নিয়মবহির্ভুতভাবে পেনশনের টাকা কর্তনের অভিযোগ হিসাব ভবনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে

রাজশাহী বিভাগীয় হিসাব ভবন, রাজশাহী এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান কারারক্ষীসহ কয়েকজন কারারক্ষী তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার রাজশাহী প্রেস ক্লাবে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী মোঃ রবিউল ইসলাম (লেবু) (নং-৩১৫৯১) তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৫/০৫/১৯৯৬ ইং তারিখে বাংলাদেশ জেল বিভাগের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষী পদে আমি যোগদান করি। আমি কারাবিধি মোতাবেক নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সহিত পালন করেছি। গত ২৫/০৫/২০২১ ইং তারিখে আমার চাকুরীকাল ২৫ (পঁচিশ) বছর পূর্তি হওয়ায় এবং কোনরূপ পদোন্নতি না হওয়ায় গত ০১/০৮/২০২১ ইং তারিখে আমি স্বোচ্ছায় অবসর গ্রহন করি, যা আমার উদ্ধর্তন কর্মকর্তা বাংলাদেশ গণ কর্মচারী (অবসর গ্রহণ) আইন। ১৯৭৪ ইং এর ৪ ধারা এবং অর্থ মন্ত্রনালয় এর স্মারক নং- অম/অবি/প্রবি/-১ চাঃবিঃ ৩/২০১০ (অংশ-৩)/৬২ তারিখ: ০৬/০৪/২০১০ এবং স্মারক নং-০৭.০০.০০০০.১৭১.১৩.০০৬.১৫-১০৯ তারিখ ২৪/১২/২০১৫ মোতাবেক আমাকে চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহনের অনুমতি পত্র যারা আদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশ মোতাবেক ০১/০৮/২০২১ ইং তারিখ হতে পিআরএল (পোষ্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ) ভোগ করি। ছুটি ভোগ শেষে (ডিসিএ) ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস, রাজশাহী এর দপ্তরে আমার পেনশন সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়।
বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, রাজশাহী আমার সার্ভিস বই এবং অনলাইন ইনক্রিমেন্ট পেপার দেখে অডিটর মোঃ ওহেদুজ্জামান আমাকে বলেন আমি নাকি ২০১১ সালে একটি ইনক্রিমেন্ট বেশি ভোগ করিয়াছি। যা আমি আইনত পাবো না বলে জানান। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করলে তিনি আমাকে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি মূলক কার্যকলাপ এবং আনুতোষিক ও পেনশন পেতে বিলম্ব হবে বলে আমাকে ভীতি প্রদর্শন করেন এবং হাতে লেখা একটি অবান্তর ফিক্সিশন করে আমার থেকে গত ০৮/০৯/২০২২ তারিখে যাবতীয় স্বাক্ষর নিয়ে ঐ মাসের ২১/০৯/২০২২ তারিখে ২০,৪৭,৭৭৪/- (বিশ লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার সাতশত চুয়াত্তর) টাকার একটি চেক দেন। যা আমি অগ্রণী ব্যাংক লক্ষীপুর শাখা, রাজশাহীতে আমার হিসাব নম্বরে জমা করি।
উল্লেখ্য যে, আমার ০১ (এক) বছর অবসরোত্তর ছুটি ভোগকালীন সময়েরও নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করেন নাই। বরং আমার মূল বেতন ২১,৩১০/-(একুশ হাজার তিনশত দশ টাকা) নির্ধারন করে ২২,০৫,৫৮৫/- (বাইশ লক্ষ পাঁচ হাজার পাঁচশত পঁচাশি টাকা) এর মধ্যে অতিরিক্ত ১,৫৭,৮০০/- (এক লক্ষ সাতান্ন হাজার অটশত) টাকা কর্তন করেন এবং আমার মাসিক পেনশন ভাতা ১০,০৭০/-(দশ হাজার সত্তর) টাকার পরিবর্তে ৯,৫৮৯/- (নয় হাজার পাঁচশত উন নব্বই) টাকা নির্ধারন করেন যা এখনও আমি মাসিক বেতন হিসেবে গ্রহন করি।
এমতাবস্থায়, আমি এযাবৎ সর্বমোট ২,৮২,০৪১/-(দুই লক্ষ বিরাশি হাজার একচল্লিশ) টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হইয়াছি। যাহা এই রাজশাহী বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিস ব্যতীত বাংলাদেশে আর কোন জেলায় এই ধরনের পেনশন হইতে কর্তন করার কোন নজির নাই। যা আইনগত অপরাধ এবং ২০১৫ সালের গেজেট বহির্ভূত কাজ।
এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী তে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু অদ্যবধী তার কোন সুষ্ঠু সমাধান হয়নি।
আমি একজন গরীব এবং দুস্থ মানুষ, আমি পরিবার পরিজন নিয়ে ভীষনভাবে অভাব অনটনের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি এই অন্যায় এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার কামনা করিতেছি। বিধায় উক্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে আমার নায্য প্রাপ্য পাওনা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে একই ধরেনর আরো কয়েকজন ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, সৌহিদুল ইসলাম প্রধান ফারারক্ষী নং ৩১৩১৫, মোঃ মালোয়ার হোসেন ভমিনে কারারক্ষী নং ৩১৬৬৪, সোঃ জহুরুল ইসলাম ফারারসী নং- ৩১৫৮৬, সীঃ মোঃ জাহির আলী ফারারণা নং-৩১৫১৪ ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিভাগীয় হিসাব ভবনের নিরিক্ষা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে (০১৭১৫০১৯৮০৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।