ঢাকা সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫, ২৫শে চৈত্র ১৪৩১


নয়া বন্দোবস্ত ও মাস্টারমাইন্ড পারিষদ ক্যাচালবৃত্তান্ত


৬ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২৬

সংগৃহীত

৫ ই আগষ্টের অভ্যূত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত টার্ম হচ্ছে নয়া বন্দোবস্ত ও মাস্টারমাইন্ড ; এই দুটো শব্দের সাথে ছাত্র উপদেষ্টা মাস্টারমাইন্ড খ্যাত মাহফুজ আলমের নামটিই সর্বাগ্রে আসে কিন্তু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়া রাজনীতির নয়া বন্দোবস্তের মূলত আন্ডারগ্রাউন্ডেই এখনও ক্রিয়াশীল মাস্টারমাইন্ড পারিষদগণ। মাস্টার মাইন্ড পারিষদ গণের একটা অংশ অনলাইনে মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে খুবই পারদর্শী আর সরাসরি রাজপথে ক্রিয়াশীল একটা অংশ মব তৈরিতে পারদর্শী।

এখন আসি আবারও নয়া বন্দোবস্ত নিয়ে আলোচনায়, যেই গোষ্ঠী টি নয়া বন্দোবস্ত নামে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে প্রকাশ্যে প্রকৃত পক্ষে তারা নয়া বন্দোবস্তোর নামে "শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মডেল" অনুসরণ করতে চাচ্ছে। যেমন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐকমত্যের জন্য প্রথমে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট, তারপর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - বিএনপি, অনুরূপ ছাত্রদের দ্বারাও প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠণ করা হয়, পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি - এনসিপি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নামের মধ্যেও তারা অনেকটা সাদৃশ্যতা রেখেছে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন ১৯ দফা দিয়ে জনগণের কাছে পপুলার হয়েছিলেন, তারা ১৯ দফার কাউন্টারে সংস্কার বিষয় টা সামনে নিয়ে আসছে,বিএনপি প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে জনগণের কাছে বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠার একটা অন্যতম কারণ ছিলো স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ অর্থাৎ তৎকালীন ভারতের আধিপত্যবাদ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিরে গিয়ে অন্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে সখ্যতা সৃষ্টি করা, যা বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারও অনুসরণ করার চেষ্টা করতেছেন, এবং মাস্টারমাইন্ড পারিষদ ও তাদের অনুসারী সাগরেদরা ড. ইউনুস স্যারকে দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য মূলত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান কারণ তৎকালীন সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একই সাথে দুটি পদেই ছিলেন।

তাই তারা বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে সড়িয়ে তাদের মতো করে চাচ্ছে, তাহলে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে তখন খুব সহজ হবে। রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন, সংবিধান পরিবর্তন, সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা, সেনাপ্রধান পরিবর্তন এই সবগুলো ইস্যুতেই বিএনপির কাছে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে মাস্টার মাইন্ড পারিষদ তাই তাদের কাছে বিএনপিই এখন প্রধানতম প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে, আর সেই জন্যই মাস্টার মাইন্ড পারিষদ বর্গরা বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সকল নেতৃত্বকেই অনলাইনে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে। 

আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো বর্তমান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের যে নতুন নামটি প্রস্তাব করছেন " জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ " এই নামটি মূলত তারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাপত্রের ২৯ নং বিষয়বস্তু থেকে থেকে সংগ্রহ করেছেন।

বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৯ নং বিষয়বস্তুর একটি অংশে বাক্যটি যেভাবে উল্লেখ আছে - " সকল জাতির স্বাধীন সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি, সখ্য ও শান্তি গড়ে উঠুক এবং সুরক্ষিত হোক ইহাই জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ।"

বর্তমান সংস্কার কমিশন আরেকটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন "প্রজাতন্ত্র" এর পরিবর্তে " নাগরিকতন্ত্র"। ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ সালে আনন্দ বাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় একটি বিশেষ কলাম ছিলো " নাগরিকতন্ত্র " শিরোনামে সেখান থেকেই "নাগরিকতন্ত্র " শব্দ টা নেয়া হয়েছে বলে আমার ধারণা,সেইসাথে এসব নয়া বন্দোবস্তের প্রস্তবনায় মাস্টার মাইন্ড পারিষদ বর্গের ভূমিকা রয়েছে বলেও আমি ধারণা করি। 

পরিশেষে মাস্টারমাইন্ড পারিষদকে বলতে চাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর উপর চমৎকার গবেষণা করলেও আপনারা তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতার তুলনামূলক গবেষণায় ত্রুটি রেখেছেন সুতরাং আপনাদের পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার পূর্বে এই বিষয়টি ত্রুটিমুক্ত গবেষণার দাবি রাখে।

বিএনপির ঘোষণাপত্র এবং বর্তমান ৩১ দফার শতকরা ৭০ ভাগ অনুসরণ করেও যদি কোনো সরকার দেশ পরিচালনা করেন তাহলেই বাংলাদেশে জন আকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠত হবে।

যেমন বর্তমানে যে " সবার আগে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন " গঠিত হয়েছে তার মূল থিম পাওয়া যায় বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৭ নং বিষয়বস্তু " বাংলাদেশী সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ" এর ব্যাখ্যায়। 

বিএনপি নির্বাচন চায় কারণ বিএনপির ঘোষণাপত্রের ৭ নং বিষয়বস্তু হলো-" সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যম : স্থিতিশীল গণতন্ত্ৰ"।

বিএনপি বর্তমান সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলে কারণ বিএনপির ঘোষণাপত্রে ২৪ নং বিষয়বস্তুতে " সশস্ত্র বাহিনী : সার্বভৌমত্বের সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ" বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে কারণ বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৫ নং বিষয়বস্তুতে " জাতীয় প্রগতির ও সমৃদ্ধির অগ্রসেনা মুক্তিযোদ্ধা" বলে ঘোষণা দিয়েছে। 

 

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ 

#সবারআগেবাংলাদেশ 

 

(ফয়সাল আহমেদ)

প্রভাষক, হাবীবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজ।