ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী


১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং সরকার ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে আলোচনায় প্রত্যাশিত ফল না আসায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশ্ন একটাই, আবারও ২০১৩-১৪ সালের ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছে কি দেশ? দেশ কি আবারও দেখতে যাচ্ছে সেই ঘটনার পুঃনবৃত্তি? তবে জনগণকে আশ্বস্ত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ আর কখনও ২০১৪ সালে ফেরত যাবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন তারা।

নির্বাচন নিয়ে কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তবে সেটি কঠোরহস্তে দমন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পয়েন্টে র‌্যাব ও পুলিশের তল্লাশি ও টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ইতোমধ্যে। বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়া পোশাকে ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিরাপত্তা দিতে মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) আমেনা বেগম বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল থেকে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।’ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে। কোনোভাবেই ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের কাছে আমরা আর পেট্রোল বোমার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না। ২০১৪ সালে বাবার সামনে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল ছেলে। এই দৃশ্য আর ফিরে আসতে দেয়া হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, যারা পেট্রোল বোমা মারে, তারাও এই দৃশ্য পছন্দ করে না। তাই এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জানান, সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হবে। সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৬ লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন করা হবে। এর মধ্যে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।

এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন ঠেকাতে হরতালের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। হরতালের সমর্থকগণ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর করতে পারেন। ককটেল-বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেন। কোনো এলাকায় পিকেটিং-ভাঙচুর, জানমালের ক্ষতিসাধন, মিছিল-সমাবেশ অথবা অনভিপ্রেত কোনো ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা ও নারীকর্মী এবং কোনো ব্যক্তিকে অযথা হয়রানি না করাসহ কঠোর ধৈর্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। হরতাল চলাকালে কোনোভাবেই মিছিল-সমাবেশ হতে দেয়া যাবে না।

নির্বাচন ঠেকাতে প্রস্তুতির খবরে নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই আসন্ন নির্বাচনের আগে ও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে জ্বালাও-পোড়াও আর ভাঙচুর ঠেকাতে ধারাবাহিক নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রেফতারও অব্যাহত থাকবে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রদর্শন নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জামায়াতের মাঠে নাশকতামূলক কাজে নামার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।

চট্টগ্রাম র‌্যাব জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠী অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে তাই আমরা টহল জোরদার করেছি। সড়ক-মহাসড়কে নাশকতা ঠেকানোকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনীসহ জেলা শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহা সড়ক ও বিভিন্ন পয়েন্টে টহল বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করা হবে।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতা ঠেকানোর জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) চট্টগ্রাম নগরকে ছয়টি আলাদা সেক্টরে ভাগ করেছে। এর মধ্যে চারটি সেক্টরে দায়িত্ব পালন করবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের চার জোন। বাকি দুই সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশকে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব টিম মাঠে থাকবে। প্রতিটি সেক্টরের মূল দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-কমিশনার। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকবেন তার সঙ্গে। এছাড়া প্রত্যেক জোনে একটি করে সাজোয়া যান, স্ট্যান্ডবাই একটি করে মোবাইল টিম, দুটি করে স্ট্রাইকিং টিম এবং রাতের ডিউটির জন্য চারটি করে নাইট রাউন্ড টিম গঠন করা হয়েছে।

এর মধ্যে নগরের কোতোয়ালি থানায় নাশকতা ঠেকাতে কাজ করছে সাতটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম, বাকলিয়া থানায় দুটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম, চকবাজার থানায় একটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম, সদরঘাট থানায় একটি পিকেট ও তিনটি মোবাইল টিম, চান্দগাঁও থানায় তিনটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম, পাঁচলাইশ থানায় চারটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম, খুলশী থানায় চারটি মোবাইল ও চারটি পিকেট টিম এবং বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি পিকেট ও চারটি মোবাইল টিম। এছাড়া বন্দরনগরীতে ২০টি স্পর্শকাতর পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

এদিকে নগরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও একই ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে জেলা পুলিশ। সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বাঁশখালীর মতো সম্ভাব্য নাশকতার পয়েন্টগুলোতে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জেলার ১৬টি থানা ও মহাসড়কে মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজার পুলিশ সদস্য। জেলা পুলিশের পাশাপাশি আরআরএফ, এপিবিএন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এসআই