ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


পথে পথে র্দূভোগ


২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২৬

ছবি-সংগৃহিত

এমনিতেই গণপরিবহন সঙ্কট রাজধানীতে। তার ওপর চলছে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মরিবতি। সড়কে যানবাহন নেই, বিকল্প বাহনে অতিরিক্ত ভাড়া, দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটেও চলার উপায় নেই। সব মিলিয়ে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষষের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে।

রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ‘আমি এদের সড়ক সন্ত্রাসী বলব। তাদের দৌরাত্ম্য এত বেশি বেড়েছে যে যখন যা ইচ্ছে তাই করছে। সরকার যে আইন করেছে তা জনগণের পক্ষে নয়, এটা তাদেরই পক্ষে গেছে। উল্টো তারাই এখন জনগণকে জিম্মি করছে।’

বাংলামটর মোড়ে অফিসগামী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এভাবে আর কত দিন চলবে। আমরা সাধারণ মানুষ। অফিসে ঠিক সময় না যেতে পারলে বসের বকা খেতে হবে। ভিন্ন কোনো পরিবহনে যাওয়ার উপায় নেই। অনেক ভাড়া হাঁকাচ্ছে তারা।’

মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে অফিসগামী রবেয়া বলেন, বসুন্ধরায় অফিস কিন্তু যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, পুরুষরা তো তাও হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হয়েছে কিন্তু নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

তাদের মতো সারা দেশের অসংখ্য মানুষ এভাবেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর অফিসগামী যাত্রীরা গতকালের মতো আজও পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে। যানবাহনের অপেক্ষায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে শত শত অফিসগামী মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু গাড়ি তো অপ্রতুল। রাইড শেয়ারিং অ্যাপে বাইক কিংবা কারের আশায় ঢুঁ মারছেন অনেকে। সুযোগ বুঝে অ্যাপস ভিত্তিক মোটরসাইকেলগুলো অ্যাপস সেবা বন্ধ করে নিজেরাই চুক্তির ভিত্তিতে ভাড়া টানছেন। রিকশা আর সিএনজি ওয়ালার সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেটে, কেউ দ্বিগুণ ভাড়ায় রিকশা, অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলে চলাচলের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার ভ্যানে চড়েই গন্তব্যে ছুটছেন। অসহায় মানুষ চাকরি বাঁচাতে কিংবা গন্তব্যে পৌঁছতে এসব মেনে নিচ্ছে মুখ বুজে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের হাতে হেনস্থা হওয়ারও ভয়।

কর্মবিরতির প্রথম দিনে যাত্রীদের ব্যাপক হয়রানি করেছে শ্রমিকরা। মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দিয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির চালক, অফিসগামী যাত্রী থেকে শুরু করে মেয়েদের গায়েও এসব পোড়া মবিল দিয়ে হেনস্থা করেছে শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরিবহন ধর্মঘটে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার জেরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে সাতদিনের এক কন্যাশিশু। এমন অযৌক্তিক কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়ে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ।

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারনে রাজধানীর মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। ঢাকার ভেতরেও কোন যাত্রীবাহী বাস বা পণ্যবাহী পরিবহন আসতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকের জট বাড়ছে। ঢাকার ভেতরে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বাস ছাড়া অন্য কোম্পানির বাস চলাচল করছে না। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাপসভিত্তিক উবার, পাঠাওসহ বিভিন্ন রাইডশেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচল করেছে।

রোববার থেকে দেশব্যাপি সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি চলছে। তাই আজ সোমবারও গণপরিবহনহীন রাজপথে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অফিস কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ফলে দুদিনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষেরা।


আরকেএইচ