আজ বাংলার পতাকা উড়েছিল যে সব জেলায়

আজ বিজয়ের মাসের ৭ ডিসেম্বর।
রক্তঝরা একাত্তরের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন কয়েকটি জেলায়।
অনেক রক্তের বিনিয়ে হানাদারমুক্ত হয়েছিল নোয়াখালী, মাগুরা, গাইবান্ধা, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, জামালপুরের ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকা।
আজকের এই দিনটি উপলক্ষে এসব জেলা ও উপজেলা সদরে র্যালি ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
নোয়াখালী:
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি সেনা বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল নোয়াখালী।
এদিন প্রত্যুষে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের নেতৃত্বে জেলা শহর মাইজদী আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
একযোগে তারা তিনটি রাজাকার ক্যাম্প দখল করেন।
আর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পিটিআইর ট্রেনিং সেন্টার থেকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা।
গাইবান্ধা :
আজ গাইবান্ধা পাক হানাদারমুক্ত দিবস ।
১৯৭১ সালের এই দিনে কোম্পানি কমান্ডার মাহবুব এলাহী রঞ্জু বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসীঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে।
তাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।
এর আগের দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশনের উত্তর পাশে বোমা ফেলে।
ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
পরে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
মাগুরা :
মাগুরা মুক্ত দিবস আজ।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে মাগুরা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা গোটা শহরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
উড়তে থাকে স্বাধীন দেশের মানচিত্রখচিত বিজয় পতাকা।
দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনাসভা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোমবাতি প্রজ্বালন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাতক্ষীরা :
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়।
৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় মেতে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।
থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তিপাগল আপামর জনতা।
নালিতাবাড়ী :
শেরপুরের নালিতাবাড়ী মুক্ত দিবস আজ।
৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে বীরমুক্তিযোদ্ধারা জীবনকে বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে নালিতাবাড়ীকে দখলমুক্ত করেন।
ইসলামপুর :
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মানিকুল ইসলাম জানান, হানাদার বাহিনী ইসলামপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ইসলামপুর থানা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতা মজির উদ্দিন আহমেদ, গণি সরদার, টুআইআসি আলাউদ্দিন জোদ্দার, প্লাটুন কমান্ডার সাহাদাৎ হোসেনসহ হাজারও মুক্তিকামী জনতা আনন্দ-উল্লাস করে ইসলামপুর থানা চত্বরে সমবেত হয় এবং বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।
কেন্দুয়া :
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ।
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে সকাল ১০টায় পুরাতন মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এ ছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, নতুন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনাসভা।