ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা


২০ মার্চ ২০১৯ ২২:৩২

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাসচাপায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। গত বছরের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে নজিরবিহীন যে আন্দোলন হয়েছিল এবারের আন্দোলনকেও এর ধারাবাহিকতা বলছে তারা।

মঙ্গলবার সকালে নদ্দায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার। এ সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তার সহপাঠীরা। দিনভর চলে বিক্ষোভ। সন্ধ্যায় আন্দোলন স্থগিত করলেও বুধবার সকাল থেকে আবার রাস্তায় নামার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার নদ্দায় বসুন্ধরা গেইটে শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছে। তারা ‘জাস্টিস ফর আবরার’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আর কত রক্ত ঝরতে হবে রাস্তায়’ এধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। তাদের অবস্থানের কারণে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুই পাশে দেখা দিয়েছে যানজট।

বিইউপির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), সিদ্ধেশ্বরী কলেজ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

এদিকে রাজধানীর ফার্মগেটে, পূরাণ ঢাকা, উত্তরা, ধানমন্ডি সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারাও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিইউপি শিক্ষার্থী মায়েশা নূর সাংবাদিকদের কাছে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার থেকে আমাদের আন্দোলন চলবে। সেদিন সকাল ৮টা থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বর্জন করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন।’

মায়েশা বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন গত বছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ধাবাহিকতা। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আমাদের এই আন্দোলনে গত বছরের মতো কোনো হামলা ও রক্তাক্ত চেহারা দেখতে চাই না। আমরা পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তা চাই। আমাদের আন্দোলনের সময় আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মায়েশা নূর বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আট দফা দাবি দিয়েছি। এটা গণমাধ্যমে চলে এসেছে। আমাদের এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন না। আমাদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক কোনো দল বা ব্যক্তিকে গ্রহণ করবো না। সবাই নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেবেন। আমরা আমাদের অভিভাবকদের এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করছি।’

আট দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি–এ কথা উল্লেখ করে মায়েশা নূর বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি বলতে বাসচালকের ফাঁসি চেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘গতবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জাবালে নূরের রোড পারমিট বাতিল করা হয়েছিল বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু জাবালে নূর এখনো রাস্তায় চলছে। আমরা জাবালে নূর ও সুপ্রভাত বাস রাস্তায় দেখতে চাই না।’


শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি

১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিমাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।

২. আটক হওয়া চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. আজ থেকেই ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে।

৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডার পাস, স্পিড ব্রেকার ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়কে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনী করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ছাত্রদের হাফপাস অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।