প্লাস্টিক বর্জ্য হতে বেরিয়ে আসবে জ্বালানী তেল-গ্যাস

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ইলেক্টনিকস ও প্লাস্টিকের জিনিস আমরা ব্যাবহার করি। ব্যবহারের পর এই সব ইলেক্টনিকস ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ঠিকানা হয় ডাস্টবিনে।
এসব ফেলনা বর্জ্য দিয়ে ৩ ধরনের মূল্যবান জ্বালানি ও তেল উৎপাদন করতে প্ল্যান্ট বা মেশিন উদ্ভাবন করছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দুই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। তারা হলেন ড.মইনউদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী।
তারা বলছেন, এসব অব্যবহারিত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তিন ধরনের জ্বালানি তৈল ও গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। গবেষণার মাধ্যমে যে প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে, তাতে মেশিনের ভেতর প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যেই তা ডিজেল, এলপি গ্যাস ও জেট ফুয়েল হয়ে বেরিয়ে আসবে।
প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য দিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করার প্ল্যান্ট স্থাপন সম্পর্কে ড. মইনউদ্দিন সরকার জানায়, গবেষণার জন্য প্রথমে ২০০৫ সালে মার্কিন সরকার ব্রিজপোর্টে ৫৭ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কাজ শুরু করি আমরা। প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ পেয়েছিলাম দেড় কোটি ডলার। এই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও স্যানিটেশন কোম্পানির কাছ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে সরাসরি তেল উৎপাদনে নেমে পড়ি। অনেক ছোট পরিসরে এই কাজ শুরু করি। এ বছরই আমরা একটি মেশিন অবিষ্কার করতে সক্ষম হই। এই মেশিনটা দিয়ে তিন ধরনের জ্বালানি পণ্য উৎপাদন করা যায়।
মূলত এই মেশিনের মূল কাজ বর্জ্য থেকে ডিজেল তৈরি করা। এক লিটার ডিজেল তৈরিতে খরচ পড়বে ৪৩ টাকা। আর ডিজেল উৎপাদন করতে যে খরচ হবে, সেই একই খরচে একই সঙ্গে ওই মেশিন থেকে এলপিজি ও অ্যাভিয়েশন ফুয়েল এক্সট্রা (বাড়তি) উৎপাদিত হবে। অর্থাৎ এই মেশিনে এলপি গ্যাস উৎপাদনের জন্য আলাদা কোনো খরচ হবে না। আবার অ্যাভিয়েশন ফুয়েলের জন্যও আলাদা কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। মানে একের ভেতরেই দুই বা তিনটি জিনিস উৎপাদন হবে।
একটি মেশিনে ১০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ১৩ হাজার লিটার ডিজেল, ১০০ সিলিন্ডার এলপিজি ও ২৩০ লিটার অ্যাভিয়েশন ফুয়েল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এক টন থেকে ১৩০০ লিটার ডিজেল পাওয়া যাবে। কাজেই ১০ টন থেকে হবে ১৩ হাজার লিটার। এভাবেই সবগুলোর উৎপাদন বর্জ্য অনুযায়ী বেড়ে যাবে।
এ প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যেশ্যে সম্পর্কে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। আগামী ২০২৫ সালে বাংলদেশের মাছের পরিমাণের চেয়ে নদীতে বেশি প্লাস্টিক পাওয়া যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক শংঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এছাড়া আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে এমন অনেক পণ্য আছে যা একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। যেমন ওয়ান-টাইম চায়ের কাপ, বিস্কুট ব্যাগ। এগুলো আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। এগুলো যেন দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় সেজন্যই এই উদ্যোগ নেই।
এদিকে সমুদ্রের গভীর নিচে প্লাস্টিক বর্জ্যর সন্ধান মিলছে। আমাদের ফসলের জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। নদীর পানি দুষণ হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। এসব দুষণ থেকে মানুষের মুক্তি দিতেই এই প্ল্যান্ট স্থাপন। এই মেশিনের মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবেশ দুষণ হচ্ছে অন্যদিকে জ্বালানি তৈল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
ফেলনা বস্তু থেকে গ্যাস ও তেল উৎপাদনের আরেকটি দিক হচ্ছে, এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই মেশিনের মাধ্যমে তিন ধরনের জ্বালানি তৈল উৎপাদন হচ্ছে। এগুলোর উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাত করণে বহু লোকবল দরকার হবে।
জ্বালানী তেল ও গ্যাস আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করছি। এই মেশিন স্থাপন করা গেলে এসব পণ্যের আমদানি কমে আসবে।
এই প্ল্যান্ট স্থাপনে খরচ সম্পর্কে জানান মইনউদ্দিন সরকার জানান, এটা নির্ভর করে ‘র মেটেরিয়ালস’ (কাঁচামাল) ওপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি রোজ ১০ টন বর্জ্য দিয়ে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করতে চান, তবে তিন থেকে চার মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশি টাকায় তিন কোটি ২০ হাজার টাকা।
আমরা যেহেতু বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করছি। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের আলাদা টান রয়েছে। সেকারণে খুব কম মূল্য বাংলাদেশে এই মেশিন স্থাপনের জন্য কাজ করছি। আমরা চাই বাংলাদেশকে দুষণ মুক্ত করতে। বাংলাদেশের যেকোনো জেলা শহরে এই মেশিন স্থাপন করা যাবে।