নির্বাচন পেছাতে পারে ১০ দিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট, ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের। রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর পৃথক চিঠিতে জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। আজ সোমবার এ নিয়ে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দাবি বিবেচনায় ভোটগ্রহণ পেছানের কথা ভাবা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পুনঃতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর কিংবা ৩ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হতে পারে।
এ বিষয়ে সিইসি বলেছেন, আমরা অবশ্যই চাই, সব দল নির্বাচনে আসুক। আমরা খবরটা (নির্বাচন পেছানোর আবেদন) পেয়েছি। আগামীকাল (সোমবার) কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচন এক মাস পেছানো সম্ভব কিনা, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, যেহেতু এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি, বলতে পারব না। সরকারি দলও নির্বাচন পেছানো যেতে পারে বলে জানিয়েছে, বিষয়টি সিইসির নজরে আনলে তিনি বলেন, এ খবর আমরা পাইনি। নির্বাচন পেছানো হবে কিনা, এটি আগামীকাল (সোমবার) জানা যাবে কিনা এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, হ্যাঁ।
রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচন পেছাবে কিনা, তা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। নির্বাচনের শিডিউল-সংক্রান্ত সব বিষয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। নির্বাচন পেছালে আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল আপত্তি করবে না।
গত ৮ নভেম্বর সিইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে। ভোটগ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর।
ইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে নির্বাচনের তারিখ পেছাতে ইসির কোনো সমস্যা নেই। ক্ষমতাসীন দলও বলেছে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আপত্তি জানাবে না। সে ক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর কথা ভাবছে কমিশন। নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হবে না। ভোটগ্রহণ এক সপ্তাহ, বড়জোর ১০ দিন পেছানো হতে পারে। সে বিবেচনায় মনোনয়ন জমা ও প্রত্যাহারের সময়ও বাড়ানো হতে পারে।
রোববার সিইসি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ওই চিঠিতে অনুরোধ জানিয়ে েতিনি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ১ সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বরের পরিবর্তে ৫ ডিসেম্বর ও ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর করার প্রস্তাব করেন।
একই দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল এক মাস পিছিয়ে দিতে সিইসি বরাবর চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐক্যফন্ট্র। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিএনপি, ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে কমিশনের তফসিল ঘোষণা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এত কম সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সম্ভব নয়, যা ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। অতএব সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী শিডিউল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য হলেও নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কিছু কাজ করে থাকি। সে বিষয়টি অবহিত করতে সচিবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমরা আমাদের কাজে কমিশনের সহযোগিতা চেয়েছি। সচিব বলেছেন, নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পেছানো হবে কিনা, তা জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, সব দল যদি চায় তখন কমিশন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আরকেএইচ