ঢাকা মঙ্গলবার, ১লা এপ্রিল ২০২৫, ১৯শে চৈত্র ১৪৩১


রাজধানীতে পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে


২৯ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৪

সংগৃহীত

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। 

 

তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় প্রতিদিন জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে।

 

শনিবার (২৯ মার্চ ২০২৫ খ্রি.) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ডিবি কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা জানান।

 

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম জানান, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য সর্বত্র ডিবির জাল বিস্তৃত করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ডিবির গোয়েন্দা নজরদারি পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

 

‘এছাড়াও ডিবির সাইবার টিম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যে কোন অপপ্রচার রোধে ডিবি তৎপর রয়েছে। প্রোএকটিভ পুলিশিং এর অংশ হিসেবে ডিবির জাল সর্বত্র বিস্তৃত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে ডিবি সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’

 

ডিবি প্রধান বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ও ঈদে বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পবিত্র মাহে রমজানে নগরবাসী যাতে নিরাপদে ইবাদত বন্দেগী করতে পারে সেজন্য যেমন ডিবি সবসময় পাশে ছিল ও রয়েছে, তেমনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর পাশে থাকবে।

 

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় প্রতিদিন জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ইউনিফর্মড পুলিশের পাশাপাশি মহানগরীর নিরাপত্তায় ডিবির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিম মাঠে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও নগরবাসীর নিরাপত্তায় ডিবি ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ও যাবে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ডিবির কার্যক্রম আরো বেগবান করা হয়েছে। নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে যে কোন প্রয়োজনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর সাথে রয়েছে। নগরবাসীকে সাথে নিয়ে যে কোন অপতৎপরতা রুখে দিতে ডিবি প্রস্তুত।

 

 

 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আরও বলেন, রোজা শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ডিবির অলআউট অ্যাকশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া ডিবির মাদক বিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেশাদার মাদক কারবারি গ্রেফতার করা হয়েছে। ছোট বড় যে কোন অপরাধীর ক্ষেত্রে ডিবি জিরো টলারেন্স নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে ডিবি 'ইন্টারসেপ্টর বা প্রতিবন্ধক' হিসেবে কাজ করবে। ডিবির সকল সদস্যের মনোবল পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে দৃঢ় রয়েছে। নগরবাসীর 'ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে' পৌঁছতে ও অপরাধীদের জন্য 'মূর্তিমান আতঙ্ক' হিসেবে পরিগণিত হতে ডিবির আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডিবি তার কার্যক্রমের মাধ্যমেই থাকতে চায় নগরবাসীর ভরসার কেন্দ্রস্থলে, জনগণের দোয়ায় ও প্রার্থনায়। কোন ফাঁকা বুলি নয় বরং ‘দৃশ্যমান এ্যাকশনের’ মাধ্যমেই ডিবি ক্রমাগত নগরবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন, ঈদ শেষে মহানগরবাসী যাতে নিরাপদে ও স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারে এবং কোন ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে ডিবির 'বিশেষ অভিযান' পরিচালিত হবে। ছিনতাইকারী, চোর, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে ডিবির আটটি বিভাগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিম কর্তৃক মহানগরের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

রেজাউল করিম মল্লিক আরো বলেন, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহ রোধে ডিবি অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিবির অভিযানে বিপুল সংখ্যক জালনোট ও জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে জালনোট বিক্রয় ঠেকাতে ডিবির সাইবার টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। জালনোট তৈরি, বিক্রয় ও সরবরাহ রোধে পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ডিবি।

 

তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির ইউনিফর্মড পুলিশ ও ডিবির কার্যক্রমের পাশাপাশি নিরাপত্তা সচেতনতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোন অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারিক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি মালিক পক্ষকে স্ব স্ব মার্কেট/শপিংমলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং এলাকার থানা/ফাঁড়ির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।

 

নগরবাসীর উদ্দেশে মল্লিক বলেন, ঈদে মহল্লা, বাসা/মার্কেটে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি, থানা বা ডিবিকে অবহিত করবেন। তাছাড়া ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের নম্বর অথবা জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ যোগাযোগ করা যেতে পারে। বিপণিবিতানসহ যেকোন স্থানে নাশকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কিত যেকোন তথ্য থাকলে ডিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ব্রিফিংয়ে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া ও উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।