জামিনে বেরিয়ে ফের জঙ্গিবাদে জড়ান তারা

জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রায় দেড় বছর আগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সম্প্রতি নরসিংদীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত একজন ও আত্মসমর্পণকারী দুইজনসহ তিন নারী জঙ্গি। এই তিনজন হলেন- আত্মসমর্পণকারী খাদিজা পারভীন মেঘলা ও ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ এবং নিহত আকলিমা আক্তার মণি।
এই তিন নারী জঙ্গিকে একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তাদের সঙ্গে আরও এক নারী জঙ্গি গ্রেফতার হন। তিনি হলেন ড. ঐশি। পরে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করে একসঙ্গেই জামিনে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু কারামুক্ত হয়ে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফেরেননি। পুরনো পথেই চলতে শুরু করেন।
কিন্তু জামিনে কারামুক্ত হয়ে সঠিক পথে না ফিরে আবার তারা ধাবিত হন জঙ্গিবাদেই। পরিবর্তন করেন পুরনো বাসা। কিন্তু এবার তারা ‘সরাসরি’ সংগঠনের কাউকে খুঁজে না পেয়ে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন অনলাইন গ্রুপ। অনলাইনে তালিম নিয়ে আবারও ঘর ছাড়েন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব সন্দেহভাজন চার নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে নরসিংদীর জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন তিন নারী জঙ্গি আকলিমা, মেঘলা ও মৌ। তারা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী। নরসিংদীর অভিযান গার্ডিয়ান নটে আকলিমা আক্তার মণি ও তার স্বামী আবু আবদুল্লাহ আল বাঙ্গালী নিহত হন। আর মেঘলা ও মৌ নামে অপর দুই নারী জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় ফেরেন আকলিমা, মৌ ও মেঘলা। পুরনো বাসার ঠিকানা বদলে গুলশানে একটি বাসা ভাড়া নেন। তিন জনেরই জন্ম ১৯৯৩ সালে। একই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ও সমবয়সী হওয়ায় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জেলে থাকার কারণে পুরনো যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনলাইনে নতুন কানেকশন খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে নব্য জেএমবির একটি গ্রুপকে পেয়ে যান অনলাইনে। ওই গ্রুপের মাধ্যমে ফের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তারা।
সূত্র জানায়, আকলিমার জন্ম গাজীপুরে। সেখানেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা। পরে ভর্তি হন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। ২০১৫ সালের দিকে তিনি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে শুরু করেন। মসজিদের লাইব্রেরিতে পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার সঙ্গে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো আকলিমার। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে তার কাছে মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা কিছু বই আসে। সেসব বই পড়ে ধীরে ধীরে জঙ্গিবাদের দীক্ষা লাভ করেন আকলিমা।
একপর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সাইটে নিয়মিত যেতে থাকেন। আকলিমার মাধ্যমে মেঘলা ও মৌ জঙ্গিবাদে জড়ান। আর ধানমন্ডির একটি ‘ইসলামিক স্টাডি সেন্টারে’ গিয়ে পরিচয় হয় ডা. ঐশির সঙ্গে।
সূত্র জানায়, মিরপুরের ইসলামিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বিসিআইসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মৌ। আর আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি ও ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মেঘলা।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, এই চক্রে আর কারা কারা আছে তাদের খোঁজে দুই নারী জঙ্গি মেঘলা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কৌশলী দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই চক্রের পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টাও চলছে।
আরকেএইচ