শত শত জিডি আর ডজন ডজন মামলা নিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রতারক রব

শত শত জিডি আর ডজন ডজন মামলা নিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে প্রতারক ব্যবসায়ী হাজি আব্দুর রবের বিরুদ্ধে । হজ্ব এজেন্সির নামে প্রতারনা থেকে শুরু করে এমন কোন ব্যবসা নাই যা দিয়ে সে প্রতারনা করেনি। তার প্রতারনার খপ্পরে পড়ে নি:স্ব হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মামলা ও জিডি করেছেন। কিন্তু মামলায় গ্রেপ্তারের পর জেল হাজত থেকে বেরিয়ে এসে আবারো সেই প্রতারনা।
ভুক্তভোগীরা ভয়াঙ্কর এই প্রতারককে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
কে এই হাজি আব্দুর রব : বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার বাসিন্দা অভাবের তাড়নায় দীর্ঘদিন আগে ঢাকায় চলে আসেন। হাফেজ হওয়ার কারণে মানুষের সহানুভতিকে কাজে লাগিয়ে রাজধানীর ক্ষিলক্ষেত থানা এলাকার নামাপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেন। এখানে তিনি জাইগীর থাকতেন। থেকে নিজের পেটের ভাতঁ যোগাড় করতে লাগলেন। পথে পথে ডিম বিক্রি করা ছিল তার প্রথম ব্যবসা। পবিত্র কুরআনের হাফেজ, মসজিদে মক্তবে পড়ানোর ব্যবস্থাও করেন এলাকাবাসী। আস্তে আস্তে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়াতে শুরু করলেন , এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্ক হল। হাফেজ মানুষ হিসাবে সবাই তাকে বিশ্বাস করতে লাগলেন, হজ¦ কাফেলার সাথে কাজ শুরু করলেন। প্রতি বছর বেশ কিছু হাজী নিয়ে হজ করাতে লাগলেন। অভিযোগ রয়েছে নাইম হজ ট্রাভেলস এর মাধ্যমে হাফেজ আব্দুর রব প্রতি বছর যে সমস্ত হাজীদেরকে হজ করানোর জন্য পবিত্র মক্কা নগরীতে নিয়ে যান তাদের সাথে হজ¦ ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক ভাবে হাজীদের সাথে প্রতারনা করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ আব্দুর রব এভাবে হাজীদের সাথে প্রতারনা করতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রায় ৩০০ হাজীদের কাছ থেকে হজের সম্পূর্ন টাকা গ্রহন করে ও প্রতারনা করে তাদেরকে হজে¦ নিয়ে যাননি, যার কারনে পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা হজ করান। পরবর্তীতে ট্রাভেলস এর নামে মামলা হয়, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। পরে সে গ্রেপ্তারও হয়। এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে সমাজের মানুষ তাকে সমাজচ্যুত করেন। হাজীরা তার বাড়ী -ঘর ভাংচুর করে এবং সরকার তার হজ¦ কাফেলার লাইসেন্স বাতিল করেন।
হজ্বের এই প্রতারনার পরে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরুনোর পর রড সিমেন্টের দোকান ও বিস্কুট ফ্যাক্টরি করেন। এখানেও প্রতারনা করে পরবর্তীতে ” ড্রিম সিটি রিয়েল এস্টেট লি: ” নামক ডেভোলপার্স এর ব্যবসা শুরু করেন।
ফ্ল্যাট ব্যবসার লোমহর্ষক কাহিনী: ড্রিম সিটি রিয়েল এস্টেট লি:” নামক কথিত কোম্পানির নামে তার ফ্লাটের ব্যবসা শুরু হয়। ফ্ল্যাটের ব্যবসার শুরুতে প্রতারনার পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন জমির মালিকগনের সাথে চুক্তিপত্র দলিল করে নেন। ইতিমধ্যে ১টা ৯তলা এপার্টমেন্ট তৈরী করে বিক্রি করেন। অভিযোগ রয়েছে, ২৪ টা ফ্ল্যাট ৬০ জনের কাছে বিক্রি করে। অসংখ্য ব্যক্তি যারা সীমিত আয়ের মানুষ তাকে বিশ্বাস করে ফ্ল্যাট কিনেছে কিন্তু ফ্ল্যাট দখল দেয়নি, ও্র প্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেয়নি, আবার অনেকের প্লাট তৈরী না করেও তার নামে প্রতারনা করে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেন। এ কারণে এলাকার অনেক মানুষ জিডি ও মামলা দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সর্বসাধারনের চলাচলের প্রয়োজনে বাসিন্দাদের জমি থেকেই নির্মানকৃত নির্ধারিত রাস্তা নিজস্ব ক্ষমতাবলে বন্ধ করে রাখে। জমির মালিকগন এ্যাপার্টমেন্ট ফ্লাট বাড়ি নির্মান করার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নিয়ে বাড়ি নির্মান করতে গেলে হুমকি ধামকি দেন এমনকি প্রান নাশের ভয়ভীতি দেখান। জমির মালিকদের যাতায়াতের জন্য সিটি কর্পোরেশনের যে