয়েছি। এখানকার ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের সকল প্রতিনিধির সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক আমার। বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা। তার সঙ্গেই এলাকার উন্নয়নে শরিক হয়েছি।

কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে রাজনীতি করি না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, নিজের যোগ্যতা বলে মানুষের কাছাকাছি যেতে পেরেছি। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সীমানা বাড়াতে চাই। আমার ব্যাপারে কেন্দ্রও অবগত। মনোনয়ন অবশ্যই চাইবো। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ আলী সংসদ নির্বাচন করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছেন । উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হন তিনি।

এই জামায়াত নেতা বলেন, আমি আমার প্রচারণা শতভাগ চালিয়ে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবো। দল বা জোট যদি মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচনে যাব এবং নির্বাচনে জয় লাভ করব বলে বিশ্বাস রাখি।

আইএমটি