সংসদের বিদায় ভাষণে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
-2018-10-29-22-42-23.jpg)
জনগণের ভোট পেয়ে আবারও সংসদে ফিরে আসার প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দশম সংসদের সমাপনী ভাষণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জীবনানন্দ দাসের কবিতার দুই লাইন তুলে ধরে নিজের এই প্রত্যাশার কথা বলেন তিনি।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদের অধিবেশন। জরুরি সংকটকালীন পরিস্থিতি বা যুদ্ধ বিগ্রহ না হলে এই সংসদ আর বসবে না। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সংসদ থেকে যাবে।
সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে নেয়া নানা প্রকল্প, উন্নয়ন চেষ্টা ও সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। আশা করেন জনগণ তার মূল্যায়ন করে আবার তাদেরকে ভোট দিয়ে সরকারে পাঠাবে।
ক্ষমতায় ফিরতে পারলে দারিদ্র্যমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। আধা ঘণ্টারও বেশি বক্তব্য রাখার পর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শেষে তিনি বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে/ ধানসিঁড়িটির তীরে/এই বাংলায়/ আবার আসিব ফিরে এই সংসদে।
সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, ইনশাআল্লাহ এটা সামনে থাকবে। যে উন্নয়নের ছোঁয়া, আজকে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে লেগেছে, নিশ্চয় বাংলাদেশের জনগণ আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।’
‘আমি বাংলাদেশের জনগণের কাছে আহ্বান করব, এই যে মেগা প্রজেক্টগুলো আমরা নিয়েছি, বড় বড় প্রজেক্ট নিয়েছি, এই যে বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে চাই, আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার যে পদক্ষেপগুলো আমরা নিয়েছি, সেগুলো সমাপ্ত করবার জন্য আরও কিছু সময় আমার প্রয়োজন। সে সময়টা আর সুযোগটা দিতে পারে বাংলাদেশের জনগণ।’
‘যদি তারা আগামী ইলেকশনে আমাদেরকে ভোট দেন এবং ভোট দিয়ে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দেয়, তাহলে নিশ্চয়... বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ।’
‘আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আবার আমাদের ভোট দেন, মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন, ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছ, অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে।... বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার তথ্য জানিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা যদি টিকে থাকতে পারি, তাহলে স্বীকৃতিটাও পেয়ে যাব। তার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে সরকারি ধারাবাহিকতা। সরকারি ধারাবাহিকতা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের যে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা নিয়েছি সেগুলোও আমাদেরকে সম্পন্ন করতে হবে।’
দেশে কর্মসংস্থানের বিরাট একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে জানিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল যখন গড়ে উঠবে তখন দেশে কর্মসংস্থানের কোনো অভাব হবে না।’
বর্তমান সরকারের আমলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এতে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তৈরি হচ্ছে।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান, দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। আগামীতে আসতে পারলে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
নিজের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি কঠোর পরিশ্রম করে সৎ পথে থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর সেই পরিশ্রমের ফসল আজকে বাংলাদেশের জনগণ ভোগ করছে। জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়েই রাজনীতি করি। কাজেই তার যে স্বপ্ন, যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করাই আমার একমাত্র কর্তব্য।’
মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে।’
দারিদ্র্যসীমা ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনা, বাজেট আমরা সাত গুণ বৃদ্ধি করা, এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বাজেট আমাদের তৈরি করতে হচ্ছে না।’
‘আমেরিকায় দারিদ্যের হার ১৮ ভাগ, আমরা তার চেয়েও কমিয়ে আনতে চাই বাংলাদেশে। যদি আমরা ১৬-১৭তেও কমিয়ে আনতে পারি, আমরা ঘোষণা দিতে পারি বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত। আমরা তা করতে পারব।’
এমএ