রাস্তা রয়েছে সে রাস্তায় হাফেজ আব্দুর রব প্রধান সড়কের মাথায় একটি গেইট ও সংযোগ সড়কের উপরে বিভিন্ন স্থাপনা করে বন্ধ করে রেখেছে। এমনকি রাস্তার উন্মুক্তকরার অজুহাতে এলাকার মানুষের কাছ থেকে প্রতারনা করে অনেকের নিকট হতে অবৈধভাবে বিভিন্ন পরিমানে অর্থ আদায় ও জমি জবরদখলও করেছে। পরবর্তীতে উক্ত রাস্তা ব্যবহারের জন্য বিবাদী আব্দুর রব এর সাথে ভুক্তভোগীর একটি চুক্তিপত্র হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য ২০ ফুট প্রসস্ত রাস্তা নির্মান করার জন্য নিমিত্তে বিগত ২৮-০৯-২০১৬ইং, ২৮-০৯-২০১৬ইং ও ৩১-১০-২০১৬ইং তারিখে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) ৩০০,০০০ (লক্ষ) টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে প্রদান অথচ আজ পর্যন্ত উক্ত রাস্তা তিনি একান্ত নিজের দখলে রেখেছেন, তথা রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছেন।উক্ত বিবাদী আমাদের নিকট হতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ২১,০০,০০০/- (একুশ লক্ষ) টাকা গ্রহণ করে রাস্তা নির্মান না করে রাস্তার উপর পাকা দেয়াল নির্মান করে সর্বসাধারনের চলাচলের পথ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার পায়তারা করছে এবং জমি হতে উচ্ছেদ করে ছাড়বে এবং রাস্তা নির্মান করার জন্য দেয়া টাকা ফেরত চাইলে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে অপমান খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদান করে আসছে।
জানা যায়, আব্দুর রব বর্তমানে বিভিন্ন জনের আনুমানিক ২ বিঘা জমিতে কোন প্রকার কনস্ট্রাকশনের কাজ ডেভেলপ করতে বাধা দিচ্ছে, এমনকি রাজউকের প্ল্যান পাশ করা রাস্তা ও দখল করে টিন সেট দিয়ে ভাড়া দিয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২০ ফুট রাস্তা ও ডেভোলপ বাবদ ২১ লক্ষ টাকা প্রতারনা ও হুমকি ধামকি দেখিয়ে নিয়েছেন।এমনকি জমির আশে পাশে আসলে জীবন নাশের হুমকি দেন। মোহাম্মদ আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা জোর পূর্বক , ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে আদায় করেন। যার কারনে জনাব আবুল হোসেন এক শোকে শোকাহত ও মর্মাহত হয়ে এক পর্যায়ে মারা যান। অপরাধের সীমা যখন ছাড়িয়ে যেতে লাগলে তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের স্মরনাপন্ন হলে তারাও মিমাংসা করতে ব্যর্থ হন। এমনকি তাদের নামেও মামলা করে হাজী আবদুর রব।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহেরগং ও অণ্যান্যদের নামে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিলে কোট সে মামলা আমলে না নিয়ে খারিজ করে দেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, হাজী আব্দুর রব পেশাগত ভাবে একজন মামলা বাজ প্রতারক, জঙ্গীবাদ ও অনৈতিক অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত। হাজী আব্দুর রব তার” ড্রীম সিটি রিয়েল এস্টেট লি:” এর ২৪ টি ফ্ল্যাট ৬০ জনের নিকট বিক্রি করেছে , একটি ফ্ল্যাট ২/৩ জনের কাছে বিক্রি করে এবং এক জনের নামে রেজিস্ট্রি ফ্ল্যাট অন্য জনের কাছে বিক্রি। এভাবে অসংখ্য প্রতারনা ও মামলা নিয়ে থানায় গেলে থানা তা আমলে নেয়না। এলাকার প্রতিটি মানুষ হাজী আব্দুর রব সম্পর্কে কু ধারনা পোষন করে এবং তার পরিবারের কারও সাথে এলাকার মানুষের সু-সম্পর্ক নেই। হাজী আব্দুর রব এলাকার প্রভাবশালী , সন্ত্রাসী ও বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় এখন এলাকায় অবস্থান করছে। ধর্ম ব্যবসায়ী , ভূমি দস্যু ও প্রতারক একাধিক মামলা থাকার পরও হাজী আব্দুর রব প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় তারা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এসব অপকর্মের কারণে তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ক্ষিলক্ষেত থানায় ৪০ টিরও বেশি জিডিও মামলা রয়েছে। আরও অন্যান্য এলাকায় প্রায় শতাধিক জিডিও মামলা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে হাজি আব্দুর রবের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও সরাসরি যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলবেন বলে জানান।