ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


আমার মেয়েরে যে মারছে,তার বাঁচার অধিকার নাই


১১ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:৫৯

শুধু মেয়েটারে ভালোমতন মানুষ করব বলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজ করি। আমার মেয়ে দোলা– ডাক্তার হতে চায়ছিল। তাই ওর জন্য ব্যাংকে গত বছর একটা ডিপিএস খুলি। কিন্তু ওরা আমার ছো্ট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটারে মাইরা ফেলল এক মিনিটেই। গলায় ফাঁস দিয়ে মারছে। দোলা আর নুশরাতের দুই খুনি মোস্তফা আর আজিজুলের হাত দুইটা কুচি কুচি করে কাটুক। এক্ষুণি ওদের ফাঁসিতে ঝোলাক। আমার মেয়েরে যে এত কম সময়ে নিষ্ঠুরভাবে মারছে , তার এই দুনিয়ায় এত দিন বাঁচার অধিকার নাই। আমি ওদের দ্রুত ফাঁসি দেখতে চাই।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে মেয়ের খুনির দ্রুত ফাঁসির দাবি জানিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আর ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন দোলার (৫) মা পারভীন আক্তার।

কান্নায় ভেঙে পড়া পোশাককর্মী পারভীন বলেন, শুধু মেয়েটারে ভালোমতন মানুষ করব বলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজ করি। আমার মেয়ে দোলা– ডাক্তার হতে চায়ছিল। তাই ওর জন্য ব্যাংকে গত বছর একটা ডিপিএস খুলি। কিন্তু ওরা আমার ছো্ট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটারে মাইরা ফেলল এক মিনিটেই। গলায় ফাঁস দিয়ে মারছে। দোলা আর নুশরাতের দুই খুনি মোস্তফা আর আজিজুলের হাত দুইটা কুচি কুচি করে কাটুক। এক্ষুণি ওদের ফাঁসিতে ঝোলাক। আমার মেয়েরে যে এত কম সময়ে নিষ্ঠুরভাবে মারছে , তার এই দুনিয়ায় এত দিন বাঁচার অধিকার নাই। আমি ওদের দ্রুত ফাঁসি দেখতে চাই।

গণমাধ্যমকর্মীরা ঘিরে ধরে আছেন পারভীনকে, আর তিনি বলে চলছেন আমি ফারিয়া আক্তার দোলার মা। মেয়েটা নাই, আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই। আমি বিচার চাই। আমার মেয়েরে যে মারছে, সে এই পৃথিবীতে একদিনও বেঁচে থাকুক, দেখতে চাই না। আমাদের সন্তানরা কি ঘরের সামনেও খেলতে পারবে না? এ কেমন সমাজ, এতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে না বাচ্চাদের? কোনাপাড়ায় ১৯ বছর ধরে আছি। কখনও এখানে এমন ঘটনা ঘটেনি।

পারভীনের মা হোসনে আরা বলেন, ওর মা কাজে বের হলে আমিই দোলাকে দেখাশুনা করতাম। তিন মাস বয়স থেকেই ওরে আমি দেখাশুনা করি। ওইদিন নুসরাত ডাকতে আসছিল। আমি বললাম, নানু গোসল করে যাও। দোলা বলে, ‘নানু, একমিনিট খেলে আসি।’ শুধু দুধটা গরম করছি। তারপরই নুসরাতের বাসায় গিয়ে খোঁজ করি। ওরা সবসময় একসাথে খেলত, এ বাড়ি নয় ও বাড়ি। আমার নানুরে চোখের আড়াল করতাম না। সেদিন কয়েক মিনিটের মধ্যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, আমার নানুরে মাইরা ফেলল।

শোকে স্তব্ধ দোলার বাবা ফরিদুল ইসলাম কান্না চেপে বলেন, টানা তিন দিন ধরে কিছুই মুখে তোলেনি পারভীন, কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। কী করে বাচ্চাটারে ছাড়া বাঁচি আমরা, আমাদের একমাত্র মেয়ে! ভালোমতন মানুষ করব বলে আর বাচ্চাকাচ্চা নেব না সিদ্ধান্ত নিয়েছেলাম।

ফরিদ বলেন, গতকাল (বুধবার) আমার বাচ্চাটার জন্মদিন ছিল। মেয়েটা বলেছিল আব্বু, আমাকে একটা বড় কেক এনে দিও, আর আম্মু একটা বড় পুতুল কিনে দিও। দুজনে চাকরি করে বলে এই শুক্রবার মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম। নতুন স্কুল ড্রেস বানাতে দিছি, নতুন ব্যাগেরও আবদার করেছিল। শুক্রবার সব কিনে দেবো বলেছিলাম। সেই স্কুল ড্রেস-নতুন ব্যাগ দিয়ে কী করব?

দোলার মা-বাবা যখন এসব কথা বলছিলেন, এলাকাবাসীর মানববন্ধন থেকে তখন ছড়িয়ে পড়ছে স্লোগান হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসি চাই।

মানববন্ধনে যোগ দেওয়া ডেমরার কোনাপাড়ার এক ব্যাবসায়ী বলেন, আমরা সবাই নিজেদের ইচ্ছাতেই গত তিন দিন ধরে এলাকায় মানববন্ধন করছি। আর কখনও যেন এমন ঘটনা না ঘটে, কোনো শিশু যেন অনিরাপদ না থাকে।আমাদের দোলা-নুশরাতের হত্যাকারীরা যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে না যায়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।

দোলা-নুশরাতের আরেক প্রতিবেশী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছোট্ট বাচ্চা দুইটা সারাদিন চোখের সামনে ঘুরত, খেলত। ওদের মাইরা ফেলল এতো নিষ্ঠুরভাবে! ইয়াবা আসক্ত মোস্তফা আর আজিজুলের ফাঁসি চাই আমরা।

ছোট্ট দুই খেলার সাথী দোলা আর নুশরাতের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ডেমরার কোনাপাড়ার বাসিন্দাদের আয়োজিত মানববন্ধনে যোগ দেয় দুই শিশুর সহপাঠীসহ নানা বয়সী মানুষ। তাদের দাবি, তারা সন্তানদের জন্য নিরাপদ খেলার পরিবেশ চান। আর কোনো শিশু যেন ধর্ষণের শিকার না হয়, সেজন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রাতে ডেমরার শাহজালাল রোডের এসি গলির আবুল হোসেনের বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া গোলাম মোস্তফার কক্ষ থেকে শিশু নুশরাত (৪) ও দোলার (৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ডেমরা থানায় দুই শিশু নুশরাতের বাবা পলাশ ও দোলার বাবা ফরিদুল বাদী হয়ে মামলা করেন।

ওই দিনই প্রতিবেশী মোস্তাফা ও মোস্তফার খালাত ভাই আজিজুলকে হত্যাকারী সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলে চার বছরের নুশরাত জাহান ও ৫ বছরের ফারিয়া আক্তার দোলাকে নিজেদের ঘরে ডেকে নেয় প্রতিবেশি গোলাম মোস্তফা (২৮) ও তার ভাই আজিজুল বায়ানি (৩০)। পরে ধর্ষণের চেষ্টা করলে দুই শিশু চিৎকার করলে দোলাকে গলা টিপে হত্যা করে। এরপর নুশরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে তাদের মৃতদেহ রাখা হয় ঘরটির খাটের নিচে।

 

নতুনসময়/হারুন/ইমরান