বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা, দুশ্চিন্তায় পুলিশ

ছিনতাইকারীরা। পরে অভিযান চালিয়ে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ২১ জানুয়ারি গুলশান-২ নম্বরে রাত নয়টার দিকে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল কাদের ও তার শ্যালক আমির হামজা গুলশান-১ হয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে ১৫-২০ জন তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। পরে রড, ইট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নগদ প্রায় এক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমির হামজা ও কাদের আহত হন।
গত ২৬ জানুয়ারি রাতে মতিঝিল থেকে মগবাজার যেতে জাহাঙ্গীর আলম ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া করেন। রাত তিনটার দিকে পশ্চিম রামপুরার বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের সামনে এলে জাহাঙ্গীর আলমের পেটে ছুরি ধরে সাথে থাকা একটি মোবাইল, নগদ টাকা ও রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তখন রিকশাচালক চিৎকার করলে টহল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসে। পুলিশ দেখে ছিনতাইকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জীবন ও সোহাগ নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের শিকার হচ্ছেন খোদ পুলিশ সদস্যরাও। গত মঙ্গলবার দিনদুপুরে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য আদাবর এলাকায় থাকা বিট পুলিশের অফিসে যায় এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। পরে তারা সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের কোপানোর জন্য ধাওয়া দেয়। মোহাম্মদপুর থানার একজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এখন সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছি। যেকোনো সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা করে বসতে পারে। কারণ আমরা তাদের ধরছি, অভিযান করছি।’
তবে র্যাবের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ, র্যাব, সেনা ও যৌথবাহিনী মিলে দুই শতাধিক ছিনতাইকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীর সংখ্যাই বেশি। তবে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।
ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি থানায় টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া হচ্ছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীর উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে, পুলিশ এখন টহল বাড়িয়ে এই অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করছে। তারা দিনে ও রাতে মিলে টহল দিচ্ছে। আগে যেসব এলাকায় পুলিশ টহলই দিত না সেগুলোও এখন টহলের আওতায় আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর থানাগুলোতে প্রতি রাতে টহল বাড়ানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে সেগুলো চিহ্নিত করে এই টহল চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিটি থানায় টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে যাদের নাম পাওয়া হচ্ছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই প্রতিদিন পেশাদার ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।